শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

অন্ধত্বকে জয় করে বিএ পাস, স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১৬৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাগেরহাটে অন্ধত্বকে জয় করে ব্যাচালর অব আর্টস (বিএ) পাস করেছেন আবু মূসা আল মামুন নামের এক যুবক। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অংশগ্রহণ করেছেন মৌখিক পরীক্ষায়, স্বপ্ন এখন শিক্ষক হওয়ার।

৩৪ বছর বয়সী আবু মূসা আল মামুন বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার এলাকার কুঠিবাড়ি-কাঠালতলা এলাকার বাসিন্দা। বাবা মোঃ দেলোয়ার হোসেন তৃতীয় বিয়ে করে আলাদা থাকায়, মা রওশনআরা বেগম, বড় বোন, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে আবু মূসা আল মামুনের সংসার। নিজের পড়াশুনা ও সংসারের ব্যয় বহন করেন প্রাইভেট টিউশনি করে। 

অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার প্রাইভেট পড়িয়ে। ৬ষ্ঠ থেকে এইসএসসি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির ২০ জনের উপরে শিক্ষার্থী রয়েছে তার। শিক্ষার্থীদের টাকায় কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন যায় মামুন ও তার পরিবারের সদস্যদের। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন মামুন ও তার পরিবার। স্থানীয়দের চাওয়া মামুনের চাকরি হোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু মূসা আল মামুন বলেন, “জন্মের পর থেকেই আমি সামান্য দেখতাম চোখে। যার ফলে সবাই অন্ধ বলে উপহাস করত। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবা-মায়ের আদর পাইনি। সকল বাঁধা ও যন্ত্রণা সহ্য করে ২০০৪ সালে মোরেলগঞ্জ এসিলাহা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করি। ২০০৬ সালে একই উপজেলার এসএম কলেজ থেকে এইসএসসি। তখনও চোখে আবছা আবছা দেখতাম।” 

“পরবর্তীতে ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে খুলনা বিএল কলেজে ইংরেজী বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হই। সফলতার সাথে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ পাস করি। হঠাৎ করে একদিন আর চোখে দেখতে পাই না। চিকিৎসক এবং কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শে বাড়িতে ফিরে এলাম। বিএ ভর্তির জন্য এসএম কলেজে যাই। কিন্তু অন্ধ হওয়ায় ভর্তি নেননি শিক্ষকরা। কয়েক বছর ঘুরে উপাচার্যের মৌখিক অনুমতিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ ভর্তি হই। ২০১৫ সালে বিএ পাস করি।”

মামুন আরও বলেন, “বিএ পাস করলেও কোথাও কোন কাজ আমি পাই না। কারণ অন্ধকে কেউ কাজ দেয় না। তাই প্রাইভেট পড়াই। শিক্ষার্থীরা খুশি আমার পড়ানোয়। ওদের পড়িয়েই সারাদিন কেটে যায়। ওদের টাকায়ই সংসার চলে। ৬ জনের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়, তারপরও কোন উপায় নেই আমার। প্রাইভেট না পড়ালে পরিবারের কারও মুখে ভাত উঠবে না।”

“এর বাইরে মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে ইউটিউব এবং গুগলে পড়াশুনা করি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়াশুনার জন্য যেসব সফটওয়ার রয়েছে সেগুলোতেও পড়ি আমি। প্রাথমিকের লিখিত পরীক্ষায় টিকেছি, মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি। আল্লাহ যদি চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এমএ ভর্তি হব।”

মামুনের প্রতিবেশী বৃদ্ধ মোঃ মুরাদ হাওলাদার বলেন, “মামুনের তো বাবা থেকেও নেই। তার উপর বড় বোন, মাসহ ৬ জনের সংসার সামলাতে হয় মামুনকে। ওর যদি প্রাইমারীতে চাকরি হত, তাহলে পরিবারটা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারত।”

মোরেলগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুন নেছা ইভা বলেন, “৫ম শ্রেণি থেকে মামুন স্যারের কাছে পড়ি। স্যার যখন পড়ায়, তখন মনে হয় না যে স্যার চোখে দেখেন না। স্যার অনেক ভাল পড়ান। স্যারের পড়ানো অনেক ভাল বুঝতে পারি আমরা।”

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরিফা আক্তার বলেন, “স্যার অনেক ভাল করে ইংরেজী পড়ায়। এছাড়া অন্যান্য বিষয়েও না বুঝলে স্যারের সাথে কথা বলে বুঝে নিতে পারি।”

মামুনের স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, “দুই ছেলে, ননদ ও শাশুড়িকে নিয়ে একসাথে থাকি আমরা। স্বামীর আয়েই চলতে হয় আমাদের। কোন মতে তিনবেলা ভাত জুটলেও, কষ্ট করতে হয় অন্যান্য সবকিছুতে। স্বামীর যদি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি হয়, তাহলে শাশুড়ির চিকিৎসা ও দুই সন্তানের পড়াশুনাটা অন্তত ভালভাবে করাতে পারব “

প্রতিবন্ধী কোঠায় চাকরির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান এই নারী।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিভিন্ন সময় মামুনকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। ন্যাশনাল সার্ভিসের অধীনে দুই বছর শিক্ষকতা করেছিল মামুন, ভাল করেছে সেখানে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। নিয়মের মধ্যে থেকে মামুনকে শিক্ষক হিসেবে চাকরি প্রদান করা হলে সেখানেও মামুন ভাল করবেন।”

মামুনের সাফল্যে অন্য প্রতিবন্ধীরা অনুপ্রাণিত হবে বলে দাবি করেন তিনি।

কিউএনবি/অনিমা/২৪.০৮.২০২২/দুপুর ১২.১৮

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit