সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

গোলাম মর্তুজা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত একজনের গৌরবময় প্রত্যাবর্তন

লেখকঃ লুৎফর রহমান
  • Update Time : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২
  • ৩৪৫ Time View
গোলাম মর্তুজা

গোলাম মর্তুজা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত একজনের গৌরবময় প্রত্যাবর্তন
—————————————————————————————————-
১৯৮৭ সালের ২৫শে জুন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং জাসদপন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মু-না) এর সংঘর্ষ শুরু হল। প্রায় একটানা দুই ঘন্টা বন্দুক যুদ্ধের পর জাসদপন্থী ছাত্রলীগ হেরে যায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাছে। পরাজিত জাসদপন্থী ছাত্রলীগ আশ্রয় নেয় জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং তারা ছাত্রদল নেতা নীরু, অভি, ইলিয়াস আলী, মাহবুব, মর্তুজা, মালেক, রতন, শহীদ, শফিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার দাবি করে।

পরবর্তীতে পরস্পর বিরোধী এই দুই ছাত্র সংগঠনের লড়াই দ্বন্দ চলতেই থাকে।

১৯৮৭ সালের ১৪ই জুলাই সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা আব্দুল হালিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। নিমিষেই দপ করে আবারও আগুন জ্বলে উঠল সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আব্দুল হালিম হত্যাকাণ্ডে ছাত্রদল দায়ী করল জাসদ ছাত্রলীগকে।

সূর্যসেন হল গেটে জাসদ ছাত্রলীগ নেতাদের কয়েকটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দিল ছাত্রদল। মোহসিন,সূর্যসেন, জসিমউদ্দিন হল থেকে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের রুম জ্বালিয়ে দিয়ে বিতাড়িত করল ছাত্রদল। তারা আশ্রয় নিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে।

স্মরণ কালের স্মরণ যোগ্য রণক্ষেত্রে পরিণত হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আক্রমণ করে বসল এস এম হলে। জাসদ ছাত্রলীগ নেতা আসাদ আহমেদ মুন্না গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। ফুলার রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল নিরীহ রিক্সাচালক রহিম।

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা পরিষদ ৪টি ছাত্র সংগঠনের ২০ জন ছাত্রনেতাকে শোকজ করেন। এর মধ্যে ১২ জনই ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা। শোকজের আলোকে পরবর্তীতে ১২জন ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিঃস্কার করা হয়। ৯ জন ছাত্রদলের, ৩ জন জাসদ লীগের। শোকজ কৃত বাকি ৮ জনকে সতর্ক করা হল মাত্র।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৯ জন ছাত্রনেতার মধ্যে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করেন গোলাম মর্তুজা। সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র গোলাম মর্তুজা ১৯৮০/৮১ শিক্ষাবর্ষে লাইব্রেরী সাইন্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জালাল-বাবলু-নীরু’র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটিতে গোলাম মর্তুজা ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য। আইনী লড়াই চালিয়ে তিনি ফিরে পান তার ছাত্রত্ব। বহিস্কৃত ১২ জন ছাত্রের মধ্যে কেবল মাত্র গোলাম মর্তুজা দুর্দমনীয় সাহসের সৃষ্টি করে ৩ বছর পর আবারও প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনে।

এই ফেরা ছিল গৌরবের,এই ফেরা ছিল সাহস,শক্তি, ধৈর্য ও চ্যালেঞ্জের। নিয়মিত ছাত্র হয়ে তিনি এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে। ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে তিনি মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে ভিপি নির্বাচিত হলেন। সে নির্বাচনে ছাত্রদলের পুরো প্যানেলই নিরংকুশ বিজয় লাভ করে। গোলাম মর্তুজা ভিপি নির্বাচিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, শুধু আমি নই, আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৯ জন ছাত্রকে বহিঃস্কার করেছিলেন, তারা সকলই ছিল, মেধাবী, জনপ্রিয়, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী এবং তাদের সুযোগ্য ছাত্রনেতৃত্বকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যে ষড়যন্ত্র মূলক বহিঃস্কার করেছিলেন আপনারা।

যুদ্ধ ও সংগ্রাম যার ললাট লিখনে তার স্বস্তি আর শ্রান্তি কোথায় ? এরশাদ পতনের পর বিএনপি সরকারের শেষ মুহূর্তে ১৯৯৫ সালে গোলাম মর্তুজা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন, বিসিআইসি’তে অফিসার পদে চাকুরী জীবন শুরু করেন। চাকুরী জীবনের প্রারম্ভেই তিনি ৯৬ সালে আগত আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়েন। ছাত্রদল নেতা ছিলেন, এই অপরাধে প্রমোশন ,ভাল বিভাগে বদলী বন্ধ হয়ে যায়।

২৫ বছর চাকুরী করে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন ২০১৯ সালে। যেখানে তার জুনিয়ররা ডিজিএম, জিএম হয়ে গেছে, সেখানে ছাত্রদলের নেতা হওয়ার কারণে প্রায় ২০ বছর যাবৎ ম্যানেজার পদে পরে থাকতে হয়েছে তাকে । রাগ দুঃখ ক্ষোভে তিনি পূর্ণ মেয়াদের আগেই স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে বিদায় নেন। তবে দীর্ঘদিন তিনি বিসিআইসি অফিসার্স এসোসিয়েশনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নেতৃত্ব দেয়া যার আজন্ম স্পৃহা, সূর্যের আলোর ঝলকানি যে দেখেছে তাকে কি আর প্রদীপের আ

 

লো ধরে রাখতে পারে? একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতের তকমা নিয়ে ছাত্র প্রতিনিধি হতে

সক্ষম হয়েছিলেন, সেই একই স্পিরিটে তিনি কাজ শুরু করেছেন তার নিজ সংসদীয় এলাকা পটুয়াখালী-৩ আসনে। দশমিনা, গলাচিপার মানুষকে প্রাণের সখা বানিয়ে এখন তার পথচলা। তিনি যেভাবে সূর্যসেন হলের ভিপি নির্বাচিত হয়ে একজন বহিস্কৃত ছাত্রের পুনরুত্থান ঘটিয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে তিনি নিজ এলাকা পটুয়াখালী-৩ আসনে লড়াই করতে চান এলাকার সার্বিক কল্যাণ ও শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান এর স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে।

 

 

লেখকঃ লুৎফর রহমান রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ এর দশকের একজন সাবেক ছাত্রনেতা।

কিউএনবি /বিপুল ২৭.০৬.২০২২/রাত ১২.৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit