এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় প্রাথমিকে ১৬৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে ব্যাপক ভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলায় ১৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৬টি শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রধান শিক্ষক ও ১৪২ টি সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যার।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী শরিফুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১৩৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪ টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ১৪২ জন। সহকারী শিক্ষকের সংকট চলছে উপজেলার বিদ্যালয় গুলোতে।
বুধবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসরজনিত, মৃত্যু ও সরাসরি প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের পদে নিয়োগ না থাকায় পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে। আর ঐসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সহকারী শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। তাই অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পৌর সদরের কুঠিপাড়া মডেলসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ১৫টি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। দীর্ঘ দিন কয়েকটিপদ শূন্য ছিল। সম্প্রতি কয়েকজন নতুন এসেছেন। বর্তমানে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৫৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাকে প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে উপজেলা ও জেলা শহরে যেতে হয়। তখন শিক্ষকরা পড়েন ব্যাপক সমস্যায়।
উপজেলার সদর চৌগাছা ইউনিয়নের কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর আলম জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ানো যায় না। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ক্লাশ করাতে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে, সারাদেশে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ উপজেলায় লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৪৪৫ জন। যার মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৪৩৭ জন। যার ফলাফল ১৪ ডিসেম্বর বুধবার প্রকাশ করার কথা রয়েছে। উপজেলার শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন ফলাফল প্রত্যাশীরা।
শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা বলেন, আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে চৌগাছায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও প্রাক প্রাথমিক মিলিয়ে শূন্যপদ রয়েছে কয়েকশত, যা অনেক বিদ্যালয়েই দুই শিফটের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা করা। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে চলবে বলে আমরা বিদায়ি সচিব থেকে জানতে পারি। সেক্ষেত্রে পাঠদানের জন্য সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগের প্রয়োজন। প্রকৃত শূন্য পদ অনুযায়ী নিয়োগ হলে প্রাথমিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, জেলায় শূন্য পদের জন্য যে আন্দোলন হচ্ছে, তা সমাধানের বিষয় আমাদের হাতে নেই। শূন্য পদের তালিকা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যশোর জেলায় আগামী বছর সব বিদ্যালয়ে এক শিফটে ক্লাস পরিচালনা করার মতো শ্রেণীকক্ষ আমাদের নেই।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:৪২