রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২
  • ১২৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালে প্রচণ্ড গরম ছাড়াও ব্যাপক জায়গা জুড়ে দাবানল দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে এই প্রথম তাপপ্রবাহের কারণে ‘রেড এলার্ট’ বা লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে, বলা হচ্ছে দেশটিতে সোম ও মঙ্গলবারের তাপমাত্রা ১০০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে।

স্পেনে কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ওপর উঠছে, পর্তুগালে পারদ উঠেছে ৪৭ ডিগ্রি পর্যন্ত। পশ্চিম ফ্রান্সের বিস্তীর্ণ এলাকা, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি সহ আরও অনেক দেশে দাবানলের আগুনে হাজার হাজার হেক্টর জমি ও বাড়িঘর পুড়ে গেছে, সব মিলিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি লোককে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ইউরোপ ও ব্রিটেনের বিশাল অংশ জুড়ে এখন খরা পরিস্থিতি চলছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব দেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে, লোকজনকে এমনকি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতেও নিষেধ করা হচ্ছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে – লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গলবার তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪১ ডিগ্রি বা তারও বেশি হতে পারে – যা সাহারা মরুভূমির কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রার চাইতে বেশি। মঙ্গলবার লন্ডন শহর হতে যাচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতম স্থানগুলোর একটি।

ব্রিটেনের ইতিহাসে তাপমাত্রা কখনো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে বলে রেকর্ডে নেই। ব্রিটেনে এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি যা হয়েছিল ২০১৯ সালে কেমব্রিজে। সেখানে আবহাওয়া দফতর ইতোমধ্যেই চরম তাপমাত্রার জন্য লাল সংকেত জারি করেছে – এটাও আগে কখনো হয়নি।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সি ইংল্যান্ডের জন্য চতুর্থ স্তরের সতর্কবার্তা জারি করেছে – যাকে বলা হচ্ছে জাতীয় জরুরি অবস্থা।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটা এক নজিরবিহীন ঘটনা কারণ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং ইউরোপ একটি শীতপ্রধান এলাকা বলেই চিরকাল পরিচিত।

তাপপ্রবাহের ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের জীবনযাত্রায় কী প্রভাব পড়ছে?

ব্রিটেন ও ইউরোপ শীতপ্রধান অঞ্চল বলে এখানকার বাড়িঘর-দোকানপাট-অফিস-স্কুল ইত্যাদি ভবনগুলো এরকম প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার উপযোগী করে তৈরি নয়। এগুলো এমনভাবে বানানো যাতে ভবনের ভেতরে তাপ ধরে রাখা যায়।

কাজেই এগুলোতে যারা বাস করেন – তাদের জন্য এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ হতে যাচ্ছে এক চরম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

আশংকা করা হচ্ছে বহু মানুষ এই তাপপ্রবাহের কারণে মারা যেতে পারেন। ব্রিটেনের রেডিও-টিভি-পত্রিকায় এখন সর্বক্ষণ বলা হচ্ছে লোকজনকে ঘর থেকে না বেরুতে, জানালার পর্দা নামিয়ে রাখতে এবং প্রচুর পানি খেতে।

বলা হচ্ছে, এই গরম মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে – কিভাবে এই গরম থেকে মানুষ আত্মরক্ষা করবেন।

এ আশংকা মোটেও অমূলক কিছু নয় – কারণ ইউরোপে স্পেন ও পর্তুগালে যেখানে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে সেখানে এরই মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে।

অনেক স্কুল আগেভাগে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। রেললাইন গরমে বাঁকা হয়ে যাবার আশংকায় কোথাও কোথাও ট্রেন চলছে না। কোথাও বা কম গতিতে চলছে। হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যেই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া লোকের ভিড় জমছে।

এ তাপপ্রবাহের কারণ কি জলবায়ুর পরিবর্তন?

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি এমন এক তাপপ্রবাহ যা উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

তাপপ্রবাহ প্রতিবছরই হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এবারেরটি কেন এত তীব্র হচ্ছে? গত বেশ কিছুকাল ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ, দাবানল, অস্বাভাবিক ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা এগুলোই বা কেন হচ্ছে?

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে।

পৃথিবীতে শিল্প যুগ শুরু হবার আগে যে গড় তাপমাত্রা ছিল – এখন তা ১ ডিগ্রির কিছু বেশি বেড়ে গেছে এবং এর কারণ কয়লা ও গ্যাস থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস। এখন পৃথিবী যে ভাবে চলছে তাতে আগামী দিনে এই গড় তাপমাত্রা আরো এক ডিগ্রি বেড়ে যাবে ।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন – গত ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম সময়ের মধ্যে আমরা বাস করছি।

ব্রিটেনের প্রধান আবহাওয়াবিদ পল ডেভিস বলছেন, ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে এই তাপপ্রবাহের ফলে যা হচ্ছে – তা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রতিক্রিয়া হবার কথা তার সাথে মিলে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, বর্তমান শতাব্দী শেষ হতে হতে পৃথিবীর আবহাওয়ায় এ ধরনের অস্বাভাবিক এবং চরমভাবাপন্ন ঘটনা একটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে যাবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/১৮ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:৫০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit