জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ. এফ. মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের নিচতলায় অবস্থিত “গণিত ভবনের ক্যান্টিন” এ খাবারের নতুন মূল্য তালিকা দেখে অবাক হয়ে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আছে গণিত বিভাগের ছাত্রী সীমা (ছদ্মনাম)। গণিত বিভাগের এই ছাত্রী কিছুতেই খাবারের মানের সাথে দামের মধ্যে অঙ্ক মিলাতে পারছেন না।
শুধু গণিত ভবনের ক্যান্টিন নয়, সম্প্রতি জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ টি আবাসিক হলের ক্যান্টিন,ক্যাফেটেরিয়া এবং খাবারের দোকান গুলোতে খাবারের মান কমেছে এবং দাম বেড়েছে। ইতিমধ্যেই দুইটি হলের ক্যান্টিনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
খাবারের দাম বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ:
এ.এফ. মজিবুর রহমান গণিত ভবনের নিচতলার ক্যান্টিনে মোতাহার হোসেন ভবন ও মোকাররম ভবনে পড়ুয়া প্রায় পাঁচ হাজারের
বেশি শিক্ষার্থীরা নাস্তা করতে আসে। বিজ্ঞান অনুষদের “সায়েন্স ক্যাফেটেরিয়া” বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে কার্জন হলের বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা এখন গণিত ভবনের এই ক্যান্টিন। সম্প্রতি জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই ক্যান্টিনের খাবারের মান কমেছে এবং দাম বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে সেখানে একটি নোটিশ টাঙ্গিয়ে দিয়েছে ক্যান্টিন মালিক। প্রতিটি খাবারের আইটেমের মূল্য ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের নিচতলায় স্টাফ ক্যান্টিনে ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা, ৫ টাকার রুটি এখন ১০ টাকা।দশ টাকার ডিম মামলেট এখন ১৫ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স লাইব্রেরী এবং মোকাররম ভবনের কিছু শিক্ষার্থীদের ভরসা পাশ্ববর্তী পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের খাবারের ক্যান্টিন।এখানেও ৫০ টাকার খাবার এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
হিসাব করে দেখা গেছে যে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাবারের দোকানে খাবারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে।
ক্যান্টিন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলের ক্যান্টিন এবং ক্যাফেটেরিয়ায় পানি , বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হয় না।
কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে খাবারের মান ধরে রাখা সম্ভব নয়।তাই কোন কোন খাবারের মান কমানো হয়েছে এবং কোন কোন খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে।ফলে ছোট হয়ে গেছে মাছ এবং মাংসের আইটেমের আকার।
এদিকে খাবারের মান কমে যাওয়ায় এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ সিদ্দিক হাসান জানান, বিজ্ঞান অনুষদের ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকায় আমাদের কে জীববিজ্ঞান অনুষদের জহির ভাইয়ের ক্যান্টিন, ফজলুল হক মুসলিম হল অথবা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ক্যান্টিনে খাবার খেতে যেতে হয়। বিজ্ঞান অনুষদের ক্যাফেটেরিয়ার তুলনায় এসব দোকানে খাবারের দাম ২/৩ গুণ বেশি।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ডঃ মোঃ আব্দুর রহিম জানান, খাবারের মান দেখার জন্য আমি কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে হলের ক্যান্টিন পরিদর্শন করেছি। বাজারে ডিমের দাম হ্রাস পেয়েছে।তাই
ডিম মামলেটের দাম কমানোর জন্য বলেছি। খাবারের দামটা যেন মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পুষ্টি জোগান যাতে বাড়ে , সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। হলে খাবার নিয়ে মন্তব্য খাতা খোলা হয়েছে। সবাই মতামত থাকলে জানাতে পারবে। পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য ক্যান্টিনের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ মোঃ আখতারুজ্জামান জানান, খাবারের মানের সাথে দামের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সব হল প্রভোস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূর্যসেন হল এবং জসীম উদ্দীন হলের ক্যান্টিনে তালা: পঁচা খাবার পরিবেশন করার অভিযোগে গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্য সেন হলের ক্যান্টিন এবং গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার কবি জসীম উদ্দীন হলের ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা খাবারের মান বৃদ্ধি করতে বিক্ষোভ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের উন্নত মানের খাবার নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই।
কিউএনবি/আয়শা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ১০:৩৮