বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন

দাম্পত্য জীবনে সন্দেহ হলে করণীয়

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২২
  • ১০৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : দাম্পত্য জীবনে অশান্তির অন্যতম কারণ পরস্পরের প্রতি সন্দেহ পোষণ করা। নিছক সন্দেহের কারণেও বহু মানুষের সংসার ভেঙে যায়, পারস্পরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়ে ভিত্তিহীন সন্দেহ, অন্যের কথায় প্রভাবিত হওয়া, সন্দেহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করে। বিপরীতে ইসলাম জীবনসঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করার এবং প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত সুধারণা পোষণ করার নির্দেশ দেয়।

১. সন্দেহকে প্রশ্রয় নয় : সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে কখনো কখনো স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি সন্দিহান হতে পারে। তবে ভিত্তিহীন কোনো সন্দেহকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কেননা কখনো কখনো এমন সন্দেহ মানুষকে অন্যায় পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

২. অন্যের কথায় প্রভাবিত না হওয়া : দাম্পত্য জীবনে সন্দেহ সৃষ্টির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অন্যের কথায় প্রভাবিত হওয়া এবং জীবনসঙ্গীর ব্যাপারে অন্যের কথা বিশ্বাস করা। ইসলাম অন্যের কথা দ্বারা প্রভাবিত হতে নিষেধ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বসো এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৬)

৩. খোলামেলা কথা বলা : যদি কখনো স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের আচরণে কোনো কিছুকে সন্দেহজন মনে হয়, তবে তারা নিজেদের মধ্যে তা আলোচনা করে নেবে। যদি নিজের সঙ্গীকে বলার মতো পরিবেশ না থাকে, তবে মা-বাবার মতো হিতাকাঙ্ক্ষী ও গুরুজনের সঙ্গেও কথা বলতে পারে। উত্তম হলো যার ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে তার সঙ্গেই আলোচনা করে নেওয়া। ধোঁয়াশা রেখে সন্দেহের পেছনে ছুটবে না। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ কোরো না। কান, চোখ, অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৬)

৪. আল্লাহর কাছে সুপথ চাওয়া : সন্দেহ মানসিক কষ্টের কারণ এবং তা মানুষকে সুপথ থেকে বিচ্যুত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে সুপথ নসিব করুন এবং আমাকে মনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৮১)

৫. উসকানিদাতাদের এড়িয়ে চলা : সমাজ ও পরিবারের বহু মানুষ হিতাকাঙ্ক্ষীরূপে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকে দেয়, পরস্পরের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। এমন মানুষদের এড়িয়ে চলাই উত্তম। কেননা তারা মানুষরূপী শয়তান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়েছে  যে নামাজ আদায়কারীরা তার ইবাদত করবে না। কিন্তু সে তাদের মধ্যে একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে নিরাশ হয়নি। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩৭)

সন্দেহের পরিস্থিতি এড়াতে করণীয়

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম মুমিনদের এমনভাবে জীবন যাপন করতে বলে যেন দাম্পত্য জীবনে কোনো ধরনের সংশয় তৈরি না হয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা হলো :

১. দৃষ্টি সংযত রাখা : স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সংযত জীবন যাপন করবে। যেন জীবনসঙ্গী তাদের প্রতি সন্দেহের অবকাশ না পায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। …মুমিন নারীদের বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

২. আল্লাহভীতির জীবন যাপন করা : যখন কোনো বান্দা তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির জীবন যাপন করে, তখন আল্লাহ তার জীবনকে সংকটমুক্ত রাখেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে জীবিকা দান করবেন। ’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)

৩. দূরে না থাকা : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংশয় তৈরির অন্যতম কারণ পরস্পর থেকে দূরে থাকা। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর দূরে থাকাকে অপছন্দ করে। এমনকি পরস্পরকে অপছন্দ করলেও কাছে থাকার নির্দেশ দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ স্ত্রী থেকে আলাদা হয় না। কেননা সে স্ত্রীর একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হলেও অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে যায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৮)

আল্লাহ সবাইকে সুখময় দাম্পত্য জীবন দান করুন। আমিন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৬ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit