মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

নওগাঁয় কোরবানির পশুর আমদানি বেশি ক্রেতা কম– দাম নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

সজিব হোসেন নওগাঁ প্রতিনিধি । 
  • Update Time : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২
  • ১২৭ Time View

সজিব হোসেন নওগাঁ প্রতিনিধি : আগামী ঈদুল আজহায় কোরবানির চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত করে রেখেছে নওগাঁর পশু লালন পালন কারীরা। এ জেলায় খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে- ষাঁড়, বলদ, গাভী (বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম) মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। গত বছর কোরবানি দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭টি পশু। সে হিসেবে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৩টি। অতিরিক্ত কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তায় আছেন নওগাঁর খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে পশু লালন পালন কারীরা।

এ জেলায় কয়েকটি পশুর হাট মহাদেবপুর, মাতাজি ও চকগৌরী ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গরু ও ছাগল আমদানি হয়েছে। বন্যার কারণে বাহিরের বেপারী না আসায় পশু বিক্রি হচ্ছে না। পশু বিক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী দাম না পেয়ে হাট থেকে গরু ও ছাগল বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন হাট ইজারাদার। আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয় এই ঈদুল আজহা। পবিত্র ঈদ উল আজহায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা কুরবানির পশু। ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের দেয়া তথ্য মতে, খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে নওগাঁ জেলায় এবার ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যার মধ্যে নওগাঁ সদরে ৪২হাজার ৪২০টি, রাণীনগরে ৪১ হাজার ৭৪১টি, আত্রাইয়ে ২৪ হাজার ৭৮৩টি, ধামইরহাটে ৪৪ হাজার ৮২৫টি, বদলগাছীতে ৩২ হাজার ৩৭৯টি, নিয়ামতপুরে ৩২ হাজার ৯৬টি, পোরশায় ৩৩ হাজার ৪৩৬টি, সাপাহারে ২৮ হাজার ৭৬৬টি, মহাদেবপুরে ৪২ হাজার ৫৮৯টি, পত্নীতলায় ৪৬ হাজার ৮১০টি এবং মান্দায় ৬৩ হাজার ২২৮টি গবাদি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু গরুই ৬৭হাজার। জেলায় খামার রয়েছে ২৫হাজার । মহাদেবপুর উপজেলার খাঁপুর গ্রামের গরু বিক্রেতা মহসিন আলী বলেন, মহাদেবপুর হাটে বিক্রির জন্য ৩টি গরু নিয়ে আসি। কিন্তু যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, সে অনুযায়ী দাম কম বলছে।

তাই বাধ্য হয়ে গরু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে। এমন দাম থাকলে লাভতো দূরের কথা খরচ তোলা কঠিন হয়ে যাবে। গো-খাদ্যের দাম বেশি। বদলগাছী উপজেলার কন্দুনা গ্রামের আকরাম হোসেন। তিনি পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১০ সালে ৫টি গাভী গরু দিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। সেখানে থেকে পর্যায়ক্রমে বেড়ে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে গুরুর সংখ্যা এখন ২৩টি। এরমধ্যে ১৫টি দুগ্ধ গাভী এবং ৮টি বাচ্চা। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এ পরিমাণ দুধের দাম পাওয়া যায় ১২০০ টাকা। বাড়ির খড় ও খাস ছাড়াও এতগুলো গরুর পেছনে দানাদার খাবারের খরচ পড়ে প্রায় ১৮০০ টাকার মতো। গত একমাস থেকে দানাদার খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মতো খামারিদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

পশু খাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি দুধের দাম। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ দিনের ব্যবধানে পশু-খাদ্যের নারিশ ফিড বর্তমানে ২৫ কেজি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৯৫ টাকা। যা আগে ছিল ১ হাজার ২৩০ টাকা। বস্তায় বেড়েছে ৬৫ টাকা। গুনগত মানসম্পন্ন কমা ফিড বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা বস্তা। যা আগে ছিল ৯৮০ টাকা বস্তা। ভুসি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকা, আগে ছিল ৫০ টাকা। মাসকালায়ের খুদি ও খৈল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। প্রতিকেজির চালের খুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, আগে ছিল ৩০ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, আগে ছিল ৩৮-৪০ টাকা। গুড় ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, আগে ছিল ৬০০ টাকা। রাইস পালিস বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা কেজি। এ ছাড়া ভুট্টার আটা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩০ টাকা।

খামারি ও কৃষকরা বলছেন, লাভের আশায় সংসারের উন্নয়নের ও দুধের চাহিদা মেটাতে গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়। খড় ও ঘাসের পাশাপাশি দানাদার খাবার হিসেবে ভুসি, খৈল, আটা ও ফিড দেওয়া হয়। গত ২০ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়েই চলছে। খাবার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাবারের দাম বাড়ার দুধ উৎপাদন ও মোটাতাজাকরণ ব্যহত হচ্ছে। এভাবে পশু খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকবে না। চকগৌরী হাট ইজারাদার মো. এনামুল হক বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক বছর থেকে পশুর হাটে লোকসান গুনতে হচ্ছে। হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু ও ছাগলের আমদানি হচ্ছে। কিন্তু বাহিরের ক্রেতা না আসার কারণে বেচা কেনা খুব কম হচ্ছে। যেখানে প্রটি হাটে ১০ থেকে ১২ ট্রাক লোড হয়।

সেখানে ট্রাক লোড হচ্ছে ২টি। সিলেটে ও কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যার কারণে ওই এলাকার কোনো ব্যাপারী হাটে আসছে না। বাহিরের ব্যাপারী না আসায় কেনা বেচায় এমন অবস্থার সৃষ্টি। বেশ শঙ্কায় আছি আমারা হাটের ইজারাদার ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আমাদের এ পেশা ছেড়ে অন্য কোনো কাজ করতে হবে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন বলেন, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নওগাঁ জেলায় খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে শুধু গরুই ৬৭ হাজার। জেলায় প্রায় ২৫ হাজারের মত খামার রয়েছে।

গত বছর কোরবানি হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭টি পশু। এবারে জেলায় প্রায় ৩ লাখের বেশি কুরবানি হবে বলে ধারনা করছি। জেলায় কুরবানির জন্য পশুর সংকট হবে না। চাহিদার তুলনায় জেলার খামারগুলোতে পশু বেশি থাকায় এবার অন্য কোথাও থেকে পশু আনার প্রয়োজন নেই। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, জেলার খামারিরা কুরবানির পশু বিক্রির জন্য ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পশুগুলোকে মোটাতাজা করার জন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বা ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে না।

সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। মাঠের সবুজ ঘাস, ভুসি, খৈল, চালের গুড়া, ছোলা খাওয়াচ্ছেন। আর পশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখতে আমরা খামারিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় ভারতীয় পশু দেশে অবৈধভাবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে আসে, যার কারণে প্রকৃত খামারিরা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কারণ ভারতীয় গরু আসার কারণে দাম অনেক কমে যায়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবি এসব ব্যাপারে নজরদারি রাখছেন বলে তিনি জানান।

কিউএনবি/আয়শা/২৭.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit