সজিব হোসেন, নওগাঁ : কৃষিতে সমৃদ্ধের জেলা নওগাঁয় এবার সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। সঠিক পরিচর্চা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও দামে খুশি চাষিরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারনে ডোবা ও খাল-বিলের পানি শুকিয়ে গেছে। এতে চাষিরা পাট পঁচাতে ও আঁশ ছাড়াতে পারছেনা ঠিকমত। এতে করে চরম বিপাকে চাষিরা। এখন তাকিয়ে আছেন প্রকৃতিতে বৃষ্টির অপেক্ষায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৬ হাজার ৭৫৫হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। জেলায় এ বছর দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের পাট চাষ হয়েছে। দেশি জাতের মধ্যে সিভিএল-১ ও ডি ১৫৪ জাত, তোষা জাতের মধ্যে ও-৪ এবং ৭২ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক পাট চাষ হয়েছে, সদর উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, রানীনগরে ৪০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ২৫০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০০ হেক্টর, পত্মীতলায় ১৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ৮৩০ হেক্টর এবং মান্দায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় এ বছর কোনো পাট চাষ হয়নি।
মান্দা উপজেলার বৈর্দ্দপুর গ্রামের পাট চাষি আফসার আলী বলেন, আমি এবার ৩ বঘিা জমিতে পাট চাষ করেছি। জাগ দেওয়া, আশঁ ছড়ানো, হাল, বীজ, সার, নিড়ানি ও পরিবহন খরচসহ পাট চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকার মত। এক বিঘা জমিতে ভালো ফলন হলে ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। বাজারে এবার পাটের ভালো দাম আছে। তবে এর চেয়ে আরেকটু বেশি দাম হলে আমরা আরও লাভবান হতাম। বৃষ্টির পানির সংকট খুব। কোনো রকমে একটি ডোবায় আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি। এবার পাটের দাম মোটামুটি ভালো, প্রতিমন পাট বিক্রি হচ্ছে ৩হাজার থেকে ৩২০০টাকা করে।
বদলগাছী উপজেলার চাকলা গ্রামের পাট চাষি মামুন হোসেন বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এখন সময় আঁশ ছাড়ানোর সময় কিন্তু ডোবায় পানি নেই, চরম পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আর নিজের পুকুরও নেই, সেখানে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করবো। তাছাড়া পুকুরে পাট জাগ দিলে মাছের ক্ষতি হয় আর দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিযে করবো বুঝতেছিনা। যদি বৃষ্টি না হয় তবে মারাত্বক সমস্যায় পড়তে হবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম মনজুরে মাওলার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পাট চাষে চলতি অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর কম অর্জিত হয়েছে। নওগাঁ মূলত ধানের জেলা। এখানে আমরা পাটের আবাদ বৃদ্ধি করতে গেলে আউশ ধানের আবাদ কমে যাবে। এজন্য আমরা মূলত কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করিনা সেভাবে। এতে করে আউশ আবাদের বিঘœ ঘটতে পারে। এছাড়াও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা তো আছেই। কারন নওগাঁ জেলা বরেন্দ্র জনপদ।
পাট জাগ দেয়া নিয়ে চাষিদের সমস্যার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি ছিল। যার কারনে পাট কাটা এবং জাগ দিতে সমস্যায় পড়েছিল চাষিরা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যেখানে সুযোগ আছে ডোবা, পুকুর, খাল আছে সেগুলোতে পাটগুলো কেটে দ্রুত জাগ দেয়ার জন্য। দেরিতে পাট কেটে জাগ দিলে পাটের গুণগত মান কমে যায়। যেহেতু এখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি। এরপরও যদি পানির সংকট হয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করে পুকুর লিজ নিয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিব টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি জমা করে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এবার পাটের বাজার ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও জানান জেলা কৃষি বিভাগের এই প্রধান কর্মকর্তা।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৩৩