মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

‘ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে’

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২
  • ১০৫ Time View

ডেস্কনিউজঃ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

এ সময় তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্ব হয়েছে, কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আলোর মুখ দেখেছি। দেশি ও বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবোই, সেই জেদ। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে।

২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এর সাথে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তিনি বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে ফের ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ না করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জসমূহের উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ স্বপ্ন নয়,একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, এতে কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু-কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,জাতীয় ও আঞ্চলিক অর্থনীতির বিস্তৃত ক্ষেত্রেও প্রভাব সৃষ্টিসহ দেশের বিভক্ত দেশের দু’টি অঞ্চলকে একীভূত করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা পালন করবে তেমনি দারিদ্র্য দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এছাড়াও, সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগের ফলে সাধারণ মানুষের বিপুল কর্মঘণ্টার সাশ্রয় হবে এবং জীবনমান উন্নত হবে।

কিউএনবি/বিপুল/২৯.০৬.২০২২/ সন্ধ্যা ৭.২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit