ডেস্ক নিউজ : মহান আল্লাহ মানুষের পাথেয় হিসেবে নবী-রাসুলদের কাছে আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। প্রধান চার আসমানি কিতাব হলো কোরআন, ইঞ্জিল, তাওরাত ও জাবুর। এ ছাড়া আল্লাহ কোনো কোনো নবী ও রাসুলকে সহিফা দান করেছেন। কোরআন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থ রহিত করা হয়েছে। কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহ দ্বিনি শিক্ষাকে পূর্ণতা দান করেছেন এবং পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থের মৌলিক শিক্ষাগুলো কোরআনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ফলে অন্য গ্রন্থগুলোর প্রয়োজনীয়তাও শেষ হয়েছে।
৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের কাছে কিতাব নিয়ে এসেছেন জিবরাইল (আ.)।
পবিত্র কোরআনে আসমানি গ্রন্থগুলোর অভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যা তার পূর্বের কিতাবের সমর্থক। আর তিনি অবতীর্ণ করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জিল ইতিপূর্বে তিনি মানবজাতির সৎপথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি ফোরকান অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি আছে। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, শাস্তিদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩-৪)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বিন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নুহকে, আর যা আমি ওহি করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ করেছিলাম ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে; এই বলে যে তোমরা দ্বিন প্রতিষ্ঠা কোরো এবং তাতে মতভেদ কোরো না।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ১৩)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি বোলো, হে কিতাবিরা, এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি, কোনো কিছুকেই তাঁর শরিক না করি এবং আমাদের মধ্যে কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসেবে গ্রহণ না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বোলো, তোমরা সাক্ষী থাকো, অবশ্যই আমরা মুসলিম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬৪)
আসমানি কিতাবগুলোর অমিল : কোরআন, ইঞ্জিল, তাওরাত ও জাবুর চারটিই আসমানি গ্রন্থ হলেও এগুলোর মাধ্যমে মৌলিক কিছু অমিল আছে। যেমন :
১. কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সংরক্ষিত। অন্যগুলো সংরক্ষিত নয়।
৪. কোরআনে সব আসমানি গ্রন্থের শিক্ষাগুলোর ধারক। অন্যগুলো ব্যতিক্রম।
৫. কোরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ। যা কোরআনের একক বৈশিষ্ট্য।
নিম্নোক্ত আয়াতে কোরআনের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই তার সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় কোরআন সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আসমানি গ্রন্থ। আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং সে আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)
অমিল থাকার কারণ : আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে অমিল থাকার মূল কারণ আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত হওয়া ও না হওয়া। যেহেতু কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষের জন্য সত্যের দিশা এবং চূড়ান্ত আসমানি কিতাব তাই আল্লাহ কোরআন সংরক্ষণ করেছেন। অন্যগুলোকে ধর্মগুরুদের নীতি-নৈতিকতার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু তারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। আসমানি কিতাবের বিকৃত সাধন করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্য শাস্তি তাদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৭৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যারা তা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছু পুরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্র করতেন না। বরং তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি আছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৪)
মুমিনের করণীয় : কোরআনের সঙ্গে পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থগুলোর অমিল থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর ওপর ঈমান রাখা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে মুমিনের বিশ্বাস কেমন হবে তা তুলে ধরেছেন আল্লামা হালিমি (রহ.)। তিনি বলেন, ‘কোরআনের প্রতি ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র আসমানি কিতাবের ওপর ঈমান আনার বিষয়টি মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে সব নবী-রাসুলের ওপর ঈমান আনার মতো। কেননা পবিত্র কোরআনেই আল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি পূর্ববর্তী জাতি-গোষ্ঠীতে যেমন নবী-রাসুল প্রেরণ করেছিলেন, তেমন সেসব নবী-রাসুলের ওপর কিতাবও অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং পূর্ববর্তী নবী-রাসুল ও আসমানি গ্রন্থের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া কোরআনের ওপর বিশ্বাস পরিপূর্ণ হবে না।’ (আল-মিনহাজ ফি শুআবিল ঈমান : ১/৩২১)
আল্লাহ সবাইকে সত্য অনুধাবনের তাওফিক দিন। আমিন
কিউএনবি/আয়শা/১৪ জানুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৫:০৫