রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২৫ ভাগ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৫৭ Time View

ডেস্কনিউজঃ তীব্র সংকটের কারণে চলতি বছর ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে লাগামহীনভাবে বেড়েছে ডলারের দাম, কমেছে টাকার মান। বছরের প্রথম দিকে ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মে মাস থেকে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। অস্থিরতা কমলেও সংকট এখনো প্রকট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ দরের হিসাবে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। অন্যদিকে খোলা বাজারে ডলারের দামের হিসাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৭ শতাংশ।

গত ১০ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনার কারণে ডলারের চাহিদা কম থাকায় ও আয় বেশির কারণে ২০২০ সালে টাকার মান বেড়েছিল সামান্য। অন্যান্য সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে। টাকার মান কমেছে। সেগুলোর বেশিরভাগই ১ শতাংশের কম থেকে ২ শতাংশের মধ্যে। শুধু ২০১৭ সালে কমেছিল পৌনে ৫ শতাংশ। শুধু এবারই রেকর্ড হারে ২৫ শতাংশ কমেছে। অন্য হিসাবে কমেছে ৩৫ থেকে ৩৭ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুস্মরণের ঘোষণা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতির হার ঠেকাতে কয়েক দফায় তাদের নীতি সুদের হার বাড়ায়। এতে ডলারের দামও বেড়ে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।

তবে আগে থেকেই দেশের অর্থনীতিতে নানা সংকট দেখা দিয়েছিল। যুদ্ধের ধাক্কায় এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমায় ডলার সংকট প্রকট হয়। রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তারপরও ডলারের দাম বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে। অতীতে কোনো সময়ে এভাবে ডলারের দাম বাড়েনি।

নতুন বছরেও ডলার সংকট থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রিজার্ভ আরও কমতে পারে। তবে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। মার্চ থেকে ঋণের অর্থ ছাড় হতে পারে। জুনের দিকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ পাওয়া যেতে পারে। এরপর ডলার বাজারে চাপ কিছুটা কমতে পারে।

গত বছরের শেষ দিন বা চলতি বছরের শুরুর দিনে ব্যাংকের হিসাবে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। বছর শেষে বৃহস্পতিবার শেষ লেনদেনের দিনে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। ওই এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২১ টাকা ২০ পয়সা। এ হিসাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।

অন্যদিকে গত অক্টোবরে ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা হয়েছিল। সরকারি খাতে ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা করে রেমিট্যান্স কিনেছে। একই দরে তারা আমদানির জন্য আগাম ডলার বিক্রি করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ওই দরে ডলার কিনে দেনা পরিশোধ করেছে। এই হিসাবে গত এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা ২০ পয়সা। এ হিসাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

খোলা বাজারে বছরের শুরুর দিকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। তখন ডলারের চাহিদা কম থাকায় ব্যাংকের চেয়ে দাম কম ছিল খোলা বাজারে। এখন তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় উঠেছে। এ হিসাবে ডলারের দাম বেড়েছে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। ওই সময়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

চলতি বছরে ডলার ছাড়াও অন্যান্য প্রধান প্রতিযোগী মুদ্রার বিপরীতেও টাকার মান কমেছে। এর মধ্যে বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের দাম ছিল ১১৫ টাকা।

বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাড়ায় ১২৮ টাকায়। ওই সময়ে পাউন্ডের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোর দাম ৯৭ টাকা থেকে বেড়ে ১১৩ টাকা হয়েছে। এর বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। ভারতীয় রুপির দাম বছরের শুরুতে ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৩৩ পয়সা।

গত এক বছরে রুপির বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে সৌদি রিয়ালের দাম ২২ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা হয়েছে। এর বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সময়ে কানাডিয়ান ডলারের দাম ৬৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। ওই সময়ে এর বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।

চলতি বছরে ডলারের বিপরীতে প্রায় দেশের মুদ্রার মানই কমেছে। ডলারের বিপরীতে যেভাবে ইউরো, পাউন্ড, ভারতীয় রুপির দাম কমেছে, সে তুলনায় টাকার মান কম হারে কমেছে। তবে সৌদি রিয়ালসহ আরও কিছু দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমেনি। বরং বেড়েছে। ওইসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় মুদ্রার মান কমেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৯ সালে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৯ টাকা ১৭ পয়সা। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ টাকা ৬১ পয়সায়। ওই এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। এরপর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর প্রায় কাছাকাছি হারে টাকার মান কমেছিল।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ টাকা ৭৮ পয়সায়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ টাকা ৮০ পয়সায়। ওই এক বছরে ডলারের দাম বড়েছে মাত্র ২ পয়সা। এ হিসাবে টাকার মান কমেছে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ।

২০১৭ সালে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ টাকা ৫৫ পয়সা। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ডলারের দাম বাড়ে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ওই সময়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৯০ পয়সায়। আগের বছরের তুলনায় ডলারের দাম বাড়ে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। টাকার মান কমে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে ডলারের দাম বেড়ে হয় ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় দাম বৃদ্ধি পায় ১ টাকা। টাকার মান কমে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

২০২০ সালে ঘটে ব্যতিক্রমী ঘটনা। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডলারের দাম না বেড়ে বরং কমে যায় ১০ পয়সা। ২০২০ সালের শেষ দিনে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এ হিসাবে টাকার মান বেড়েছিল শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। ওই বছরে করোনার কারণে আমদানি ব্যয় ছিল কম। উলটো রেমিট্যান্স বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেশি থাকায় রিজার্ভ বেড়েছে। ফলে ডলারের দাম কমেছে। বাংলাদেশে সাধারণত প্রতি বছরই ডলারের দাম বাড়ে। কিন্তু ওই বছরে সামান্য কমেছিল।

২০২১ সালে ডলারের দাম আবার বেড়ে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা হয়। আগের বছরের তুলনায় ১ টাকা দাম বাড়ে। ওই সময়ে টাকার অবমূল্যায়নের হার ছিল ১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

কিউএনবি/ বিপুল/ ৩০.১২.২০২২/রাত ১১.০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit