ডেস্ক নিউজ : প্রায় হাজার বছর আগে মুসলিমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর যেসব বই লিখে গেছেন, তার প্রায় প্রতিটিতেই চোখের চিকিৎসার কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। যেহেতু সরাসরি মানব চোখের বদলে পশুর চোখের ওপর তাঁদের গবেষণা চালাতে হয়েছে, তাই তাঁদের গবেষণায়ও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। সে যুগে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদকে অবমাননাকর হিসেবে দেখা হতো। তবু এই বাধাগুলো মানব চোখের ব্যবচ্ছেদের আদিতম চিত্রগুলো তৈরি করা থেকে গবেষকদের থামাতে পারেনি।
ইবনে ঈসাই কিন্তু একমাত্র মুসলিম চক্ষু সার্জন নন, যিনি চোখের বিভিন্ন রোগকে অন্যান্য অসুখের মতো বলে বিবেচনা করেছেন। আবু রুহ মুহাম্মদ ইবনে নেসুর ইবনে আব্দুল্লাহ, যিনি মূলত পরিচিত আল-জুরজানি নামে। পারস্যের অধিবাসী জুরজানি ১০৮৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য লাইট অব দ্য আই’ নামের একটি বই লেখেন। এই বইয়ের একটি সম্পূর্ণ অধ্যায়ে তিনি এমন সব রোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যার উপসর্গ চোখ এবং তা দৃষ্টির মাধ্যমে জানা যায়। যেমন—তৃতীয় স্নায়ুর বৈকল্য, রক্তের বিভিন্ন রোগ, বিষক্রিয়া—এগুলো কিন্তু চোখের দৃষ্টি দেখেই বোঝা সম্ভব। দক্ষিণ স্পেনের কর্ডোভায় একটি আবক্ষ মূর্তি অমর করে রেখেছে মুহাম্মাদ ইবনে কাসাম ইবনে আসলাম আল-ঘাফিকিকে। ঘাফিকি একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি কর্ডোভা শহরে বাস করতেন এবং এ শহরেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম ‘দ্য রাইট গাইড ইন অফথ্যালমিক ড্রাগ’। এই বইয়ে শুধু চোখের বিভিন্ন রোগের বিষয়েই আলোচনা করা হয়নি, বরং মাথা এবং মস্তিষ্কের নানা রোগের ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে।
বিবিসির অ্যান ইসলামিক হিস্টোরি অব ইউরোপ অনুষ্ঠানে রাগেহ ওমর বলেন, ‘ঘাফিকি যেভাবে চোখের ট্র্যাকোমা রোগের চিকিৎসা করতেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। ১৯৬৫ সালে তাঁর ৮০০ বছর পূর্তিতে কর্ডোভার মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে ঘাফিকির আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। ’ যুক্তরাজ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক লোকদের অন্ধত্বের একটি বড় কারণ হলো চোখের ছানি। রয়াল কলেজ অফথ্যালমোলজিস্টসের মতে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছানির সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব এবং এর ফলে রোগীদের কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোটায়। যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে বহুল সংঘটিত অস্ত্রোপচারও হলো এই ছানির অপসারণ। কে জানত! দশম শতাব্দীর একজন আল-মাওসিলি একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় একটি অস্ত্রোপচারের ভিত গড়ে যাবেন!
তথ্যঋণ : মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার
কিউএনবি/আয়শা/২৭ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:০৪