বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১১:৪১ অপরাহ্ন

মেডিটেশন সেবাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত করা হোক

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২
  • ১৩৩ Time View

স্বাস্থ্য ডেস্ক : বিজ্ঞ আইনজীবীগণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকেন। প্রতিপক্ষের দুর্বলতা এবং স্বীয় পক্ষের জোরালো পয়েন্টসগুলো খুঁজে বের করে আইনের বিধান এবং প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্তের আলোকে আদালতের সামনে উপস্থাপনের চিন্তাতেই তারা মগ্ন থাকেন। এই চিন্তামগ্নতা মনের অজান্তেই স্ট্রেসে পরিণত হয়। আর এই স্ট্রেসই হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মাইগ্রেনসহ নানাবিধ  মনোদৈহিক রোগের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন চর্চায় স্ট্রেস লাঘব হয়, ফলে এসব মনোদৈহিক রোগ নিরাময় লাভ করা যায়। আমাদের দেশে অসংখ্য আইনজীবী এখন নিয়মিত ধ্যান করেন। আমরা যারা নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করি; তারা শারীরিক-মানসিকভাবে অন্যদের তুলনায় অতি সহজে সুস্থ ও সবল থেকে গভীর নিমগ্নতার সাথে বিচারপ্রার্থী মানুষদের সেবা প্রদান করতে পারছি। এসব কারণে মেডিটেশনকে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে গণ্য করি। 

বিষয়টি উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়াত মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিগত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট থেকে প্রতিটি বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশনকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা হিসাবে গণ্য করে মূল্য সংযোজন কর থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহতি প্রদান করেছিলেন। 

চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) বনাম এডভোকেট জুলহাস উদ্দিন আহমেদ ১৮ বি,এল,সি (এ,ডি) ৫২ মামলার রায়ে মহামান্য আপীল বিভাগ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উপর মূল্য সংযোজন কর আরোপকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক মর্মে ঘোষণা করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনও একাধিক মামলায় হোমিওপ্যাথি, মেডিটেশনসহ বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার যেকোনো এক বা একাধিক পন্থা পছন্দ করার স্বাধীনতা একজন নাগরিকের রয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করছেন। তাই সাধারণ চিকিৎসা যেমন- মূল্য সংযোজন করের আওতামুক্ত একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের নিকট থেকে মেডিটেশন বিষয়ে পরামর্শ বা মেডিটেশন চর্চায়ও ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নাই। 

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্যে প্রকাশিত উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার গাইডলাইনে যৌথভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম চর্চার কথা বলা হয়েছে। তো একদিকে মেডিটেশনকে স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে অন্যদিকে এ সেবার উপর ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এটি একে অপরের বিপরীতমুখী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

২০২০-২০২১ অর্থবছর মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক এই দুর্যোগ কালে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল অটুট রাখার স্বার্থে মেডিটেশন সেবার উপর মূসক অব্যাহতি বলবৎ রাখার প্রস্তাব করছি’। ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মেডিটেশন সেবার উপর ভ্যাট অব্যাহতি আরো এক বছরের জন্যে বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।

এদিকে চিকিৎসকরাও ওষুধের পাশাপাশি নানা রোগের নিরাময়ে মেডিটেশন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষক, সফল ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত মেডিটেশনের উপকারিতার কথা বলছেন। এতো সব বিবেচনার পরও বার বার কেন এ সেবাখাতে ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে? তার চেয়ে মেডিটেশনের উপর থেকে চিরস্থায়ী ভ্যট অব্যাহতি দিয়ে দেশের লাখো মানুষের শারীরিক মানসিক সুস্থতার সহায়ক হিসেবে মেডিটেশনকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। 

সবকিছু বিবেচনায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবছরের বাজেট বক্তৃতায় মেডিটেশন সেবার উপর ভ্যাট আরোপের যে প্রস্তাব করেছেন; তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বিধায় মেডিটেশন সেবার উপর থেকে প্রস্তাবিত ভ্যাট স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক: অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

কিউএনবি/অনিমা/২৫.০৬.২০২২খ্রিস্টাব্দ/ রাত ৯.৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit