বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

সরকার জনগণের কোন কোন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে?

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২
  • ১৩৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রতি বছরই দেশের বার্ষিক বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় বেড়েই চলেছে। বাজেটে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় তার যোগান সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে।

বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ, অনুদান, রপ্তানী আয় -এগুলো সরকারি আয়ের উৎস।

তবে বাজেটের অর্থের বড় অংশ আসে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা কর ও শুল্ক থেকে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের ৫৫ শতাংশ শুল্ক ও কর থেকে আদায় করার কথা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২ লাখ চার হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় করা হয়েছে।

সরকার তাহলে জনগণের কাছে থেকে কোন কোন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে?

১. আয়কর: আয়কর হচ্ছে ব্যক্তি বা স্বত্তার আয় বা লভ্যাংশের ওপর যে কার আরোপ করা হয়। কর হচ্ছে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তির বার্ষিক আয়ের সীমা আড়াই লাখের ওপরে হলে কর দিতে হবে। নারী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তির এই সীমা বছরে ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধি করদাতার আয় বছরে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আয়কর থেকে সরকার ৬৯ হাজার ১১০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে। 

২. মূল্য সংযোজন কর, মূসক বা ভ্যাট: সরকারের আয়ের সিংহভাগ আসে মূল্য সংযোজন কর, মূসক বা ভ্যাট থেকে। মূসক একটি পরোক্ষ কর। কোনো পণ্য বা সেবার মূল্য স্তরের প্রকৃত সংযোজনের ওপর আরোপিত করই ওই পণ্য বা সেবার মূল্য সংযোজন কর বা মূসক। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের ১ জুলাই মূল্য সংযোজন কর চালু হয়। মূসকের আদর্শ হার ১৫ শতাংশ। 

একজন ভোক্তার দায়িত্ব হল কোনো পণ্য ক্রয় করে বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় রশিদ সংগ্রহ করা। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ভোক্তার দেওয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। কোনো বক্তি আয়কর দিক অথবা না দিক, ভ্যাট মোটামুটি সবাইকেই কোনো না কোনো ভাবে দিতে হয়। এর মধ্যদিয়েই সকল নাগরিকের কাছ থেকে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। 

৩. আমদানি শুল্ক বা কর: আমদানি শুল্ক বা কর একটি পরোক্ষ কর। এটি দেশে আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য করা হয় এবং আদায় করা হয়। এটিও সরকারের আয়ের একটি উৎস। এটি দুইভাবে আদায় করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমদানি চালান মূল্যের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আদায় করা হয়। অন্যটি হল পণ্যের পরিমাণ ভিত্তিক শুল্ক আদায় করা। একইভাবে রপ্তানি পণ্যের থেকেও শুল্ক আদায় করা হয়। 

যজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমদানি শুল্ক হিসেবে সরকার ২৮ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। 

৪. আবগারি শুল্ক: আবগারি শুল্কের মাধ্যমেও সরকার আয় করে থাকে। এটি এক ধরনের পরোক্ষ কর। দেশে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার ক্রয় বিক্রয়ের ওপর এই কর আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোনো পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য এ ধরণের কর আরোপ করা হয়। যেমন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য কিংবা মদ ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে বর্তমানে শুধু দুটো সেবা খাতে সীমিত আকারে আবগারি শুর্ক প্রযোজ্য। একটি হল, ব্যাঙ্কে ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর কর এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের প্রতিটি সিঙ্গেল টিকেটের ওপরে কর। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে সরকার ২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই খাত থেকে ২ হাজার ৮১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। 

৫. সম্পদ কর: সম্পত্তি কর একটি প্রত্যক্ষ কর। এটি সরকারি আয়ের একটি প্রাচীন উৎস। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধিকারে থাকা সম্পদের ওপর ধার্য করা করই হল সম্পত্তি কর। যেমন, নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, স্থাবর সম্পত্তি, বীমা পরিকল্পনা, কর্পোরেশন নয় এমন ব্যবসার মালিকানা, আর্থিক লগ্নিপত্র, ব্যক্তিগত তহবিল অন্তর্ভুক্ত থাকে। 

বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির ২৫ বিঘার বেশি জমি কিংবা সম্পত্তি থাকলে তিনি এই করের আওতাভুক্ত হবেন। 

৬. নিবন্ধন ও স্ট্যাম্প: নিবন্ধন ও স্ট্যাম্প থেকেও সরকার আয় করে থাকে। বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল করতে নিবন্ধন করতে হয়। বিভিন্ন দলিল, চিঠিপত্র, মামলার আবেদন, পাসপোর্ট অর্থাৎ স্ট্যাম্প যেসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় সেসব স্ট্যাম্ট বিক্রির মাধ্যমেও সরকারের আয় হয়। 

৭. সম্পূরক শুল্ক: সব ধরনের শুল্ক ও কর আরোপের পরেও অতিরিক্ত যে কর আরোপ করা হয় তাকে সম্পূরক শুল্ক বলা হয়। যেমন দামি গাড়ি, বিলাসবহুল পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে এ ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সরকার আমদানি পর্যায়ে ৭ হাজার ১৮৬ কোটি, স্থানীয় পর্যায়ে ২৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। 

 ৮. মাদক শুল্ক: দেশের ১৯৯০ সালের মাদক আইন অনুযায়ী সব ধরনের উৎপাদিত মদের ওপর মাদক শুল্ক আরোপ করা হয়। মাদক দ্রব্যের ওপর মূসব বা আবগারি শূল্ক প্রযোজ্য নয়। 

৯. ভ্রমণ কর: স্থল, আকাশ কিংবা নৌ পথে যতবারই দেশের বাইরে যান প্রতিবারই ভ্রমণ কর পরিশোধ করতে হবে। এই কর জন প্রতি সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে ৫ বছরের কম বয়সী, ক্যানসারে আক্রান্ত, বিমানের ক্রুসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এই করের আওতামুক্ত থাকবেন। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভ্রমণ কর হিসেবে ৬৬৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। 

এছাড়া কর বাহির্ভুত কিছু খাত থেকেও সরকার আয় করে থাকে। যেমন, রাষ্ট্রাত্ব খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ, সরকারি ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ, সরকারি ফি, জরিমানা, রেলওয়ে ও ডাক বিভাগ থেকেও সরকারের আয় হয়। 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/০৯.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:০২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit