ডেস্ক নিউজ : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের দেওপাড়া ইউনিয়নে নরকা খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের কৃষক। একসময় কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকা খালটি এখন যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কৃষক বাঁচাতে খালটি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার ও পুনর্খননের দাবি জানিয়ে স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরকা খালটির উৎপত্তিস্থল ঝিনাই নদী। গোয়াপচা, ধনদা, কাইয়াডুরি, জোয়ালভাঙ্গা, কাইলাইন, আনদো ও মেঘা বিল হয়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি গোলাবাড়ি এলাকায় গিয়ে বংশাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ৪০ ফুট প্রস্থের এই খালে একসময় বড় বড় নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো। বর্ষা মৌসুমে দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও দিগড় ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের বৃষ্টির পানি গোয়াপচা, ধনদা, কাইয়াডুরি, জোয়ালভাঙ্গা, কালিয়ান, আনদো ও মেঘা বিলে জমা হতো। জমা হওয়া পানি নিষ্কাশন হতো নরকার খাল দিয়ে। যার ফলে এলাকার কৃষকরা সময়মতো বীজতলা তৈরি ও সঠিক সময়ে বোরো ধানের আবাদ করতে পারতেন। কিন্তু খালটি ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বিলের প্রায় সব জমিই অনাবাদি থাকে। যার কারণে খালটি এখন কৃষকের কাছে দুর্ভোগ হয়ে উঠেছে।
প্রায় ৩০ বছর আগে একবার সরকারি উদ্যোগে খালটি খনন করা হয়েছিল। খালের পাশের জমির মালিকরা দখল করে নেওয়ায় বর্তমানে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে খালের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন জমির মালিকরা। আবার কোনো কোনো জায়গা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। খালটি বর্তমানে কোথাও তিন ফুট আবার কোথাও পাঁচ ফুট দৃশ্যমান রয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে উপজেলার দেওপাড়া এলাকার মেঘা, কালিয়ান ও গোয়াপচা বিলে গিয়ে দেখা যায়, জলাদ্ধতার কারণে অনেকেই আমনের আবাদ করতে পারেননি। এখনো বীজতলা তৈরির জমিতে হাঁটু পানি জমে আছে। ফলে ধানের চারাসংকটে বাধাগ্রস্ত হবে বোরো আবাদ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এটা প্রতিবছরের চিত্র। গত ছয় মাস আগে খালটি পুনর্খননের দাবি জানিয়ে ওই এলাকার ৩০০ কৃষক স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
কালিয়ান গ্রামের কৃষক সোবহান নারাঙ্গাইল গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, ‘জমিতে পানি জুইমা আছে। আমরা জালা (ধানবীজ) ফালাইবার পারতাছি না। জালা ফালাইতে না পারলে এবার মেলা জমিতে আবাদ বন্ধ হইয়া যাইবো। ‘
বাড়ইপাড়া গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ জানান, এখন তা-ও খালের চিহ্ন দেখা যায়। কয়দিন পর তা-ও দেখা যাইবো না।
বাগুন্তা গ্রামের স্কুলশিক্ষক আবু হানিফ খান বলেন, বীজতলা তৈরি করতে না পারলে বোরো মৌসুমে অনাবাদি থাকবে হাজার হাজার একর জমি। বিলের জমি উর্বর। প্রতি শতাংশে ধান হয় এক মণ করে। খালের কারণে দিনদিন বেড়েই চলছে অনাবাদি জমির পরিমাণ।
এলাকার কৃষকরা জানান, সময়মতো জমি প্রস্তুত করতে না পারায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জোয়ালভাঙা বিলের প্রায় ২০০ বিঘা, গোয়াপচা বিলে এক হাজার ২০০ বিঘা, মেঘা বিলের ৫০০ বিঘা, কাইয়াডুরি বিলের ২৫০ বিঘা এবং আনদো বিলের ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক শ একর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হন।
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু বলেন, তিন ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি নরকা খাল খনন করা। কৃষকের দুঃখের বিষয় ভেবে খাল খননের বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় দু’বার উত্থাপন করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, কৃষক বীজতলা তৈরি করতে না পারা, ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং জমি অনাবাদি থাকার বিষয়টি আমি অবগত। খালটি খননের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় কৃষকের অভিযোগের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। খাল খননের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:২১