রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে- প্রশ্ন গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৯ মে, ২০২২
  • ১৬৬ Time View

ডেস্কনিউজঃ কেউ সন্তান হারা, কেউ স্বামী হারা, কেউ ভাই হারা, কেউ পিতা হারা। সাত-আট বছর ধরে তাদের কারো প্রিয় সন্তান, কারো পিতা, কারো স্বামী গুম অবস্থায় রয়েছেন।

আর কত দিন আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কান্না করে বলব যে, তাদেরকে ফেরত দিন, ফেরত দিন। আমাদের জীবনে হাসি নামক জিনিস উঠে গেছে। দিন যায়, রাত আসে। সর্বক্ষণ থাকি তাদের চিন্তায়।

শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে নাগরিক ঐক্য ও গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাক-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা এভাবেই আকুতি জানান।

মানববন্ধনে গুম হওয়া ৫৫ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। তারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। অনেকেই তাদের ছবি তুলে ধরে শুধু কাঁদছিলেন। অনুষ্ঠানস্হল পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ ঘিরে ছিল। এ সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছিল।

২০১৯ সালের ১৯ জুন মিরপুরের মাজার রোডের প্রথম কলোনির ২১-এ/ই, লালকুঠির বাসা থেকে সকাল ৯টায় বের হওয়ার পর থেকে ইসমাইল নিখোঁজ হন। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। পরদিন ছোট ভাই খায়রুল শাহআলী থানায় সাধারণ ডায়ারি করলেও এখনো পুলিশ কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।

র‌্যাব সদর দপ্তরের তত্কালীন কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এমআইএস শাখার একজন কর্মকর্তা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইসমাইলকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। ইসমাইল ছিলেন ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।

শাহবাগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে এসে ইসমাইলের মেয়ে আনিসা ইসলাম ইনসা বলে, ‘বাবা বেঁচে আছে কি না, কোথায় আছে সেটা আমরা জানতে চাই। বাবার অপেক্ষায়। এই মনে হয় দরজায় কড়া নেড়ে বাবা ডাকছে, ইনসা আমি এসেছি মামনি। দরজা খোলো। প্রধানমন্ত্রীও বাবা হারিয়েছেন। তিনি কী বুঝেন না, আমাদের আহাজারি। আর কত আমরা আর্তনাদ করব। কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ফরিয়াদ করব যে, বাবাকে ফিরিয়ে দেন, বাবাকে ফিরিয়ে দেন।’ এ সময় মানববন্ধনে আসা অনেকেই তার কথা শুনে চোখের জল আটকাতে পারেননি। অনেকেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

গুম হওয়া কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সেতুর স্ত্রী জিনিয়া বলেন, স্বামীর সন্ধানে সবার কাছে গিয়েছি। মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে পুলিশ ও র‌্যাবের দপ্তরে ধরনা দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। বিভিন্ন ব্যক্তি স্বামীকে উদ্ধার করার জন্য টাকা চেয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জনকে প্রায় ১ কোটি টাকা দিয়েছি। তার পরও স্বামীকে আজো পাইনি। এটা তো আমাদের সরকার। আমরা কেন গুম হব?

২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুকে ভাটারা থানাধীন বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ছয় বছর পরও তপু ফিরে আসেনি। গতকাল শাহবাগে ‘মায়ের ডাক’-এর মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন তপুর মা। তিনি বলেন, আমি তো আজো বিশ্বাস করতে পারি না যে আমাদের সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আমার ছেলে গুম হবে। আমি কার কাছে বিচার দিব? তপু কোনো দোষ করলে তার বিচার করুন। তাই বলে মায়ের আঁচল খালি করে রাখবেন না।

বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা চৌধুরী আলমের মেয়ে মাহফুজা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবাকে যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আমি তখন ছোট ছিলাম। এখন বড় হয়েছি। আমার বাবাকে আমি প্রত্যেক দিন স্বপ্নে দেখি। আমরা আর কত কাঁদব। আমার বাবাকে ১২ বছর আগে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়েছে। যারা ধরে নিয়ে গেছে তারা বলেছে যে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। আমরা তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছি যে, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও। কিন্তু, আমার বাবার তারা সন্ধান দিচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে এখন আইয়ামে জাহিলিয়াত বিরাজ করছে। এখানে মানবতা এবং মানবিক মর্যাদার কোনো স্থান নেই। আমরা এমন এক সরকারের আমলে বাস করি যে, কেঁদে মরে গেলেও তারা কোনো কথা শুনে না।

তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ থেকে ৬৪ জনের নাম প্রকাশ করে একটি তালিকা প্রকাশ করা হলো। জাতিসংঘ বলল যে, এসব ব্যক্তি বাংলাদেশের সমাজ-সংগঠনে নেই। তারা নিখোঁজ হয়েছে। তাদের খুঁজে পাচ্ছে না তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এ-ও বলেছে যে, তাদের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত রয়েছে বলে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, এখানে একজন উপস্থিত হয়ে বলেছেন যে, তার চৌদ্দপুরুষ আওয়ামী লীগ করে। তারা বাবা ও চাচা মুক্তিযোদ্ধা। তার পরেও তিনি গুমের শিকার হয়েছেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ফাইজুল হাকিম লালা বলেন, দেশের মানুষ যাতে শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে না পারে এজন্য অনেককেই গুম করা হয়েছে। সমাজে ভীতি ছড়ানোর জন্য মানুষের প্রতিবাদ স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে সরকার। তারা নির্লজ্জভাবে এই জঘন্য কাজে জনগণের রক্তঘামে উপার্জিত অর্থে লালিত পালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে মাইকেল চাকমাকে গুম করা হয়েছে। এখনো তার পরিবার তাকে ফিরে পাইনি। মাইকেল চাকমার মা কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেছেন। মাইকেল চাকমার অপরাধ কী ছিল? তার অপরাধ ছিল যে, তিনি পার্বত্য জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলতেন।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া কাওসারের ছোট মেয়ে লামিয়া এবং বাপ্পীর বোন ঝুমুর বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা।

কিউএনবি/বিপুল/২৮.০৫.২০২২/ রাত ১১.৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit