শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

কী নিয়ে সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আকাশে-বাতাসে পূজোর গন্ধ। শারদীয়ার উৎসব শুরু, ঢাকে কাঠি পড়েছে, একের পর এক পুজো প্যান্ডেল উদ্বোধন করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু সেই পুজোর উৎসব ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মদন মিত্রের তর্পণ রাজনীতি। 

সনাতনী ধর্মে জীবিত মানুষের উদ্দেশে তর্পণ করা হয় না, মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যেই কেবলমাত্র তর্পণ করা হয়। কিন্তু সেই রীতি ভেঙেই এবার বিপাকে সাবেক পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র।

রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় কালারফুল বয় হিসেবেই পরিচিত মদন। সবসময় সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে থাকতে ভালোবাসেন তিনি। কিন্তু সেই বিধায়কই এমন কাণ্ড করে বসলেন যা নিয়ে বিতর্ক থামছেই না।

রবিবার মহালয়ার দিন কলকাতার বাবুঘাটে রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছবিতে মালা দেন মদন। রাজ্য থেকে বিজেপির বিদায় চেয়েই এই তর্পণ মদনের। মদন মিত্রের দাবি ছিল, শুভেন্দু অধিকারী বা দিলীপ ঘোষকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

কামারহাটি কেন্দ্রের বিধায়কের বক্তব্য, ‘এরা বেঁচে থাকুক, সপরিবারে সুস্থ থাকুক। কিন্তু বিজেপির রাজনৈতিকভাবে যে অপমৃত্যু ঘটবে তার তর্পণ করার জন্য লোক পাওয়া যাবে না। তাই আমি আগাম সেই তর্পণ করে গেলাম’।

মদন যখন বিজেপি নেতাদের ছবিতে মালা দিচ্ছিলেন তখন ‘বলো হরি, হরি বোল’ ধ্বনি দিতেও শোনা যায়। এরপরই বিতর্ক শুরু। একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি হিসেবে কীভাবে তিনি জীবিত মানুষের ছবিতে মালা দিতে পারেন?

এই ঘটনার পরই মদনের বিরুদ্ধে বালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। বিজেপির বালি ১ নম্বর মন্ডলের সভাপতি ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত এই অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের অভিযোগ, ‘হিন্দু শাস্ত্র মতে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়। কিন্তু রবিবার মদন মিত্র যেভাবে দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীর নামে তর্পণ করেছেন তা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে’।

মঙ্গলবার এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন দিলীপ ঘোষ। এদিন সকালে নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি বলেন ‘রাজনীতিকে তৃণমূল কোন জায়গায় নিয়ে গেছে এবার দেখুক। তিনি সাধারণ লোক নন, একসময় মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তার আচরণ ভেবে দেখা উচিত। এই জন্যই লোক রাজনীতিবিদদের নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলেন। কেন বলেন, সেটা মদন মিত্রের মতো লোক দেখলে বোঝা যায়। নিজে জেল খেটে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এই পতন আমরা দেখিনি’।

আর মমতা ব্যানার্জি অনুপ্রেরণায় এই সমস্ত কিছু হচ্ছে বলেও দাবি দিলীপ ঘোষের। মুখ খুলেছেন শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি বলেছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস নতুন সংস্কৃতি জন্ম দিয়েছে। বাংলার মানুষ তা দেখছেন’।  

মদন মিত্রের এই ভূমিকা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন তোলপাড়, তৃণমূল যখন অস্বস্তিতে- তখনই দলের তরফেও অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। দল যে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থন করে না তা পরিষ্কার করে দেওয়ার পাশাপাশি এই ঘটনার নিন্দা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদ বলেন, ‘দিলীপ ঘোষ কিংবা শুভেন্দু অধিকারীর সাথে আমার রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিশ্চিতভাবে আছে। কিন্তু আমরা সকলেরই দীর্ঘ জীবন কামনা করি। জীবিত মানুষের নামে তর্পণ করা যায় না। তাই এটাকে নিয়ে যদি কেউ খেলা করে থাকে – অন্যায় করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস কখনই এ ধরনের ছ্যাবলামোকে সমর্থন করে না’।

তর্পনের সাথে এভাবে রাজনীতিকে টেনে আনার ঘটনায় একজন বিধায়কের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার অভিমত, মিডিয়া হাইপ পেতেই মদন মিত্ররা এমন কাজ করছেন। মদন মিত্রকে ভর্ৎসনা করে স্পিকার বলেন, ‘এরই সমস্ত বিতর্কিত মন্তব্য না করাই ভালো। উনি যেই মন্তব্য করেছেন তা আমি দেখেছি। এইসব কথা বলে কি গৌরব বৃদ্ধি পায়, আমি বুঝি না। এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই আমি সমর্থন করি না প্রতিবাদ বিভিন্ন উপায় হতে পার ‘।

তার অভিমত, ‘এগুলো ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে না। আসলে মিডিয়ার প্রচার পাওয়ার জন্য এসব করা হচ্ছে। এসব না করলে মদন মিত্র, মদন মিত্রই থাকবেন’।

তবে শুধু মদন মিত্রের তর্পণ রাজনীতিই নয়, পিতৃপক্ষে পূজা উদ্বোধন এবং ভুল স্ত্রোত্ত্ব ও মন্ত্রপাঠ উচ্চারণ করে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভবানীপুরের বিধায়ক মমতা ব্যানার্জিও। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে একাধিক মিম, টিপ্পনী ঘুরে বেড়াচ্ছে মমতার ওই ভুল শ্লোককে কেন্দ্র করে।

গত বৃহস্পতিবার কলকাতার শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, টালা প্রত্যয় এবং সল্টলেকের এফডি ব্লক- এই তিনটি পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন করেন মমতা। শাস্ত্রমতে মহালয়ার (রবিবার) দিন থেকেই পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়। কিন্তু তার আগেই পূজো উদ্বোধন করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। টুইট করে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, ‘বাংলার লজ্জা, পিতৃপক্ষে দুর্গাপূজার উদ্বোধন করে দিলেন মাননীয়া। দেবীপক্ষে নবরাত্রি শুরু হলে মায়ের আরাধনা হয়। বাঙালির সবটাই একা শেষ করে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছেন’।

বরাবরের মতো বৃহস্পতিবারই শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের ওই পূজো উদ্বোধনের মঞ্চে স্ত্রোত্ত্ব ও মন্ত্র পাঠ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু মন্ত্রচারণের সময় দুই বার থেমে যান মুখ্যমন্ত্রী। আর এই ভুলের জন্য পাশে থাকা সংগীতশিল্পী শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সব শ্রীকুমারদা নষ্ট করে দিল’।

মমতার ওই ভুল মন্ত্রচারণই এখন প্রতিটা সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিজেপির টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘আবারো ভুল মন্ত্র পাঠ! মমতা ব্যানার্জির পক্ষেই এটা সম্ভব’।

কিউএনবি/অনিমা/২৭.০৯.২০২২/বিকাল ৩.০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit