শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন

দ্য ওয়াগনার গ্রুপ: পুতিনের ছায়াযুদ্ধের মহারথী

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৮৪ Time View

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের সাময়িক বিরতি ঘটলে পৃথিবী প্রবেশ করে নতুন একটি পর্যায়ে, যেখানে আমেরিকা একমাত্র সুপার পাওয়ার বা পরাশক্তি। একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিজের অর্থনীতি ঠিক করার দিকে মন দিতে হয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে হয়। এরপর সাবেক কেজিবি গোয়েন্দা ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর রাশিয়ার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটতে থাকে। 

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ানদের ভাবমূর্তির যে সংকট দেখা দিয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে রাশিয়ার উত্তরণ ঘটিয়েছেন পুতিন। আস্তে আস্তে আবার তারা বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে বড় খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়।

২০১০ সালের পর থেকে রাশিয়া যে আবার বৈশ্বিক পরিমন্ডলে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করে, এর পেছনে রাশিয়ান মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্যদের দল ‘দ্য ওয়াগনার গ্রুপ’-এর বিশাল ভূমিকা আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাশিয়া প্রক্সি ওয়ার বা ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুভাবাপন্ন বিপরীত পক্ষের সাথে লড়াই করেছে, যেখানে ওয়াগনারের মতো সশস্ত্র গ্রুপের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।

পুরো বিশ্ব দ্য ওয়াগনার গ্রুপকে রাশিয়ার পুতিন সরকারের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাপ্রাপ্ত সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে আসলেও রাশিয়া বরাবরই সেটা অস্বীকার করে এসেছে। বরাবর অস্বীকার করে এলেও পুতিন প্রশাসন যে ওয়াগনারের মতো মার্সেনারি গ্রুপগুলোর প্রতি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তা খুবই স্পষ্ট। ওয়াগনার গ্রুপ যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে, তা রাশিয়ার সরকারি সামরিক বাহিনীও ব্যবহার করে থাকে। এমনকি তারা একই ঘাঁটিতেও অবস্থান করেছে বিভিন্ন দেশে। রাশিয়ায় ওয়াগনার মার্সেনারি গ্রুপের যে ঘাঁটি রয়েছে, সেটিতে পা রাখতে গেলে আগে রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার (জিআরইউ) চেকপোস্ট পেরোতে হবে। 

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহার করে থাকে। ওয়াগনার গ্রুপের সাথে ক্রেমলিনের সুসম্পর্কও পুতিন সরকার ও ওয়াগনার গ্রুপের সম্পর্কের দাবির ভিত্তিকে জোরালো করেছে। ওয়াগনার গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উৎকিন রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। আরেকজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোঝিনের সাথে পুতিনের দহরম-মহরম দেখার মতো। রাশিয়ায় তাকে ‘পুতিনের রাঁধুনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই পুতিন সরকারের কাছে ওয়াগনার গ্রুপের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। ইউক্রেনের সাথে সংঘর্ষের সময় রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি ওয়াগনার গ্রুপও গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। 

ইউক্রেনের ঘটনার পর থেকে রাশিয়ান স্বার্থের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশের প্রাইভেট মিলিটারি গ্রুপগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা যুদ্ধের সময় কখনও একেবারে সামনের দিকে থাকে না বা আক্রমণে অংশ নেয় না। এদের মূল কাজ বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু রাশিয়ান মার্সেনারি দ্য ওয়াগনার গ্রুপ একেবারে সামনে থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি সামরিক সংঘাতে অংশগ্রহণ করেছে, প্রয়োজনে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। এজন্য ওয়াগনার গ্রুপের ক্ষয়ক্ষতির হারও অনেক বেশি।

প্রাইভেট সিকিউরিটি গ্রুপ তথা দ্য ওয়াগনারের মতো মার্সেনারি গ্রুপগুলোর মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে বিভিন্ন সংঘাতে জড়িয়েও রাশিয়া দায় এড়াতে পারছে সহজেই। কারণ রাশিয়ান সরকার আইনগত কোনো ভিত্তি তৈরি করেনি প্রাইভেট সিকিউরিটি গ্রুপগুলোর জন্য, এজন্য বাইরের দেশগুলো সরাসরি দায়ী করতে পারছে না। যেখানে নিজস্ব সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি জনসম্মুখে প্রকাশ করার মতো অস্বস্তিকর ব্যাপার থাকে, সেদিক থেকে মার্সেনারির মাধ্যমে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা অত্যন্ত নিরাপদ। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দ্য ওয়াগনার গ্রুপ যেভাবে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি বাড়বে বৈ কমবে না।

কিউএনবি/অনিমা/২১.০১.২০২৩/বিকাল ৩.৫২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit