শান্তা ইসলাম নেত্রকোনা প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের আশায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ১৪৭ কিলোমিটার পথ পদযাত্রা শুরু করেন। দিয়েছেন। তার আশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দৈন্যদশার কথা তুলে ধরে এমপিওভুক্ত করণের পথ সুগম করা। রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নেত্রকোনা পৌর সভার আন্তঃজেলা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে এই পদযাত্রা শুরু করেন। হাবিবুর রহমান নেত্রকোনা সদর উপজেলার সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমানের যাত্রার আগে পারলা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার পদযাত্রায় সংহতি জানান। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক তার পদযাত্রায় অংশ নেন। হাবিবুর রহমান জানান, নেত্রকোনা সদরনহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন তিনি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে বুদ্ধি, বাক, দৃষ্টি, অটিজম ও শারিরীক মিলিয়ে মোট ১৬৪জন শিক্ষার্থী এবং ১৪জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন।
২০ শতক জমিতে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ে ১০জন শিক্ষার্থী আবাসিক হিসেবে থেকে লেখাপড়া করছে। বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীর সহায়তায় চলছে বিদ্যালয়টি। এ অবস্থায় শিক্ষক কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ হতাশায় থাকায় তা কাটিয়ে উঠতে বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলার এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য তিনি পায়ে হেটে যাত্রা শুরু করেন। জেলার অন্য প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও চান, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎলাভের মাধ্যমে হাবিবুর রহমানের বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তকরণ হোক। সাথে জেলার অন্য বিদ্যালয়গুলোও ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হোক।
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নেত্রকোনা জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুর রব খান ঠাকুর বলেন, জেলায় মোট ২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের মধ্যে কামরুন্নেছা আশারাফ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি একমাত্র এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমরা চাই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এমপিওভূক্ত করা হোক। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমান অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয়টি চালাচ্ছেন। সরকারি নীতিমালার সবকিছুই এই বিদ্যালয়ের রয়েছে। আমরা হাবিবুর রহমানের এই পদযাত্রার শুভ কামনা করি। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎলাভের মাধ্যমে তার মনের আশা পুরণ হবে।
নেত্রকোনা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া বলেন, আমরা চাই যে উদ্যোগটা হাবিবুর রহমান নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্যে তা যেন সফল হয়। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হািিসনা যেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে যেন তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়। নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কাছুটিয়া সৈয়দ আলী আকবর অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবীর বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্যে যে যাত্রা শুরু করেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী যেন উনার আবেদনটা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ গ্রহন করেন এবং তার যাত্রা যেন সফলতার সূখ দেখতে পায়।
পদযাত্রা শুরুর সময় হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি নীতিমালা মেনে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন নিবেদন করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন সুরাহা না পাওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা ভবিষ্যতের চিন্তায় হতাশায় ভূগছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান বিদ্যালয়টির দৈন্যদশা ও এমপিওভুক্তিকরণের বিষয় তুলে ধরে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সংসদে ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড কথা বলেছেন। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালক-৭ আল মামুন মুর্শেদ স্বাক্ষরিত চিঠিও পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে। এতেও বিদ্যালয়টির এমপিওভ্ক্তুকরণ হয়নি। এ অবস্থায় সবশেষ ভরসা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য পায়ে হেটে রওয়ানা দিয়েছি। প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছানোর আশা করছি।
কিউএনবি/আয়শা/১০ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:১৯