বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ফাঁসের ভয়ে সাংবাদিককে মারধর

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৩৫ Time View

 

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়ন চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ও হাইমচর উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের সীমানা ঘেষে অবস্থিত। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নে প্রশাসনের যাতায়াত নেই বললেই চলে। সেই ইউনিয়নের বেশীরভাগ মানুষই সাদাসিদে, সহজ সরল, নিরক্ষর ও দিন মজুর প্রকৃতির। আর সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, মাকদ ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ শাহাজালাল মাল। তিনি একটি সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার নির্দেশে ওই সন্ত্রাসী বাহীনি মগের রাজত্ব কায়েম করে।

ভিজিডি, ভিজিএফ, জেলেদের বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করা তার নিয়মিত কাজ। বিদ্যুৎ পাইয়ে দেয়ার নামে ওই চেয়ারম্যন, তার ভাই-ব্রাদার ও লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকাবাসীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় মোশারফ মোল্যা (৬০) কে চাঁদাদাবীতে গ্রাম পুলিশ দিয়ে ধরে পরিষদে এনে বেদম মারধর করে। একই দাবীতে ইছব আলী মাল নামে আরো একজনকেও মারধর করে। রাতের আঁধারে জেলে কার্ডের চাল বাহিরে বিক্রি করে দেয় সে। মুখ খুলে কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এই সকল বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করে সাংবাদিকরা। তার পর থেকেই তিনি সাংবাদিকদের নাম শুনলেই হোচট খায়।

এবার তিনি তার ইউনিয়নের গোপানী এলাকায় প্রায় ৪০ একর খাস জমি দখল করে অবৈধ মৎস্য খামার (মাছ চাষের ঘের) তৈরীর কাজ শুরু করে। মৎস্য খামার তৈরী করতে গিয়ে সেখানে বসবাসরত ১০/১২টি পরিবার উচ্ছেদ করার জন্য বল প্রয়োগ করেছেন। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে সকল পরিবার এখনও ৫০/৬০ বছরের বসত বাড়ির মায়া ছাড়তে পারেনি তাদের বাড়ি-ঘর ভেক্যু দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে এই চেয়ারম্যান। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দৈনিক হুংকার পত্রিকার যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল এস (বেসরকারী টেলিভিশন), দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকা ও কুইক নিউজের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি খোরশেদ আলম বাবুল, বাংলা ট্রিবিউন ও দীপ্ত টেলিভিশন প্রতিনিধি রাজিব হোসেন রাজন এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলা চ্যানেল এস প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ঢালী ঘটনাস্থলে যায়।

সাংবাদিকদের সংগ্রহীত তথ্য দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের কাল হতে পারে ভেবে তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার পথে মাল বাজার ব্রিজের ঢালে চেয়ারম্যান শাহজালাল মাল, তার ভাই মিন্টু মাল ২০/২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে ফ্লিমি স্টাইলে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে। সাংবাদিকদের পেটাতে থাকে আর বলতে থাকে তোদের জন্য আমার অনেক মানসম্পান নষ্ট হয়েছে। তোদের মেরে ফেলার জন্য ২ কোটি টাকা বাজেট রেখেছি। আজ তোদের মেরে ফেলা হবে। তখন সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম দৌঁড়ে পালাতে সক্ষম হয়, সাংবাদিক রাজিব হোসেন রাজনকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।

আর খোরশেদ আলম বাবুল দৌঁড়ে পালাতে চেষ্টা করলে তাকে বেড় দিয়ে গাছের কাঁচা ডাল, চলা, লোহার রড দিয়ে তিন দফায় পেটায়। সংগৃহীত তথ্য লোপাট করার জন্য সাংবাদিকদের সাথে থাকা একটি গোপন ক্যামের, একটি পেশদারিত্ব ক্যানন ক্যামের, দুইটি মোবাইল, টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ছিরে ফেলা হয় গায়ের পোশাক। মোবাইলে সংগৃহিত সকল তথ্য মুছে দিয়ে মোবাইল ফোন ফেলে গেলেও দুইটি ক্যামেরা ও টাকা নিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।

সাংবাদিক রাজিব হোসেন রাজন জানায়, চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের গতি রোধ করে। প্রথমে আমার মোবাইল ও ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। সেখান থেকে উঠে দেখি সহকর্মী সাংবাদিক খোরশেদ আলম বাবুলকে সন্ত্রাসীরা এমন ভবে পেটাচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। পরে সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে চলে গেলে খোরশেদ আলম বাবুলকে প্রথমে থানায় নিয়ে আসি এবং পরে হাসপাতালে ভর্তি করি।

খোরশেদ আলম বাবুল তার সাথে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার রাস্তায় চেয়ারম্যান ও তার ভাই মিন্টু মাল দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের মটরসাইকেলের গতি রোধ করে জিজ্ঞেস করে তুই বাবুল না? তুই আমার বউর ছবি তুলছিস কেন? এই কথা বলেই আমাকে মোটরসাইকেল থেকে টেনে হিছড়ে নামিয়ে ফেলে। পাশে ওঁৎপেতে থাকা ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী তাদের হাতে থাকা গাছের ডাল, কাঠচেড়া (চলা) ও লোহার রড গিয়ে পেটায়। অনেকে আবার কিল, ঘুশি ও লাথি মারে। কেউ আমার গায়ে থাকা জ্যাকেট ও প্যান্ট টেনে ছিয়ে ফেলে। কেউ আমার মাথায় থাকা হেলমেট পিটিয়ে ভাঙ্গে এবং চোখে থাকা চশমা ভাঙ্গে, কেউ ভাঙ্গে আইটিকার্ড। সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহ হয়তো তা চায়নি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে ফিরেছি।

সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান এমন হিং¯্র প্রকৃতির তা আগে জানা ছিল না। তার অপকর্ম ও দূর্নীতি আড়াল করতে অমানবিক ভাবে সে ও তার সন্ত্রাসী বাহীনি আমাদের উপর এই সন্ত্রাসী হামলা করে। শাহাজালাল মাল ও তার ভাই মিন্টু মালের নাম উল্লেখ করে সখিপুর থানায় মামলা করেছি। এই বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাউন কবির মোল্যা বলেন, চেয়ারম্যান তার অপকর্ম আড়াল করতে সাংবাদিকদের উপর যে হামলা করেছে তা খুবই দুঃখজনক। এই হামলার প্রতিবাদ ও তিব্র নিন্দা জানাই। সখিপুর থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক আলতাফ বলেন, ঘটনা তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit