মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন

আহসানের তৈরী রোবট কাজ করবে রেষ্টুরেন্টে, সারাবিশ্বে পরিচিত হবে বাংলাদেশ

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ৫ জুন, ২০২২
  • ১৭২ Time View
জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র ঘরের সন্তান আহসান হাবিব। সারাদিনের টিউশনি শেষে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে রাতে শুরু করেন গবেষণা। তার চিন্তা এমন কিছু বানাতে হবে, যা দিয়ে সারাবিশ্বের কাছে পরিচিত সে এবং তার বাংলাদেশ। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে মাথায় আসে সে একটি রোবট তৈরি করার। তার তৈরী রোবট ‘রেস্টুরেন্ট’ কাজ করবে । কিন্তু হাবিবের হাতে নেই টাকা। ছেলের এই আগ্রহ দেখে মা খালেদা বেগম ছেলের স্বপ্ন পুরুণ করতে অর্থ দেন। 

দীর্ঘ ২ বছর গবেষণা শেষে তৈরি করেছেন ‘রেস্টুরেন্টে কাজ করা এমন একটি রোবট!। শুধু তাই নয়, এই রোবট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপি’র নাম বলতে পাবেন। এছাড়াও বাংলা, ইংলিশে প্রশ্নের উত্তর ও হাত দিয়ে ভারি জিনিসপত্র বহন করতে পাবেন। হাত বাড়িয়ে হেনসাফ করতে পারবে। ইত্যিমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও রোবট তৈরি করেছেন এতে অনেকেই তার পরিবারকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। যদিও টাকা সংকটের কারণে এখনো রোবটি’র পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। হাবিবের টাকা সংগ্রহ হলেই আগামী তিন মাসের মধ্যে উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। 

তরুণ গবেষক আহসান হাবিবের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকায়। হাবিব কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মানবিক শাখায় পড়েন। তার বাবার নাম মৃত মজু মিয়া। পরিবারের দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে হাবিব সবার ছোট। জানাগেছে, হাবিব ছোট থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী। তাকে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অহংকার করতেন। ছোটবেলা থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নিন পড়ে থাকতেন। আহসান হাবিব অভাবী সংসারের পরিবারের সন্তান হওয়াতে বড় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া হয়নি ।  ২০১৭ সালের দিকে তুষভান্ডার আর এমএমপি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় পড়ার সুবাদে সে স্কুলের ফান্ডের টাকায় কাঠ দিয়ে একটি রোবট তৈরি করেন আহসান হাবিব। ওই সময় লালমনিরহাট জেলা বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মেলায় রোবটটি নিয়ে অংশ গ্রহণ করলে সে প্রথম হোন।

এর পরেই তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে আহসান হাবিবের বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার আহসান হাবিব ও তার বড় ভাই খাইরুল ইসলামের উপর সংসারের চাপ পড়েন। কিন্তু ছোট ভাইয়ের ইচ্ছে পুরুন করতে কোন কাজ করতে দেন না বড় ভাই। বাড়িতে কয়েকজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে পড়াশুনা করান হাবিব। যে টাকা আসতো সেটি দিয়ে বিভিন্ন সময় সার্কিটসহ রোবট তৈরির জিনিসপত্র কিনতেন হাবিব। এসব দেখে প্রতিবেশীরা হাবিবকে অনেকটাই পাগল বলতেন। ভাবতেন হাবিব টাকা গুলো নষ্ট করছেন।  কিন্তু হাবিব মানুষের কথা না শুনে তার গবেষণা চালিয়ে যান। দিনরাত পরিশ্রম করে গতসাপ্তাহে রোবটটি রেডি করেন হাবিব। যদিও টাকা সংকটের কারণে এখনো রোবটির পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। সামনের দিকে এগিয়ে আসা বা পিছিয়ে যাওয়া সব করতে পারে। এছাড়াও সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে রোবটটি। হাবিবের টাকা সংগ্রহ হলেই আগামী তিন মাসের মধ্যে উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।

প্রতিবেশীরা জানান, হাবিব যখন এসব তৈরি করতেন। তখন ভেবেছিল বাবা-মায়ের কাছে টাকা নষ্ট করছেন। কিন্তু এখন তাকে দেখে তাদের ভুল ভেঙেছে। হাবিবকে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্ব করছেন এলাকাবাসীরা। এলাকাবাসীর দাবি সরকারের পক্ষ থেকে যা করে তাকে পুরস্কৃত করা হোক। জাতীয় পর্যায়ে রোবটটি প্রদর্শনী করার অনুমতি দেয়া হোক। তাহলে মেধাবীরা একদিন মূল্যায়ন পাবে। আহসান হাবিবের শিক্ষক ইমান আলী জানান, হাবিবের এমন কান্ডে অনেক প্রতিবেশীরা তাকে পাগল বলতেন। কিন্তু আজ তারাই গর্ব নিয়ে কথা বলছেন। তাই শিক্ষার্থীদের মেধাকে মূল্যায়ন করা অনুরোধ করেন তিনি । তিনি আরো বলেন, হাবিব ছোট থেকেই অনেক মেধাবি ছিল। সব ধরণের পরীক্ষায় প্রথম হত। কিন্তু অভাবের কারণে বাহিরে পড়াশুনার করতে পারেনি। দেশের বাহিরে পড়াশুনা করলে দেশের নাম উজ্জ্বল করত। তাই দেশবাসিসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা কমনা করেন শিক্ষক।  

আহসান হাবিবেরর মা খালেদা বেগম বলেন,  হাবিবের বাবা চলে যাওয়ার পর সংসারের ভার তাদের উপর পড়ে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তার চিন্তা-ভাবনা তথ্য-প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তিতে আজ রোবট তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব করছে। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। দোয়া করি ছেলে আমার অনেক বড় হোক। তরুণ গবেষক আহসান হাবিব বলেন, সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করে দিতেই আমার এই প্রচেষ্টা।

এই কাজে সাহস যুগিয়েছেন আমার মা ও বড় ভাই।  আমার এই রোবটটি রেস্টুরেন্টে কাজ করবে। মানুষের সাথে কথা বলবে, ভারি খাবার নিয়ে যাবে। এছাড়াও যেকোনো প্রশ্নের উত্তর চাইলে বলে দিবে। যদিও এখনো আমি রোবটটির পুরোপুরি কাজ শেষ করেনি। অর্থের কারণে কাজ এখন বন্ধ রেখেছি, যে টাকা আয় করি সেটি দিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আশা করছি খুব দ্রুত মানুষের কাছে রোবটটি উন্মুক্ত করতে পারবো। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রীসহ দেশবাসীর কাছে আমি সহযোগীতা কামনা করছি।

কিউএনবি/আয়শা/০৫.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit