সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
  • ২১৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগ বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে প্রস্তাবিত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই চট্টগ্রাম বিভাগে। এই ঝুঁকি কমাতে বিনিয়োগকারী দেশগুলোকে নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন। অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালে যুক্ত হন মার্কেট ফোর্সেস নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ানমার্ক ভিনসেন্ট ও জকেসাসের প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর ইউকি তানবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)’র পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত প্রতিবেদনে অঞ্চলভিত্তিক গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিশাল নির্মাণ প্রকল্পগুলো স্থানীয় বাস্তুবিদ্যা, জলপথ, জনমানব ও জীবিকা, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ুর জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ঘটাবে। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কারণে বায়ুমণ্ডলে এক দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন সমতুল্য কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়বে। মাতারবাড়ি দুই জাপানি প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত একটি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা যুক্তিযুক্তভাবে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা। মাতারবাড়ি ১ ও ২ যদি নির্মিত হয়, এই প্রকল্পের বায়ুদূষণের কারণে আনুমানিক ছয় হাজার সাতশ জনের অকাল মৃত্যু ঘটাবে। এই প্রকল্পটি বিদেশি কয়লা অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য জাপানের ২০২১ জি-৭ প্রতিশ্রুতিরও বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এরই মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ওভার ক্যাপাসিটির সমস্যা রয়েছে। ২০২০-২০২১ সালে সক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়নি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) অনুসারে, গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রকৃত চাহিদার মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের এই বিশাল সম্প্রসারণ প্রধানতঃ জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে নির্মিত বা অর্থায়ন করা হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমানোর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ করা উচিত, বেসরকারি খাতে করা উচিত, বাইরের দেশগুলোকে এই খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের বিনিয়োগের অর্থ জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরিতে না করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করুন।  

এসব বিনিয়োগের মধ্যে চীনের রয়েছে তিনটি পরিকল্পনা, ভারতের একটি, ইন্দোনেশিয়ার একটি, জাপানের ১৪টি, সিঙ্গাপুরের একটি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি পরিকল্পনা রয়েছে। এই দেশগুলোকে অনুরোধ করতে হবে। যে বিনিয়োগ আপনারা বিদ্যুৎ খাতের জন্য বাংলাদেশে করতে চান, এই বিনিয়োগই বিদ্যুৎ খাতের জন্য করুন, তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা একদিকে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্য এবং বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করছি, অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণ আরো বাড়ছে, এমন ধরনের জ্বালানির দিকে আমরা এগোচ্ছি। অর্থাৎ একদিকে বলছি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার কথা, অন্যদিকে কাজ করছি কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির। যা স্ববিরোধী অবস্থান।  

তিনি আরো বলেন, সরকারকে যেটা করতে হবে তা হলো, সরকার যেটা ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম কিংবা কপ-২৬ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০৪১ সালের ভেতরে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা যদি সেদিকে যেতে চাই, আর মাত্র ১৭ বছর রয়েছে। এই ১৭ বছরে ৩ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নিতে হলে ব্যাপক ভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে। সিপিডির গবেষণা বিভাগের প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ খাত এমন একটি খাত, যে খাতে সরকারকে একক অবস্থানে থেকে পুরো বিষয়টাকে পরিবর্তন করা অসম্ভব। এ খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক অবস্থান রয়েছে। এ খাতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। যেন আমরা ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে পারি। জলবায়ু সম্মেলনে তারা কমিটি করেছে, তারা কিন্তু বলেছে যে, এ খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে আনবে। এখন দেখবার সময় এসেছে, এই দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি কাঠামোতে এই পরিবর্তনগুলো আনছে কিনা।

বিনিয়োগকারী দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, যেসব দেশ আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে, তারা বিনিয়োগ করবেই। কিন্তু সরকারকেই সেটা চাইতে হবে যে, তারা কোথায় বিনিয়োগ করবে। দূষণ ভিত্তিক শিল্পায়ন বাদ দিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সরকার যেন শিল্পায়নের দিকে যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যায়, আমরা সে অনুরোধ করছি।

 

কিউএনবি/আয়শা/১৬.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit