বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ: এক ম্যাচে ৬ রেকর্ড ঢাকার ১১ স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১৩১ ৯ বলের সুপার ওভার, পাঁচ বলে ৫ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ চিকিৎসক হয়েও সুরের ভুবনে ঝংকার তুলছেন রানা প্রশাসনে রদবদল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি তাঁবেদার থেকে দেশ রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে: রেজাউল করিম দৌলতপুরে ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা : আটক-২ অবিশ্বাস্য থ্রোতে ভাঙল ৪৪ রানের জুটি, বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন মিরাজ ফুলের মতো পবিত্র মানুষগুলোই আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে”–কুড়িগ্রামে পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ কিম বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা, প্রতিরক্ষা জোরদারের ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার

দুই বছর পর ইউএনও ওয়াহিদা খানম হত্যা চেষ্টা মামলার রায়, আসামী রবিউলের ১০ বছর কারাদন্ড

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৮১ Time View

মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম হত্যা চেষ্টা মামলায় আসামী রবিউল ইসলামকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই রায় ঘোষনা করেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক সাদিয়া সুলতানা। এছাড়াও আসামী রবিউলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।রায় ঘোষণার সময় আসামী রবিউল কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। দন্ডিত রবিউল দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভীমপুর গ্রামের খতিব উদ্দিনের ছেলে।

গত ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হামলার স্বীকার হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ। হামলাকারী ইউএনও’র সরকারী বাসভবনের দ্বিতীয় তলার টয়লেটের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে মাথায় গুরুত্বর জখম ও রক্তাত্ব অবস্থায় ইউএনও ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় ইউএনও’কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে।

সেখানে টানা দুই ঘন্টা অস্ত্রপচার শেষে চিকিৎসকরা জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় ৯টি গুরুতর জখম রয়েছে। এছাড়াও হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করায় তার মাথার খুলির একপাশ ভেঙ্গে গেছে।

ইউএনও ওয়াহিদার বর্তমান অবস্থা :
২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর ইউএনও হিসেবে ঘোড়াঘাটে যোগদান করেছিলেন তিনি। হামলায় গুরুতর আহত ওয়াহিদা খানম সুস্থ হবার পর গত ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। এরপর সেখান থেকে তাকে বদলী করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। বর্তমানে ওয়াহিদা খানম পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের স্কাইসোয়াম উইং এর সিনিয়র সহকারী প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

পুলিশ ও র‌্যাবের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য :
ঘটনার পরপরেই পুলিশ ও র‌্যাব সহ অন্যান্য সংস্থা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ভাই পুলিশ পরিদর্শক শেখ ফরিদ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করে। ঘটনার দিন দুপুরে ইউএনও’র সরকারী বাস ভবনের নৈশ্য প্রহরী নাহিদ হাসান পলাশ (৩৮) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ। এর একদিন পর ৪ সেপ্টেম্বর দিনের বেলা সান্টু চন্দ্র দাস (২৮) ও নবিরুল ইসলাম (৩৫) নামে আরো দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। একইদিন সন্ধায় ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৩৭) কে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের লোকজন। পরে জানা যায় র‌্যাব তাকে আটক করেছে। এছাড়াও ওইদিন দিবাগত রাতে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ একটি দল পাশ্ববর্তী হাকিমপুর উপজেলা থেকে ঘোড়াঘাট পৌর যুবলীগের সদস্য আসাদুল ইসলাম (৩৬) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

৪ সেপ্টেম্বর সন্ধায় রংপুর র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়নে সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহম্মেদ ফেরদৌস জানান, “আটক যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম সহ সান্টু ও নবিরুল ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। চুরির উদ্দেশ্য তারা ইউএনও’র বাড়িতে প্রবেশ করেছিল। তবে ইউএনও ওয়াহিদা খানম টের পেয়ে বাঁধা দেওয়ায় তার উপরে হামলা করা হয়েছে।”

এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ সেপ্টেম্বর ইউএনও’র বাড়ির সাবেক মালি রবিউল ইসলাম এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান পুলিশ। সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, “ওই হামলায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন কর্মচারী রবিউল। ১০ সেপ্টেম্বর আমরা রবিউলকে গ্রেপ্তার করেছি। তার দেওয়া তথ্যের উপর পাশ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে হামলায় ব্যবহারিত একটি হাতুরি উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজের সঙ্গে তাকে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।”

মামলার অগ্রগতি :

প্রথম অবস্থায় মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান ঘোড়াঘাট থানার বর্তমান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম। কিছুদিন পর মামলাটি দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়। তখন মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে ডিবির তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক ইমাম আবু জাফর। পরে তিনিই আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ইমাম জাফর ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে আসামী রবিউল ইসলামকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। এসময় আদালত দুই দফায় আসামী রবিউলের ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আদালতে মূল আসামী ও স্বাক্ষীদের জবাবনবন্দী :
এই মামলায় দিনাজপুরের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন মামলার মূল আসামী, ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাড়ির চাকুরিচুত্য মালি রবিউল। এছাড়াও এই মামলায় আদালত ঘোড়াঘাট থানার তৎকালীন ওসি আমিরুল ইসলাম, প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম, সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি ইমাম আবু জাফর এবং ঘটনার পরে ঘোড়াঘাট থানায় পদায়ন হওয়া ওসি আজিম উদ্দিনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলাটিতে আদালত মোট ৫১ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।

জবানবন্দীতে আসামী রবিউল বলেন, “আমি দিনাজপুরের ডিসি স্যারের বাড়িতে মালি হিসেবে কর্মরত ছিলাম। স্যারের স্ত্রীর সাথে একটি বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হওয়ায় ডিসি স্যার আমাকে ঘোড়াঘাটে বদলী করে। এরপর ঘোড়াঘাটের ইউএনও স্যারের বাড়িতে আমি মালি হিসেবে কাজ শুরু করি। আমি মালি হিসেবে কাজ করলেও, তার গাড়িতে চড়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতাম।
একদিন গাড়িতে থাকা ইউএনও স্যারের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে আমি ১৬ হাজার টাকা চুরি করি এবং ছুটিতে বাড়িতে যাই। তার ব্যাগ থেকে টাকা হারানোর বিষয়টি স্যার বুঝতে পারেন। স্যার দাবি করেন তার ব্যাগ থেকে ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এই টাকা ফেরত না দিলে তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করা, ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেওয়া অথবা চাকুরি থেকে সাময়িক বহিস্কার করার হুমকি প্রদান করেন। পরে আমার বড় ভাই সহ পবিবারের লোকজন ইউএনও স্যারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দেন। প্রাপ্তি স্বীকারের রশিদ মূলে স্যার সেই টাকা গ্রহন করেছেন।

এরপরেও ইউএনও স্যার দিনাজপুরের ডিসি স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিছুদিন পরে আমাকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়। ১৬ হাজার চুরি করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছি। তারপরেও আমার চাকুরি চলে যাওয়ায় আমি ইউএনও স্যারের উপর হামলার পরিকল্পনা করি।পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি ২ সেপ্টেম্বর দিনে ঘোড়াঘাটে যাই। রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতর দিয়ে গিয়ে আমি ইউএনও স্যারের বাড়ির প্রাচীর টপকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। সেখানে কবুতরের ঘরে থাকা মই দিয়ে বাড়িটির দ্বিতীয় তলার টয়টেলের ভেন্টিলেটর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। টয়লেটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় আমি দরজা খোলার চেষ্টা করলে ইউএনও স্যার শব্দ শুনে কে কে বলে চিৎকার করে। এরপর দরজা ভেঙ্গে আমি ভিতরে প্রবেশ করি এবং হাতুরি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। পরে সে বিছানার উপর লুটিয়ে পড়ে এবং বাবা বাবা বলে চিৎকার করে। চিৎকার শুনে তারা বাবা অন্য ঘর থেকে স্যারের ঘরে আসে। আমি তাকেও আঘাত করি। এরপর চাবি দিয়ে আমি আলমিরা ভেঙ্গে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাই।”

কিউএনবি/অনিমা/০৮.১১.২০২২/বিকাল ৫.৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit