মো: সালাহউদ্দিন আহমেদ : নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের তারা মিয়ার ছিলেন আবুল কাশেম একজন মস্তিস্ক বিকৃত মানসিক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে শিকল পড়িয়ে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। যাতে করে সে হারিয়ে না যায় এবং মানুষের ক্ষতি না করতে পারে। চোখের সামনে ছেলের এমন কষ্ট দেখেও অনেকটা বাধ্য হয়ে সব কিছু মেনে নিচ্ছে তার বাবা-মা। জানা যায়, সে প্রায় আট বছর যাবত সে গৃহ হীন, আম গাছের সাথে দুটি হাত লোহার শিকলে বাঁধাবস্হায় জীবন যাপন করে আসছে।গা বস্ত্রহীন পড়নে অর্ধউলঙ্গ, বালুচর, নোংরা লুঙ্গি, মাথায় যেন , অনিদ্রা অনাহারে কাটে দিন রাত। বাড়ির পাশে তার বন্ধুত্ব ও স্হায়ী বসবাস আমগাছের ছায়া তলে।প্রখর সূর্য তাপ প্রবল ঝড়বৃষ্টি ও শীতের পরশের একমাত্র আশ্রয় স্থান এ গাছ তলায়।
অপরিচ্ছন্ন সিলভারের একটি বাটিতে ভাত খেয়ে অভ্যাস,যেথায় তার হাত মুখ ধৌত করার মনে হয় কোন সুযোগ নেই। গাছের তলায় লোহার শিকলে বাঁধা অনাহারে, অর্ধাহারে, গোসলবিহীন, অপরিচ্ছন্ন দিন যাপন করলেও মস্তিষ্ক বিকৃতি ব্যতিত তার অন্য আর কোন রোগ বালাই নেই।ইচ্ছে হলে বেশ খাবার খায়,আবার ভুক্তাবস্থায়ও কেউ খাবা দিলে তা বিড়াল কুকুরকে খাওয়ায়।কারো প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধাবরন আবার কাউকে বকাবকি করে দূরে তাড়িয়ে দেয়। স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল আবুল কাসেম। ১৯৯৮ইং সনে এস,এস সি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করে। পিতার আশা মেধাবী ছাত্র বিধায় কায়ক্লেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে এ পুত্র সংসারে একদিন হাল ধরার কান্ডারী হবে।কিন্তু বিধি বাম,কলেজে ভর্তি হবার প্রাক্কালে কাসেমের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। বহু বৈদ্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করেছেন,কিন্তু কোন ফল হয়নি।
কাসেমের মেজাজ কোন অছিলায় খারাপ হলে সে চেনা অচেনা মানুষের সাথে মারমুখী আচরণ করতঃ মারধর ও করে থাকে। এমনি অবস্থায় কাসেম কোথাও কোন অঘটন ঘটাতে পারে বলে অনেকের পরামর্শ সাপেক্ষে লৌহ নির্মিত শিকল দিয়ে বারান্দায় একটি আম গাছে তার সময় কাটানোর স্হায়ী স্হান করে দিয়েছে। কাসেমের পিতা তারা মিয়া নিম্নআয়ের মানুষ শ্রমের বিনিময়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করলেও অন্যের কাছে হাত পাতার মানুষিকতা নেই। হেনাবস্হায় যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তিবৃন্দ পাগল কাসেমের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে চিকিৎসার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে বিনিময়ে কাসেম সুস্থ হয়ে পুনঃ একটি সুন্দর জীবন ফিরে পেতে পারে বলে বিজ্ঞজনের ধারণা। কিন্তু এ মর্মে হেন পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় বলে পিতা তারা মিয়ার অনুমতিক্রমে এ ক্ষুদ্র লিখন।আশা কোন রিদয়বান ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় কাসেম তার অতীত জীবন ফিরে পেলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মানবতার।
মাছিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন জানান ব্যয়বহুল চিকিৎসা করারমত আর্থিক সামর্থ তার পরিবারের নেই। ভাল চিকিৎসা হলে কাসেম ভাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। শিবপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মাহমুদুর রহমান জানান কাসেমের চিকিৎসার জন্য তাকে মানসিক ডাক্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে।এ সুযোগ তার নেই। তবে সে প্রতিবন্ধী হলে তার অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার সুযোগ আছে।
কিউএনবি/আয়শা/৬ই মে, ২০২২/১৮ বৈশাখ, ১৪২৯/বিকাল ৩:৪৮