শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

ইসলামে স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের তাগিদ

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : স্ত্রী মানুষের জীবনের অন্যতম অংশ। তাই প্রত্যেক স্বামীর উচিত স্ত্রীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও প্রেমময় সম্পর্ক বজায় রাখা। মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হলো উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। আর পবিত্র হাদিস শরিফে স্ত্রীকে স্বামীর চারিত্রিক সনদদাতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

স্ত্রীর কাছে চারিত্রিক সনদ পেতে হলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলো—স্ত্রীর মোহর আদায়ে যত্নবান হওয়া : নারীদের তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেবে, অতঃপর তারা যদি সন্তোষের সঙ্গে তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু ছেড়ে দেয়, তবে তা তৃপ্তির সঙ্গে ভোগ করো। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)

স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া : স্ত্রী কখনো কোনো ভুল করে ফেলে তাকে শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার না করে সুন্দর নসিহতের মাধ্যমে বোঝানো। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা নারীদের উত্তম নসিহত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের নসিহত করতে থাকো। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৩১)

সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণ দেওয়া : মুআবিয়াহ আল-কুশাইরি (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা-ই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৪)

স্ত্রীর সাজসজ্জার ব্যবস্থা করা : রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও… সাবধান! তোমাদের ওপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণ-পোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫১)

স্ত্রীর কোনো জায়েজ কাজকে ঘৃণা না করা : একেক মানুষের চিন্তা-চেতনা একেক রকম, তাই জায়েজ কোনো বিষয়ে স্ত্রীর কোনো অভ্যাস পছন্দ না হলেও তাকে ঘৃণা না করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না; (কেননা) তার কোনো (জায়েজ) অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো অভ্যাস সে পছন্দ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)

স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধা লক্ষ করা : আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের সঙ্গে ছিলেন এবং একজন উটচালক তাঁদের উট হাঁকাচ্ছিল। রাসুল (সা.) বলেন, হে আনজাশাহ! কাচপাত্র নিয়ে আস্তে চলো। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৩৩)

স্ত্রীদের প্রতি যত্নশীল হওয়া : মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ফজরের নামাজের পর নবী (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তাঁর চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন। (তিবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)

এ ছাড়া রাসুল (সা.) প্রতি রাতে সব স্ত্রীদের একত্র করে তাঁদের খোঁজ নিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, খুব কম দিনই হতো যে রাসুল (সা.) তাঁর সব স্ত্রীর কাছে যেতেন না এবং তাদের সঙ্গে সহবাস ছাড়া ঘনিষ্ঠ (আলিঙ্গন ও চুম্বন) হতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৩৭)

চিত্তবিনোদন ও মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করা : স্ত্রীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুকও করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করা : মহানবী (সা.) সাংসারিক কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)

মান-অভিমানে সহানুভূতিশীল হওয়া : স্ত্রীরা কখনো অভিমান করলে বা মন খারাপ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগিয়ে যান এবং সাফিয়া (রা.) পিছিয়ে পড়েন। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহানবী (সা.) তখন নিজ হাতে তাঁর চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন। (সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৯১৬২)

স্ত্রীদের সঙ্গে খুনসুটি করা : মহানবী (সা.) তাঁর আচার-আচরণে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন এবং নানা খুনসুটি করতেন তাঁদের সঙ্গে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!! (মুসলিম, হাদিস : ৩২১)

স্ত্রীদের অবদান স্বীকার করা : খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তখন সে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন সে তার সম্পদ দ্বারা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, আল্লাহ আমাকে তার গর্ভ থেকে সন্তান দিয়েছেন যখন তিনি অন্য স্ত্রীদের সন্তান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৮৬৪)

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit