রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

আয়েশা (রা.)-এর সাহিত্যানুরাগ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছিলেন মর্যাদার অধিকারী। তিনি তাঁর মেধা, প্রতিভা ও যোগ্যতা বলে এই মর্যাদা লাভ করেন। নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনি যেমন তাঁর জ্ঞান, সান্নিধ্য, স্নেহ ও ভালোবাসার সৌরভে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন, তাঁর ইন্তেকালের পর আয়েশা (রা.) নববী উত্তরাধিকার উম্মাহর মধ্যে ছড়িয়ে দেন। নববী উত্তরাধিকার : আয়েশা (রা.) অন্যান্য বিষয়ের মতো নির্দোষ সাহিত্যানুরাগও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে লাভ করেছিলেন।

কেননা বিশুদ্ধ ভাষার অনুশীলন ও নির্মল কাব্যের চর্চাকে নবীজি (সা.) নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। যেমন তিনি তাঁর মেম্বরের পাশে সময়ের অন্যতম প্রধান কবি হাসসান বিন সাবিত (রা.)-এর বসার স্থান নির্ধারণ করেন। তিনি মুসলিম কবিদের উৎসাহিত করে বলেছিলেন, ‘যারা অস্ত্র হাতে আল্লাহর রাসুলকে সাহায্য করে, তাদের নিজ কথা (কবিতা) দ্বারা সাহায্য করতে কে নিষেধ করেছে?’ (আহাদিসু উম্মিল মুমিনা আয়েশা : ৩/২২২)

সাহিত্যচর্চায় নবীজি (সা.)-এর অনুপ্রেরণা : আয়েশা (রা.)-এর সাহিত্যানুরাগকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো নিরুৎসাহিত করেননি; বরং উৎসাহিত করেছেন। গবেষক ইয়াসিন খলিফা আত-তাইয়িব লেখেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তিনি কবিতা মুখস্থ করতেন এবং তা বর্ণনা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাছ থেকে কবিতা শুনে আনন্দিত হতেন এবং তাঁর মুখে বেশি বেশি কবিতা শুনতে চাইতেন। ’ (ইজলাউল হাকিকাতি ফি সিরাতি আয়েশা সিদ্দিকা, পৃষ্ঠা ৬৩)

আয়েশা (রা.)-এর সাহিত্যানুরাগ : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর সাহিত্যপ্রীতি সম্পর্কে তিনি আরো লেখেন, ‘কবিতার ওপর তাঁর দক্ষতা ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এবং তা কিছুটা পারিবারিক। কেননা তাঁর বাবা (আবু বকর সিদ্দিক রা.) তাঁর মতোই কবিতা মুখস্থ করতেন এবং কবিতার ছন্দমিল ঠিক করে দিতেন। তাঁর ভাই আবদুল্লাহ (রা.)-ও কবিতার ছন্দমিল ঠিক করে দিতেন। কবি লাবিদ ছিল তাঁর সবচেয়ে পছন্দের কবি। তিনি কবি লাবিদের এক হাজার পঙিক্ত মুখস্থ করেছিলেন। আয়েশা (রা.) অন্যদের উপদেশ দিতেন যেন তারা তাদের সন্তানকে কবিতা শিক্ষা দেয়। কেননা এতে তাদের ভাষা সুন্দর হবে। যেকোনো বিষয় তাঁর সামনে এলে তিনি উক্ত বিষয়ে কবিতা পাঠ করতেন। ’ (ইজলাউল হাকিকাতি ফি সিরাতি আয়েশা সিদ্দিকা, পৃষ্ঠা ৬৩)

ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা : আয়েশা (রা.)-এর সাহিত্যপ্রতিভা এবং ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর দক্ষতার সাক্ষ্য সমকালীন ও পরবর্তী বহু মনীষীই দিয়েছেন। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

১. বিশুদ্ধতম ভাষার অধিকারী : বিশিষ্ট তাবেঈন মুসা ইবনে তালহা (রহ.) বলেন, ‘আমি আয়েশা (রা.)-এর চেয়ে অধিক বিশুদ্ধভাষী কাউকে দেখিনি। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৮৪)

২. অলংকারপূর্ণ ভাষার অধিকারী : আয়েশা (রা.)-এর আলোচনা ও বক্তৃতায় তাঁর ভাষাগত দক্ষতা প্রকাশ পেত। মুয়াবিয়া (রা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি আয়েশার চেয়ে বেশি বিশুদ্ধ, অলংকৃত ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাষার অধিকারী বক্তাকে দেখিনি। ’ (সুনানে তাবারানি, হাদিস : ১৯২৫২)

৩. কবিতায় অগাধ পাণ্ডিত্য : হিশাম ইবনে উরওয়া (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলতেন, ‘আমি আল্লাহর কিতাব, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ, কবিতা ও শরিয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে আয়েশা (রা.)-এর চেয়ে অধিক জ্ঞানী কাউকে দেখিনি। ’ (কিতাবুল আদাব লি-ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৯৫)

৪. অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব : আল্লামা আবু ওমর ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেন, ‘আয়েশা (রা.) তার যুগে তিনটি শাস্ত্রে অদ্বিতীয় ছিলেন। তা হলো ফিকহ (ইসলামী আইন), চিকিৎসা শাস্ত্র ও কাব্যশাস্ত্র। ’ (মুসনাদে ইসহাক : ২/৩০)

সাহিত্যচর্চায় নববী বৈশিষ্ট্য : আয়েশা (রা.) ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হলেও তিনি বিষয়টিকে জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করেননি; বরং উম্মুল মুমিন বা মুমিনদের মা হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী প্রচার, দ্বিনি বিধি-বিধানের শিক্ষাদান, সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের সন্ধান ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ঠিক যেমন নবীজি (সা.)-এর জীবনে দেখা যায়। একদিকে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) প্রিয়নবী (সা.) সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ ভাষী কোনো মানুষকে দেখিনি। ’ (ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৫২)

অন্যদিকে পবিত্র কোরআনে তাঁর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ‘আমি রাসুলকে কাব্য রচনা করতে শেখাইনি এবং এটা তাঁর পক্ষে শোভনীয়ও নয়। ’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬৯)

আয়েশা (রা.)-এর সামগ্রিক সাহিত্যচর্চা বিচার করলে উল্লিখিত নববী বৈশিষ্ট্যই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সাহিত্যচর্চায় দৃষ্টিকোণ : ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর অনুরাগ থাকলেও তিনি তা নির্বিচারে গ্রহণ করার অনুমতি দেননি; বরং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলতেন, ‘কবিতায় ভালো আছে, মন্দও আছে। তুমি ভালোটি গ্রহণ কোরো এবং মন্দটি পরিহার কোরো। আমি কা’ব ইবনে মালিকের এমন একটি কবিতা বর্ণনা করেছি, যাতে ৪০টি বা তার চেয়ে কিছু কম পঙিক্ত আছে। ’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৭৪)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:০৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit