স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : ঢাকার হাতিরঝিলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের(ভিসি) ছেলে আবিরের মৃত্যুরহস্য উদঘাটিত হয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ভিসির স্ত্রী মামলা করলেও ময়না তদন্ত রিপোর্ট, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মোবাইল ফোনের কললিস্ট, লোকেশনসহ সিআইডির গোপন তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে আবিরের মৃত্যু রহস্য। সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মেয়েলী ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবিরকে প্রচন্ড মানষিক চাপ সৃষ্টি করেন তার মা নাসিমা আকতার। ফলে মায়ের ওপর অভিমান করেই আবীর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
তবে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আবিরের মা মামলাটি পুন:বিচারের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটির পূণ: বিচারের আবেদন কেন মঞ্জুর করা হবেনা জানতে চেয়ে আদালত আসামি নয়ন ও মুরাদকে ২৫ আগষ্টের মধ্যে কারন দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জানাযায়, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে ঢাকার হাতিরঝিলের পানিতে ডুবে মারা যায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের প্রফেসর (যবিপ্রবির সাবেক ভিসি) ড.আবদুস সাত্তারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে ওয়াসেক সাত্তার আবির।
এ ঘটনায় নিহতের মা কলেজ শিক্ষক নাসিমা আকতার বাদি হয়ে ছোট দেবরের ছেলে নয়ন ও জামাই মুরাদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার চীফ পেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি প্রথম তদন্ত শুরু করেন ঢাকা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) মাহমুদুর রহমান। কিন্তু কিছুদিন পর বাদি নাসিমা আকতার ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০২১ সালের ২৪ জুন তদন্তকারি কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে পরিবর্তন করে নতুন করে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় ঢাকা মেট্রো( দক্ষিন) সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মামুনুর রশীদকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামনুর রশীদ ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহানগর আদালত- ২১ বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সেই প্রতিবেদনে ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্যহত্যা,বাদির দেয়া স্বাক্ষী, হাতিরঝিলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ পূর্বক পর্যালোচনা এবং সিআইডির গোপন তদন্তে বেরিয়ে আসে সাবেক ভিসিপুত্র আবিরকে হত্যা করা হয়নি। বরং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মেয়েলী ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবিরকে প্রচন্ড মানষিক চাপ সৃষ্টি করেন তার মা নাসিমা আকতার। ফলে মায়ের ওপর অভিমান করেই আবীর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এমন প্রতিবেদন দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ১৭ মে মামলাটি খারিজ করে দেন। ফলে আবিরের মা মামলাটি পুন:বিচারের জন্য আদালতে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি পূণ:বিচারের আবেদন কেন মঞ্জুর করা হবেনা জানতে চেয়ে আদালত আসামি নয়ন ও মুরাদকে ২৫ আগষ্টের মধ্যে কারন দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিকে নিহতের পিতা যবিপ্রবির সাবেক ভিসি ড.আবদুস সাত্তার জানান, মামলাটি পুন:বিবেচনার বিষয়টি তিনি ভাল জানেননা, জানেন তার স্ত্রী। স্ত্রী বালিয়াডাঙ্গা খানপুর কলেজের সহকারি অধ্যাপক নাসিমা আকতার জুই জানান, সম্পত্তির লোভে তার দেবর ফজলুর রহমানের ছেলে নয়ন ও জামাই মুরাদ পরিকল্পীতকভাবে তার ছেলে আবিরকে হত্যা করে। তিনি জানান, ছেলে হত্যার সঠিক বিচারের জন্য তিনি মামলাটি পুন:বিচারের জন্য আদালতে আবেদন করেন। অপরদিকে বাদির দেবর ফজলুর রহমান জানান, পৈত্রিক সম্পত্তি ফাকি দিতে তার ছেলে ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/২২ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪৮