এস এম মজনুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর (যশোর) : যশোরের মনিরামপুরে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটার ঘটনায় একজন শিক্ষিকাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ প্রমান করতে ব্যর্থ হওয়ায় মঙ্গলবার ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আর বরখাস্তের সত্যতা নিশ্চিত করেন কমিটির সভাপতি ও ভোজগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান তজু। অপরদিকে ওই শিক্ষিকাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার বিদ্যালয় এবং উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীদের দাবি অবিলম্বে তাদের নিরাপরাধ শিক্ষিকার বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে ক্লাশবর্জনসহ লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহন করা হবে।
জানাযায়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের সাথে বিভিন্ন বিষয়াদী নিয়ে বেশ কিছুদিন যাতব এক সহকারি শিক্ষিকার বিবাদ চলে আসছে। গত রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে যান অফিস কক্ষে। কিন্তু খাতা না পেয়ে পরীক্ষা শেষে দুপুর একটার দিকে তিনি প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যান হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু শিক্ষিকার অভিযোগ এ সময় প্রধান শিক্ষক তাকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে বাধা দেন। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে তার কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক তার শরীরে হাত তোলাসহ কাপড় ধরে টানাটানি করেন। প্রতিবাদে ওই শিক্ষিকা কক্ষের মধ্যেই প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিত শান্ত করেন। শিক্ষিকার অভিযোগ গত আড়াই বছর ধরে প্রধান শিক্ষক তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে আসছেন। ফলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি গত ১৪ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক তাকে নানা ভাবে হয়রানিসহ মানষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যেকারনে তিনি ইতিমধ্যে দুই বার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে যান তদন্ত করতে। তিনি জানান, তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। শেষ হলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান তজু জানান, সভায় ওই শিক্ষিকা তার আনিত অভিযোগ প্রমান করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে সভায় উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক জানান, শ্লীলতাহানীর ব্যাপারে তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইতিপূর্বে তাকে পর পর তিনবার কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও কোন জবাব দেননি তিনি। ফলে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ দিকে ওই শিক্ষিকাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার সকালে বিদ্যালয় চত্বর এবং দুপুর দুইটার দিকে উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বরখাস্তের বিষয়টি দেখবেন ম্যানেজিং কমিটি। তবে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যা সামাধানের জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিমিয়া খাতুন, মিম, আরাফাত হোসেন, অষ্টম শ্রেণির বৃষ্টি, সোহান হোসেন, নবম শ্রেণির আবু সাঈদ সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, অবিলম্বে তাদের নিরাপরাধ শিক্ষিকার বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে ক্লাশ বর্জনসহ লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোনকরা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নীহার রঞ্জন অন্যান্য সাংবাদিকদের জানান, ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে সময়মত হাজির না হওয়াসহ অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন। ফলে প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষিকা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাচ্ছেন।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:১৪