১. বিনত বিবির মসজিদ : ৮৬১ হিজরি মোতাবেক ১৪৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার নারিন্দায় স্থাপিত হয় বিনত বিবির মসজিদ, যা বখত বিনত মসজিদ নামেও পরিচিত। ঢাকায় প্রাপ্ত মুসলিম শিলালিপিগুলোর মধ্যে বিনত বিবির মসজিদটিই সর্বপ্রাচীন। ফলে ধারণা করা হয়, এটিই ঢাকার প্রথম মসজিদ। জনৈক মারহামাতের কন্যা মোসাম্মত বখত বিনত ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণ করেন। শিলালিপি অনুসারে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে বিনত বিবির মসজিদ নির্মিত হয়।
৩. বিবি চিনি মসজিদ : বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ঐতিহাসিক মোগল স্থাপত্য বিবি চিনি মসজিদ। ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহ জাহানের ছেলে ও সুবাদার শাহ সুজার অনুরোধে বঙ্গদেশে আগমন করেন বিশিষ্ট বুজুর্গ শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.)। শাহ সুজার অনুরোধে শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) বিবি চিনি মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে মসজিদটি বিবি চিনি নিজেও নির্মাণ করে থাকতে পারেন। বিবি চিনি ছিলেন শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.)-এর কন্যা, মতান্তরে বোন। ঐতিহাসিক মসজিদের পাশে শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.), বিবি চিনি ও বিবি ঈশার কবর আছে।
৪. বিবির মসজিদ : ঢাকার লালমাটিয়ায় অবস্থিত বিবির মসজিদকে কোনো কোনো ঐতিহাসিক দারা বেগমের সমাধি নামেও চিহ্নিত করেছেন। খ্রিস্টীয় ১৭ শতকের মধ্যভাগে শায়েস্তা খাঁর আমলে দারা বেগমের আর্থিক সহযোগিতায় বিবির মসজিদ নির্মিত হয়। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে কোনো কবর খুঁজে পাননি।
৬. বিবির মসজিদ, বগুড়া : বগুড়া জেলার শেরপুরে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট্য মসজিদটি সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মিত। জনশ্রুতি অনুসারে রাজা বলরামের মেয়ে গাজী শাহ মাদারের প্রেমে পড়েন; কিন্তু রাজা তাকে গাজী শাহ মাদারের সঙ্গে বিয়ে দিতে অস্বীকার করেন। ফলে তাঁর কন্যা কুমারি থেকে যান এবং বিবি নামে পরিচিতি লাভ করেন। ধারণা করা হয়, ধর্মান্তরিত রাজকন্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে মসজিদটিকে বিবির মসজিদ বলা হয়।
৭. সাইবানি বিবির দরগাহ : খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে মোগল রীতিতে নির্মিত বিবি শাইবানির দরগা। শাইবানি বিবি একজন ধর্মপ্রাণ সাধক নারী ছিলেন। তিনি যেন নির্বিগ্নে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন সে জন্য তাঁর স্বামী দেওয়ান আকন্দ দুই কক্ষবিশিষ্ট দরগাহটি নির্মাণ করেন। দরগাহর একটি কক্ষ গম্বুজবিশিষ্ট এবং মসজিদ সদৃশ, অন্যটি কুঁড়েঘরের মতো।
৮. বিবি মেহের মসজিদ : ঢাকার নারিন্দায় স্থাপিত বিবি মেহের মসজিদ ১২৩০ হিজরি মোতাবেক ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। বিবি মেহেরের অর্থায়নে এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মিত হয়। তিনি নারিন্দার বিখ্যাত ধনী ব্যক্তিত্ব গোলাম মুহাম্মদের আত্মীয়া ছিলেন।
৯. জাহানিয়ান মসজিদ : পশ্চিমবঙ্গের গৌড়ে অবস্থিত জাহানিয়ান মসজিদ নির্মিত হয় ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে। জানা যায়, রাজদরবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিবি মালতির অর্থায়নে মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিশিষ্ট বুজুর্গ জাহানিয়া জাহানাগাস্ত (রহ.)-এর নামে এর নামকরণ করা হয়।
১০. বিবি মারিয়াম মসজিদ : নারায়ণগঞ্জের কিল্লারপুরে অবস্থিত বিবি মারিয়াম মসজিদ নির্মিত হয়েছে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে। ঈসা খাঁর স্ত্রী বিবি মারিয়াম ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক মসজিদগুলো মধ্যযুগে মুসলিম সমাজে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার সাক্ষ্য বহন করে। এসব মসজিদ ছিল নারীর সামাজিক মর্যাদার প্রতীক।
তথ্যঋণ : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া ও প্রবন্ধ : উইমেন ইমপাওয়ারমেন্ট থ্রো মুসলিম আর্কিটেকচার