শান্তি
——–
আমার আগের পোস্টে এক ভাই প্রশ্ন করেছেন শান্তি কাকে বলে, কি ভাবে পাওয়া যায় ?
উত্তরটা ভাবলাম একসাথে সবার জন্যই দেই।
শান্তি হচ্ছে মনের এমন এক অবস্থা যেখানে অহংকার নেই, লোভ নেই, হিংসা-বিদ্বেষ নেই, জ্বালা নেই, আফসোস নেই, কোন পাপ বোধ নেই।
দুঃখ-কষ্ট আর ”না পাওয়া” কে মেনে নিতে শিখে গেছেন।
ভাবছেন একজন রক্ত মাংসের মানুষের পক্ষে কি করে সম্ভব ?
কিছুটা জন্মগত অর্থাৎ পরিবার থেকে পারিবারিক শিক্ষা থেকে পাওয়া বাকিটা ধীরে ধীরে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
বোকা মানুষ জীবনের বেশীরভাগ সুন্দর সময় নষ্ট করে আফসোস, প্রতিযোগিতা, অন্যের অমঙ্গল কামনা আর তাঁদের সমালোচনায়। বুঝে না জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান যে ”সময়” তাই তিনি নষ্ট করছেন।
অর্থ-বিত্ত, সম্পদ, ক্ষমতা মানুষকে যতটা সুখ দেয় তাঁর থেকে বেশী আহাজারি দেয়, হাহাকার বাড়ায় অর্থাৎ ”আরও চাই”, কিছুতেই তৃপ্ত হতে দেয় না। বস্তুগত চাওয়া কেবল বাড়তেই থাকে।
অকাতরে দান করা, কোন প্রতিদান ছাড়া মানুষকে সাহায্য করার প্রচেষ্টা প্রকারন্তরে সুখ বাড়ায় ।
আমি বিশ্বাস করি সুস্থভাবে বেঁচে থাকা খোদাতালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আপনি পেট পুরে খেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন এটাই মূলত সুখ। তারসাথে আদর, ভালোবাসা, মায়া-মমতা পাওয়া মানে সোনায় সোহাগা। পাশে যদি একজন বিশ্বস্ত মানুষ পান আপনি ভাগ্যবান।
আল্লাহ্ প্রতিটি মানুষকে কোন না কোন উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে আনয়ন করেন। আমরা মানুষেরা সেই উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত, দিক ভ্রষ্ট হয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকি, নানা বিভ্রান্তির শিকার হই।
মানুষের মুলকাজ হচ্ছে অন্যের জন্য পৃথিবীটাকে আরও সহজ এবং সুন্দর করা।
উঁচু-নিচু যিনি যেই কাজ করছেন সততার সাথে করাই হচ্ছে ইবাদত।
প্রতিটি ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাগুলো মূলত মানুষের চিন্তা-চেতনায় শুদ্ধতা আনয়নের জন্য।
ইসলাম ধর্মে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে শান্তিপূর্ণ আর সুখী জীবন-যাপনের পাশাপাশি অন্যের ভালো আর উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়া।
কোরআন আমাদের পরিপূর্ণ জীবন বিধান। যার অর্থ আমরা এখনও পর্যন্ত ভালভাবে জানি না বা বুঝি না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের মউলানা সাহেবরা বয়ান করেন মানুষের চাহিদা বুঝে।
ইদানীং অনেক শিক্ষিত মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলা করছেন কোরআনের অর্থ। তাতেই কতোটা শুদ্ধ বা সহি এখনও জানা হয়নি ।
যে কোন ভাষা যেমন ”বাংলা ভাষা”কে বুঝতে হলে বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, প্রচলিত শব্দ, অবস্থা ভেদে শব্দের ব্যাবহার বুঝতে হবে যা একজন ভিন ভাষার মানুষের কাছে সহজ সাধ্য নয় ঠিক তেমনই কোরআনের সঠিক অর্থের জন্য শুদ্ধ আরবি উচ্চারণ, অর্থ এবং বাংলা ভাষা জানা একজন মানুষ প্রয়োজন।
অনেকেরই হয়তো জানা নেই কোরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদ করেছেন ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন যিনি একজন সনাতন ধর্মের মানুষ ছিলেন। তাঁর এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
এক সময় হুজুরদের বয়ান বা ওয়াজ শুনা আমার নেশা ছিল। আমি কেবল সৌদি আরব নয় অ্যামেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডের মসজিদে যেয়ে বয়ান বা খুদবা শুনেছি। হজ্ব করেছি ২ বার, ২০০৫ এবং ২০১১ তে । ছাত্রাবস্থায় রোকেয়া হলে নামাজ শিখিয়েছি অনেক বান্ধবীকে। অত্যন্ত ধর্মভীরু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার কারণে মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক ছিল, প্রথম কোরআন খতম দিয়েছিও সেই বয়সেই।
পাড়ায় কেউ মারা গেলে আমাকে নিয়ে যাওয়া হত সহি উচ্চারণে কোরআন পড়ার জন্য। এ নিয়ে খেলার সাথীরা আমায় মউলভী বলে ব্যাঙ্গ করতো।আমি ভীষণ লজ্জা পেতাম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ এবং মাহফিলে যে বয়ান সেখানে নারী-পুরুষ সম্পর্ক, যৌনতা আর নারীদের অবদমনের প্রচেষ্টা প্রাধান্য পায়। আর উন্নত সভ্য দেশগুলোতে বয়ান হয় যেখানে ”কেবলই মানবতার বানী ” ।
আমি আজহারির বয়ানও শুনতাম ।পীর বাণিজ্য, ব্রিহন্নলা বা হিজরাদের নিয়ে তাঁর বয়ান ভীষণ ভালো লেগেছিল। কিন্তু যেদিন তিনি বলেছেন, ”করোনা হল আল্লাহ্র সৈনিক, বিধর্মীদের ধ্বংস করতে পৃথিবীতে এসেছে” সেদিন হতাশ হয়েছি ভীষণ।চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা থাকলে কেউ এমনটা বলতে পারে না। শিক্ষিত, আধুনিক আজহারী এটা কি বললেন ?
কোরআনের প্রতিটি সূরা নাযিলের পেছনে শানে নুযূল মানে ইতিহাস আছে সঠিক ব্যাখ্যা আছে। আমরা তাঁর কতোটা জানি বা বুঝি ?
আমি অবশ্যই ধার্মিক কিন্তু কিছুতেই ধর্মান্ধ নই।
আমি লোভী নই বিধায় পরকালে হুর চাই না, ১০ পৃথিবী সমান বাড়ি চাই না, সোনার পালঙ্কে শুতে চাই না, প্লেট ভর্তি কোরমা-পোলাও খেতে চাই না । নিজের কাজ নিজে করি, কাজের লোকেরও প্রয়োজন নেই।
কেবল ভালোবাসার প্রিয়জনদের সাথে হেসে-খেলে, মায়া-মমতায় মাখামাখি জীবন চাই।
তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু এবং অন্তর্যামী তাঁর সাথে আমার ভাষাগত কোন সমস্যা নেই কারণ তিনি হৃদয় পড়তে জানেন।
পৃথিবীতেই তিনি আমায় স্বচ্ছ কাঁচের মত হৃদয় দিয়েছেন ওপারেতেও উত্তম প্রতিদান দিবেন বলে বিশ্বাস করি।
আমার আল্লাহ্ একমাত্র বিচারের মালিক আপনাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি আমাকে জাজ বা বিচার করার ।
ধর্মান্ধ যারা মন্দ কথা বলেন, কটু বানে অন্যকে অপদস্ত করেন, ধর্মের নামে অকাতরে মানুষ হত্যা করেন ইসলামের পরিভাষায় তাঁরা মূলত অজ্ঞ, মূর্খ, কাফের কিছুতেই ধার্মিক নন।
লেখিকাঃ খুজিস্তা নূর ই নাহরীন নিয়মিত লেখালেখি করেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লেখা ঝড় তুলে। পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজ এর সাবেক সম্পাদিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী খুজিস্তা নূর ই নাহরীন বর্তমানে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/০১.০৯.২০২২/ রাত ১১.৪৮