আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র কার্যকর গণতন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইসরাইলকে। এর জন্য গর্বও করে থাকে ইসরাইলিরা। কিন্তু বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরাইলের এ যাবৎকালের সবচেয়ে উগ্র ও কট্টর ডানপন্থি জোট সরকারের বিতর্কিত পরিকল্পনায় সেই ভাবমূর্তি হুমকির মুখে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনমতে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে নির্বাহী শাখার আধিপত্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিতর্কিত একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে নতুন সরকার। এর আওতায় সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায় বদলে দেয়ার ক্ষমতা পাবে সরকার। সেই সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগের নিয়ন্ত্রণও থাকবে সরকারের হাতে। বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন অবশ্য এমন পদক্ষেপকে ‘সংস্কার’ হিসেবে তুলে ধরে বিচার বিভাগকে ‘আরও শক্তিশালী ও জনগণের আস্থা ফেরানো’ হবে বলে দাবি করেছেন।
বিচারমন্ত্রীর মতে, ভোট না পেয়েও কিছু মানুষ যেভাবে এতকাল জনগণের হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন, সেই ব্যবস্থাকে মোটেই গণতন্ত্র বলা চলে না। বিচার বিভাগে ‘বামপন্থি ভাবধারার অতিরিক্ত সদস্য’ সক্রিয় রয়েছেন বলে বর্তমান সরকার বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংসদ ও সরকার আরও ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। অর্থাৎ, ক্ষমতাকেন্দ্রের পছন্দের প্রার্থীরা বাড়তি সুবিধা পাবেন।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আর ‘ক্নেসেট’ বা পার্লামেন্টে অনুমোদিত কোনো আইন অবৈধ ঘোষণা করতে পারবে না। ১২০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৬১ জনের সমর্থনের ভিত্তিতেই এমন অনেক রায় বদলে দেয়া যাবে। ইসরাইলে কোনো সংবিধান না থাকায় বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিতে কোনো আইন বৈষম্যমূলক মনে হলে সেটি বাতিল করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ তার ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী জোট সরকারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগের দায়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে বা আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই মন্ত্রিসভায় চরম কট্টরপন্থি ইহুদি রাজনীতিক আরইয়ে দেরির অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে মামলার শুনানি হচ্ছে। করের ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সেই মামলা করা হয়েছে।
বিরোধীরা বলছেন, বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে নেতানিয়াহুর সরকার। সর্বোচ্চ আদালতের ক্ষমতা খর্ব করে সরকারের সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠছে। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হলে সরকারের কার্যকলাপের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এবং গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়ে উঠবে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে। সমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রের কার্যকলাপের ওপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাবও বাড়তে পারে।
ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ সরকারের এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, ক্ষমতায় ফিরলে তিনি সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন। এক টুইটবার্তায় তিনি এমন পদক্ষেপের ফলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের পুরো আইনি প্রক্রিয়া বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ জানুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৭:৩৪