বিনোদন ডেস্ক : এবারের ২১তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে হয়ে গেল শর্ট ফিল্ম ‘ণাঋ’র প্রিমিয়ার শো।
১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হলো এ ছবি। এ উপলক্ষ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় একটি চরিত্রের অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌসহ ছবির পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাতুর রাহমান, ছবির কলাকুশলী ও অন্যান্য অভিনেতারা। বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র উৎসবে অসংখ্য দেশীয় ও বিদেশি ছবির মধ্যে এ ছবিটির উপস্থিতি ছিল সত্যি আলাদা। এর কারণ ছবির বিষয়বস্তু নারী।
পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাতুর রহমানের গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ণাঋ’ এই উপমহাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং চাঞ্চল্যকর কিছু বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। এ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো, ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ২৩ বছর বয়সী ছাত্রী জ্যোতি সিংকে ধর্ষণ ও হত্যা।
ছবিটি নারীর স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও অধিকারের একটি প্রতিচ্ছবি, যা যুগ যুগ ধরে সমাজে আবর্তমান নারী চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সমাজের বিভিন্ন অবস্থানে থাকা এমন পাঁচটি ভিন্ন নারী চরিত্রের মন্তাজ হচ্ছে এই ছবির প্রতীকি ভাষা। ‘ণাঋ’ দর্শকের মাঝে এমন একটি অনুভূতির অনুসন্ধান করে,যা স্থান-কালের সীমা পেরিয়ে, আচ্ছন্ন নৈতিকতাকে ভেদ করে, সত্তার গভীরে স্পর্শ করতে পারে।
ছবির ব্যতিক্রমী নামকরণ সম্পর্কে পরিচালক বলেন,বাংলা বর্ণমালার নিগৃহীত দুই অক্ষর ‘ণ’ এবং ‘ঋ’-এর সমন্বয়ে এই নামকরণ করা হয়েছে। কারণ এই ছবির বিষয় হিসেবে যারা রয়েছে, তারা সমাজের এমনই নিগৃহীত ও বিস্মৃত মানুষ। অগণিত নারীর অধীনতা, অবহেলা, হতাশা ও দুর্দশা আমাদের চোখের সামনে থেকেও উপেক্ষিত হচ্ছে।
পরিচালক আরও বলেন, এ ছবির প্রতীকী ঘটনাগুলো দৈনিক পত্রিকায় বারবার আসতেই থাকে, এই অর্থে ছবিটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। দিল্লির সেই চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস অধ্যায় তার মনের ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার পর থেকেই এ ছবি তৈরির তৃষ্ণা তার মনে দানা বাঁধে। মূল ধারার বাইরের এই ছবিটি স্বাধীন প্রযোজনায় বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মূল সার্থকতা অর্জিত হবে যখন এটি অনেক দর্শকের সামনে তুলে ধরা যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে, পরিচালক মহাম্মাদ আরাফাতুর রহমান প্রথমেই এর জন্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই ছবির অসম্ভ সাহসী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের।
সাদিয়া ইসলাম মৌকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে পরিচালক বলেন, ভিন্নধর্মী এই শর্ট ফিল্মের কাজে উনি প্রচুর সময় দিয়েছেন এবং পুরো শুটিং টিমকে সার্বিক সহায়তা করেছেন।
ছবির প্রদর্শনী শেষে উৎসুক দর্শক ও সংবাদকর্মীদের সামনে উপস্থিত হয়ে কথা বলেন ও ছবি তোলেন মৌ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, নিয়মিত অভিনয় না করলেও ‘চ্যালেঞ্জিং অ্যান্ড বোল্ড ক্যারেক্টার’ তাকে সবসময় আকৃষ্ট করে এবং ণাঋ-র পরিচালক তাকে এমন একটি ক্যারেক্টার দিয়েছেন, যা তাকে চরিত্র ও গল্প নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে।
তার মতে, এই নারী চরিত্রগুলো আসলে দৃঢ়তার প্রতীক। নারীরা দুর্বল নয়, বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকা নারীরা তার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে, পুরুষদের সবার আগে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে নারীকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে দেখতে শিখতে হবে।
ব্যক্তিজীবনের সূত্র টেনে মৌ বলেন, উনি নিজের ছেলেকে শেখান, যে কোনো পরিস্থিতিতে যেন সে তার বোনকে উপযুক্ত সম্মান দেখায় এবং সমর্থন করে।
কিউএনবি/অনিমা/১৭ জানুয়ারী ২০২৩/দুপুর ২:৩৯