শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়রোধে ৭ দিনের চ্যালেঞ্জ!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১০৬ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : সকালে ঘুম থেকে উঠে কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করছেন; চোখ থেকে তখনো ঘুম যায় নি। আপনি দাঁত মাজছেন, ওদিকে কলের পানি পড়ছে। এভাবে প্রতিদিন হয়তো এক লিটার, দুই লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু একবার কি ভেবে বা যোগ করে দেখেছেন মাস বা বছরে আপনি কত হাজার লিটার পানি অপচয় করে ফেলছেন? প্রতিদিন সকালে মাত্র দুই মিনিট দাঁত মাজতে গিয়েই আমরা সামান্য অবহেলা বা অসচেতনতার কারণেই এমটা করছি!

কথায় আছে- ‘অপচয়ে সমুদ্র শুকায়’! দিনকে দিন পানির স্তর নেমে যাওয়ার দরুন ক্ষরার মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়া আর সুপেয় পানির অভাবই প্রমাণ করে এই প্রবাদবাক্যটির সার্থকতা।

গ্যাস ও বিদ্যুতেরও অপচয় হয় আমাদের যথেচ্ছাচার আর অসচেতনতার জন্যে। মাত্র একটি ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা কিংবা ফ্যানের বাতাসে কাপড় শুকানোর মতো অবিবেচক কাজগুলোর কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের অপচয় হয় প্রতিনিয়ত। অসচেতনতা বা অবহেলার দরুন অপচয় তো আছেই!

ধরুন, গোসলের জন্যে চুলায় পানি গরম করতে বসিয়ে আপনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অন্য কোনো কাজে। ওদিকে হাঁড়ির পানি ফুটে শুকিয়ে যাবার উপক্রম। এ আর এমন কী- এই ভেবে আপনি আবারো হাঁড়িভর্তি পানি চুলায় চড়িয়ে দিলেন। এতে করে কি হলো? আপনার কিছু না হলেও গ্যাসের অপচয় হলো, রাষ্ট্রের ক্ষতি হলো।

কিন্তু আপনি হয়তো অনুভব করতে পারছেন না এই সামান্য অবহেলা বা অসচেতনতা আপনারই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডেকে আনছে অন্ধকার সময়। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়রোধ প্রয়োজন। কারণ প্রাকৃতিক সম্পদ যতই থাকুক, তা কিন্তু অসীম না! গ্যাস বা কয়লার মতো প্রাকৃতিক সম্পদ একদিনে তৈরি হয় না। অপচয়ের মাধ্যমে যে ক্ষয় হচ্ছে তা পূরণ হতে লাগবে বহু বছর। 

অবশ্য আমাদের অপচয়ের ফল কেবল পরবর্তী প্রজন্মই ভোগ করবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই! ইতোমধ্যে শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিচ্ছে খরার মৌসুমে। অগভীর নলকূপ হয়ে পড়ছে পানিশূন্য।

আপনি অপচয় করছেন, প্রকৃতি তার হিসেব রাখছে। জীবনের কোন এক প্রান্তে গিয়ে এই দায় চুকাতে হবেই। তাই আসুন প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করি। প্রতিদিন ভুলের কারণে যে অপচয় হয়, তা প্রতিদিনের একটু একটু সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমেই রোধ করা সম্ভব। এজন্য আপনি এক সপ্তাহের চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। সেই চ্যালেঞ্জে জয় পেলে সব অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে সহজেই।

এ সপ্তাহের চ্যালেঞ্জ-

১ম দিন
খেয়াল রাখুন অপ্রয়োজনে বৈদ্যুতিক বাতি বা পাখা চালু আছে কিনা। মাঝেমধ্যে এসি বন্ধ করে জানালা খুলে প্রাকৃতিক বাতাস আসার সুযোগ করে দিন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি, ফ্যান, রেফ্রিজারেটর ও অন্যান্য ইলেক্ট্রিক সামগ্রী ব্যবহার করুন। কাজ না থাকলে কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার বন্ধ রাখুন মনে করে।

২য় দিন
ট্যাপের পানি চালু রেখে অন্য কোনো কাজ করবেন না। বাথরুমে ঝর্নার বদলে বালতিতে পানি ভরে গোসল করুন। ওজু করুন মগ বা বদনায় পানি নিয়ে।

ট্যাপের ফাঁক গলে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে কি? কিংবা নষ্ট হ্যান্ড-শাওয়ার থেকে? এমনটি হলে সেগুলো ঠিক করার ব্যবস্থা করুন।

গ্লাসভরে পানি নিয়ে কিছুটা রেখে উঠি আমরা অনেকেই, যেটা শেষমেশ ফেলে দিতে হয়। তাই গ্লাসে ততটুকু পানিই নিন যতটুকু আপনি পান করবেন।

৩য় দিন
প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করুন; দিনের বেলা যতটা সম্ভব কাজ করুন প্রাকৃতিক আলোয়।

জানালার পর্দা সরিয়ে রাখুন, খুলে দিন বারান্দার দরজা। খবরের কাগজটা আজ নাহয় বারান্দায়ই পড়লেন!

৪র্থ দিন
কাগজ তৈরির অন্যতম উপকরণ কাঠ। Global Forest Resource Assessment-এর তথ্যমতে বিশ্বজুড়ে কাগজের চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার গাছ কাটা পড়ে। তাই গাছ বাঁচাতে ঠিক করুন আজ যথাসম্ভব পেপারলেস হবেন আপনি।

বাজারের ফর্দ কিংবা শর্ট রিমাইন্ডার লিখুন পত্রিকা বা ফেলনা কাগজে। ই-মেইলে যোগাযোগ করা গেলে কাগজের চিঠি বাদ দিন। প্রিন্ট করুন বুঝেশুনে, যতটা জরুরি ঠিক ততটাই। আর খসড়া লেখা বা পরীক্ষামূলক প্রিন্ট করুন ব্যবহৃত কাগজে, যার একটা পাশ ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

৫ম দিন
পানি পান শেষে হাতের বোতলটা ছুঁড়ে ফেলবেন না; এটাকে কাজে লাগান পুনরায় পানির প্রয়োজন মেটাতে। আরো ভালো হয় যদি সাথে সবসময় স্টিল বা কাঁচের একটা বোতল রাখেন।

আর কাগজের ওয়ান-টাইম কাপের বদলে কাচের কাপে চা-কফি পান কাগজ বাঁচাবে, হবে স্বাস্থ্যকরও।

৬ষ্ঠ দিন
নষ্ট বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায়। তাই ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ডিস্টার্ব করলে তা সারানোর উদ্যোগ নিন।

৭ম দিন
রি-ইউজ বা পুনরায় ব্যবহারের সুযোগ নিন। যেমন: দৈ-এর ভাঁড় কিংবা পানির বোতল হতে পারে ফুলের টব; কাপড়ের জালিব্যাগ উৎকৃষ্ট মাজুনি।

একটু চিন্তা করলেই হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন ‘ফেলনা’ জিনিস থেকে দৈনন্দিত প্রয়োজন পূরণের হাজারটা আইডিয়া!

এই ৭টি কাজ এক সপ্তাহে সম্পন্ন করুন। পরের সপ্তাহে আবার শুরু করুন প্রথম থেকে। শুরুতে একটু একঘেয়ে লাগতে পারে, কিন্তু টাস্ক শেষে যখন আত্মপর্যালোচনা করবেন কতটা রিসোর্স বাঁচালেন এবং সেজন্যে নিজেই নিজেকে অভিনন্দন জানাবেন তখন দেখবেন কেমন ভালোলাগা কাজ করছে।

কিউএনবি/অনিমা/১১ জানুয়ারী ২০২৩/দুপুর ১:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit