রত্নগর্ভা মা ২০২১ : অভিনন্দন মা, তোমাকে
————————————————————–
আমার মা,লতিফা খানম। অনেকে কোহিনূর নামে তাকে চিনেন। তিনি বাবার মতন সেলিব্রিটি নন।
সাধারণ, চুপচাপ ধরনের, নিভৃতচারী,কষ্টসহিষ্ণু ও প্রচন্ড আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন মানুষ। বাবা (ড.হুমায়ুন আজাদ) ছিলেন প্রচন্ড মেজাজী আর মা পুরো ঠান্ডা পানি। মার কাছ থেকে কখনো মারধর তো দূরের কথা বকা খেয়েছি বলেও আমার মনে পড়ে না।
অনেক সেলিব্রিটিদের wife রা যেমন খুব Show off করতে চান। স্বামীর নাম কাজে লাগিয়ে কোন সুযোগ, সুবিধা নিতে আগ্রহী হন আমার মা তাদের থেকে অনেক অনেক দূরে।
মনে পড়ে,বাবা যখন থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তখন তিনি ফোনে দেশ-বিদেশে অনেকর সাথে কথা বলেন,তার ফলে আমাদের কাছে বিরাট অংকের ফোনের বিল পরিশোধ করতে বলা হয়। এ অবস্থায় হয়তো অন্য সেলিব্রিটি র Wifeরা প্রচুর টাকা থাকা সত্ত্বেও অন্যকারো কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাইতেন কিন্তু আমার মা তা করলেন না। মা বললেন ‘হুমায়ুন আজাদ’ অনেক অর্থের মালিক ছিলেননা ঠিক, কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় একাকী থাইল্যান্ডে ছিলেন তাই হয়তো তাঁর একটু ভালো লাগার জন্য অনেকের সাথে কথা বলেছেন ,তাই আমিই টাকা পরিশোধ করব,কারো সাহায্য লাগবে না।’
মা Cancer এ আক্রান্ত হলেন, অনেকে বললেন ‘ আপনি বিখ্যাত ব্যক্তির Wife, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করুন, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন’। মা তাও করলেন না। নিজের পেনশনের টাকা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করালেন।
কে না জানেন,বাবা তাঁর লেখা অসাধারণ সব বই ছাড়া আমাদের জন্য আর্থিক তেমন সুযোগ সুবিধা রেখে যাননি। তিনি সবসময় বলতেন আমার পরিচিতিই একদিন তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। তাই বাবার মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ছেড়ে দিতে হল।
আত্মীয় স্বজন রা এসে বললেন মিরপুরের দিকে বাসা ভাড়া কম, ঐদিকে ভাড়া বাসা খুঁজতে পারেন। মা কারো কথার জবাব না দিয়ে Central Road এ বড় একটা বাসা ভাড়া করে ফেললেন,বললেন, আমার ছেলেমেয়েদের ফুলার রোডে বড় বাসায় থাকার অভ্যাস ,ওদের আমি আগের মতই রাখব’।
বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা তিনভাইবোন একটু হিসাব করেই চলতাম। খরচ কমানোর চেষ্টায় থাকতাম। ওমা! একদিন মা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসে যেতে বললেন। আমরা বললাম কী দরকার বাড়তি খরচ। মা বললেন তোমাদের নিয়ে এই গরমে দার্জিলিংয়ে যাব, এটা আমার কাছে খরচ নয়, আনন্দ’।
মাকে বললাম, মা, কেন তুমি এতো কিছু কর আমাদের জন্য? মা বললেন ‘ তোমাদের বাবা হুমায়ুন আজাদ এর বই ছাড়া বুকের মাঝে সবসময় তোমরা তিনজন ছিলে, একথা তোমাদের বাবা আমাকে সবসময় বলতেন তাই তোমাদের আনন্দে রাখতে চাই। এ আমার দায়িত্ব’।
মায়ের কথা শুনে আমাদের চোখে জল আসে। আমাদের চরম খারাপ অবস্থায় অনেক আত্মীয় স্বজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমাদের নিয়ে নানা বাজে কথা বলেছেন। মা শুধু একটিই কথা বলতেন ‘তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াও, আর যদি সলভেনট হতে পার তবে অন্যকে সাহায্য কর’। মায়ের কথা সামান্য বোধহয় রাখতে পেরেছি। যারা আমাকে খুব কাছ থেকে চিনেন তারা জানেন আমার বেতন/সম্মানি নিজের জন্য কিছু রেখে ভাগ ভাগ করে দিয়ে দেই SOS, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে বা হিজরাদের কোন প্রতিষ্ঠানে ( এসব আমার প্রিয় জায়গা)।
ছোটভাই Ananya কেও মোটামুটি সবাই চিনেন, বোধকরি সবচেয়ে কম চিনেন আমার ছোটবোন Smita কে। আমি ও Ananya যেমন Extrovert ও সেই রকমের Introvert.তাই DU’র এমবিএ’র Kabir gold medal পাওয়া মেয়েটি সবসময় আড়ালে থাকে।
এই মাত্র চিঠি হাতে পেলাম। আমার মা Azad Products Ratnogarva Award 2021 এর ”রত্নগর্ভা মা” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৮ই মে বিশ্ব মা দিবসে Dhaka Club এ আমার মাকে সম্মাননা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন Dr.Shirin Sharmin Chaudhury,MP, Honorable Speaker of Bangladesh Parliament.
মা তোমাকে সালাম, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এবারের মা দিবসে এটা হবে আমাদের তিনভাইবোনের পক্ষ থেকে তোমার উপহার।
বন্ধুরা, আমার মায়ের জন্য শুভকামনা রেখো,,,
আমাদের কথাঃ কুইকনিউজবিডি.কমে ফেসবুক কর্নার নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন ফেসবুক টাইমলাইনে অনেকেই জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে থাকেন। আমরা সে খন্ডচিত্র গুলোকে জোড়া দেয়ার চেষ্টা করছি। এখন থেকে ফেসবুক কর্নার নামের এই বিভাগে নিয়মিতভাবে অনেকের জীবনের খন্ডচিত্র তুলে ধরা হবে।
আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক, প্রথিতযশা কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক,সাড়াজাগানো অসংখ্য গ্রন্থ প্রণেতা, ড.হুমায়ূন আজাদ তনয়া মৌলি আজাদ এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে উপরোক্ত পোস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। মৌলি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে কর্মরত।
কিউএনবি/বিপুল/ ০৬ মে ২০২২খ্রিস্টাব্দ/ রাত ১০.১০