হিমেল চন্দ্র রায়,নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদে বাগান করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিদ্যালয়টির কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এলাকায় সবার নজর কেড়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে সেই বাগান দেখতে আসে অনেক মানুষ।স্কুলের ছাদে সারি সারি টব বসিয়ে সেখানে পরিচর্যা করে বেড়ে ওঠা গাছের ডালে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা প্রজাতির ফুল, ফল সবজি এবং ঔষুধী গাছ । স্কুলের ছাদবাগানের মনোরম সেই দৃশ্যটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে যেত উৎসুক মানুষজন। স্কুলের ছাদটি অযথা ফেলে না রেখে সেখানে বাগান করা সহ বিভিন্ন জাতের ফলমূল এবং তরিতরকারি আবাদ করা সম্ভব, সেটি প্রমাণ করে এলাকাবাসী সহ বিভিন্ন মহলে দৃষ্টান্ত নজির সৃষ্টি করে প্রমাণ করে দেখালেন পাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়।
তার এই ছাদবাগানের দৃষ্টান্ত দেখে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বাসার মালিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকগন তাদের ছাদে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়ের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।বিদ্যালয়টি ডোমার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয়ে বর্তমানে ১৮ জন শিক্ষক–কর্মচারীর এবং ৩২৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে।শুধু তাই নয় লেখাপড়ার দিক থেকেও পিছিয়ে নেই স্কুলটি। এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখার মানও অনেক উন্নত। হঠাৎ করে একদিন স্কুলের কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়ের মনে পরিকল্পনা জাগে স্কুলের ছাদটি ফেলে না রেখে বাগান হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না। সেই থেকে তিনি তার পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তারই ধারাবাহিকতায় আজ তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবে রুপ দান করেছে।
হঠাৎ করে ছাদে বাগান করার পরিকল্পনার বিষয়ে কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে কিছু আম গাছ ও কয়েকটি ফুলের চারা এনে স্কুলের ছাদে লাগিয়ে ছাদবাগানের অগ্রযাত্রা শুরু করি,আর আজ বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল, শাক-সবজি, ঔষধি ও বাহারি গাছসহ বাগানটিতে মোট ৫ শতাধিক গাছ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিমাসে বেতনের একটি অংশ দিয়ে বিভিন্ন জাতের গাছ কিনে রোপন করি। যখন ফুল-ফল ও বিভিন্ন গাছে ছাদ বাগানটি ভরপুর হয়ে যায় তখন মাঝেমধ্যে ছাত্রীদের নিয়ে আমার কৃষি ক্লাসটি ছাদেই নেয়ার চেষ্টা করি। ছাত্রীরাও খোলা আকাশে প্রকৃতির মাঝে ক্লাস করতে বেশ আগ্রহী। গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।এবিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আতিকা পারভিন জানান, অল্প জায়গায় শাক-সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের ফলমূল ও ঔষুধী গাছের যে চাষ করা যায় তারই একটি দৃষ্টান্ত উদাহরণ আমাদের স্কুলের এই ছাদবাগান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে আম, মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, কমলা, আঙ্গুর, আঁতা, বেল, বাঁতাবি লেবুসহ বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ রয়েছে। সেইসাথে ফুলের মধ্যে গোলাপ, চামেলী, চাঁপা, বেলী, গন্ধরাজ, চেরী, এ্যালমুন্ডা, কলাবতী ও টগর ফুলের গাছ। এছাড়াও ঔষুধী গাছের মধ্যে, তুলসী, থানকুচি, পুদিনা, ঘিতকুমারী,পাথরকুচি, আকন্দসহ বিভিন্ন ঔষুধী গাছ। সবজির মধ্যে করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পুঁইশাকও রয়েছে ছাদ বাগানটিতে। সেই সাথে বাড়তি দৃষ্টিনন্দন শোভাবর্ধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির পাতা বাহারের গাছগুলী।স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহনাজ আক্তার পুস্প ও সুমাইয়া আক্তার সুমা বলেন, স্কুলের ছাদ বাগানটি তাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশটাই পাল্টে দিয়েছে। ছাদ বাগানটি আমাদের অনেক ভালো লাগে বিশেষ করে যখন গাছে গাছে ফুল ও ফলে ভরে যায়। এটা দেখে তাদের মন খুশিতে আত্মহার হয়ে উঠে।
তারা আরো বলেন, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে আমরা যা পড়ছি বাগানে এসে তা আমরা সরাসরি শিখছি এবং এই শিক্ষা আমরা আমাদের বাসা বাড়িতে প্রয়োগ করে নিজেরা যেমন ফুল ফল এবং সবজির চাহিদা মেটাচ্ছি অন্যদিকে এগুলো বিক্রি করে আমরা আর্থিকভাবে ও স্বাবলম্বী হচ্ছি।সহকারী প্রধান শিক্ষক আইবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম বাগান করা হলে এতে মনের খোরাক যেমন জোটে তেমনি শিক্ষার্থীরাও এখান থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরনীকান্ত রায় বলেন, ছাদের উপর শিক্ষক সুকুমার রায়ের করা বাগানটি ফুলে-ফলে ভরে গেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ বিভিন্ন দর্শনার্থীরাও মাঝে মধ্যে এখানে বেড়াতে আসেন। সরকারী-বেসরকারী কোন সহায়তা পেলে আরো দূর্লভ গাছ এনে বাগানটির পরিধি বাড়ানো যেত। আমাদের কৃষি শিক্ষক সুকুমার স্যারের এই উদ্যোগ আমাদের স্কুলকে দারুন সুনামের দিকে নিয়ে গেছে।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার তাদের বিদ্যালয়ের ছাদ বাগানটি পরিদর্শন করেছি এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসি। কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়ের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কেউ চাইলে এটা করতে পারেন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
কিউএনবি/অনিমা/২৯.০৫.২০২২/দুপুর ২.১২