রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন

মাঙ্কিপক্স: আতঙ্ক নয় চাই সচেতনতা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২
  • ১৭৫ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আবারও আলোচনায় ছোঁয়াচে রোগ ‘মাঙ্কিপক্স’। আফ্রিকার বনাঞ্চলে এটির উৎপত্তি হলেও ইউরোপ-আমেরিকায়ও রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণে এরইমধ্যে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। 

মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স হলো অর্থোপক্স গণের অন্তর্ভুক্ত একটি ভাইরাস। এটি মূলত একটি দ্বি-সূত্রক ডিএনএ ভাইরাস। এর বাইরের আবরণ লিপিডে মোড়ানো। এটি একটি ‘জুনোটিক’ ভাইরাস। রোগটি সাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে। বেশির ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি বিশেষ ধরনের একটি বসন্ত রোগ, যা ‘মাঙ্কিপক্স’ নামের ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। সর্বপ্রথম বানরের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছিল বলে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয় মাঙ্কিপক্স। পরবর্তী সময়ে বানর ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণীর দেহেও ভাইরাসটি পাওয়া যায়। আগে এটি শুধু আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে দেখা দিলেও, এখন বিশ্বব্যাপী রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটিই উদ্বেগের কারণ।

কিভাবে ছড়ায়?
এটি খুব সহজে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে না এবং এখনো মনে করা হচ্ছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই মাঙ্কিপক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন প্রাণী, বিশেষত বন্য প্রাণী থেকে এই রোগ ছড়ায়, এরপর অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষ সংক্রমিত হলে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে রোগটি।

এর সংক্রমণ কোভিডের মতো মারাত্মক ছোঁয়াচে নয়, তবে ছোঁয়াচে। এ ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে অনেকটা সময়ের জন্য ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন পড়ে। সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আঁচড় বা তার রক্ত, শরীর নিঃসৃত অন্যান্য তরল, যেমন—লালারস বা পশমের সংস্পর্শেও যে কেউ মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হতে পারে। কাঠবিড়ালি, ইঁদুরসহ তীক্ষ দাঁতের পশুর থেকেই বেশি ছড়ায় মাঙ্কিপক্স।

সংক্রমিত প্রাণীর মাংস সঠিক উপায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রান্না ছাড়া খেলেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত কারো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে তা অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। ফাটা বা কাটা চামড়া, চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে মানুষের দেহে ঢুকতে পারে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি। ফুসকুড়ি রয়েছে এমন কারো ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা অথবা তোয়ালে স্পর্শ করলেও একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথা ব্যথা, গা ব্যথা ও ক্লান্তি দিয়ে অসুখটি শুরু হয়। এরপর দেহের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। সঙ্গে ছোট ছোট ফোসকা বা গোটার মতো ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে। প্রথমে মুখে, এরপর ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেই ক্ষত। ফোসকার মতো ক্ষতটি শুকিয়ে গেলেও এর দাগ থেকে যায়।

হাম, বসন্ত ও সিফিলিসের কিছু কিছু লক্ষণের সঙ্গে এই রোগের উপসর্গগুলোর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। বিশেষত বসন্তের গোটার মতোই এতে গুটি গুটি ফোস্কা হতে দেখা যায়। এতে রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিনতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগীর দেহে যেকোনো ধরনের ক্ষত দেখলেই সতর্ক হতে হবে। সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এ রোগ থেকে সেরে ওঠে।

করণীয়
বেশির ভাগ ভাইরাল ডিজিজের মতোই মাঙ্কিপক্সেরও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি শরীরের মৌলিক পরিচর্যা নেওয়া জরুরি। তবে সংক্রমণ প্রতিহত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মাঙ্কিপক্স নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো বার্তা না থাকলেও যেকোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।

কারো শরীরে ফুসকুড়ি এবং সঙ্গে জ্বর, অবসাদ্গ্রস্ত কিংবা অস্বাভাবিক দুর্বলতা দেখা দিলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের পরীক্ষা করাতে হবে। মাঙ্কিপক্স শনাক্তের ক্ষেত্রে পিসিআর পরীক্ষাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এক্ষেত্রে ত্বকের ক্ষত স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বায়োপসির মাধ্যমেও এ রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এ সাস্পেক্টেড অথবা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই শরীরের ফুসকুড়ি ঝরে যাওয়া পর্যন্ত আলাদা অবস্থান করতে হবে এবং সব ধরনের শারীরিক মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাঙ্কিপক্স রোগের প্রকোপ কমাতে চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া, আক্রান্ত ব্যক্তির সেবাদানকারীকে অবশ্যই যথাসম্ভব নিজেকে সুরক্ষার কলাকৌশল অবলম্বন করতে হবে।

মাঙ্কিপক্সের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই এ রোগে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়, সেগুলো কমানোর জন্য চিকিৎসক ওষুধ প্রদান করে থাকেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের টিকা এ রোগ প্রতিরোধে প্রায় ৮৫% কার্যকর। এ ছাড়া অনেক দেশে অ্যান্টিভাইরাল এবং ইমিউনোগ্লোবিন ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে করণীয়:
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মেনে চলা প্রয়োজন।
* মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির খুব কাছাকাছি থেকে কথা বলা এবং শারীরিক সংস্পর্শ পরিহার করা।
* কোনো পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে, তাকে আলাদা রুমে রাখা এবং পরিবারের সবার মাস্ক ব্যবহার করা।
* যথাসম্ভব যৌন মেলামেশা এড়িয়ে চলা, বিশেষ প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার করা।
* মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কোনো দ্রব্যাদির সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা।
* যেহেতু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে, সেহেতু সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধান করা।
* নিয়মিত সাবান অথবা অ্যালকোহল সম্পন্ন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা।
* রান্নার সময় মাংস ভালো মতো সিদ্ধ করা।
* অসুস্থ, মৃত অথবা বন্য কোনো প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা।

কিউএনবি/অনিমা/২৪.০৭.২০২২/রাত ১১.০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit