এস.কে হিমেল,নীলফামারী : শখ করেই দৌড়াতেন নীলফামারী সরকারি কলেজ এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নুরুল করিম। ভোরে দৌড় শুরু করতেন। সূর্য আকাশে ওঠা পর্যন্ত দৌড়াতেন। এভাবে করতে করতে এক সময় প্রতিদিন সকালবেলা দৌড়টা নেশায় পরিণত হয় নুরুল করিমের। অবশেষে সেই নেশা থেকেই সফল ঘটিয়ে ফেললেন নীলফামারী সরকারি কলেজের এই সহকারী অধ্যাপক। ২০২১ সালের শেষ দিন ভোরে সূর্য ওঠার আগে দৌড় শুরু করলেন তিনি। একটানা দৌড়ালেন ৫০ কিলোমিটার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মরণীয় করে রাখতেই ব্যক্তিগত এই উদ্যোগ। ৫০ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করার পর এই অর্জনকে তিনি উৎসর্গ করলেন মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ২৯তম বিসিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন। পোস্টিং হয় নীলফামারী সরকারি কলেজে। একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নানা এক্সট্রা কারিকুলামে কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন নুরুল করিম। খেলাধুলার পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজে এবং শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নীলফামারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর জন্য ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে থাকে এবং পরীক্ষায় টিকে তারা ভর্তি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে।
কিন্তু করোনাকালে একদিন সকালবেলা স্রেফ মানসিক শান্তির জন্য দৌড় শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে প্রতিদিন সকালে দৌড় দেয়াটা তার নেশায় পরিণত হয়। এরপর নুরুল করিম পরিকল্পনা করলেন, দেশ যখন নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, তখন তিনি তার নেশায় পরিণত হওয়া দৌড় দিয়েই একে উদযাপন করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের বছরের শেষ দিনটাকে বেছে নিলেন। ভোর ৬টায় নীলফামারীর চৌরংগী থেকে দৌড় শুরু করে নীলসাগর রোড হয়ে দেবীগঞ্জ পেরিয়ে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাছাকাছি গিয়ে থামলেন। মোট ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। দৌড়ের সময় এবং দূরত্বের হিসাব করার জন্য তিনি স্ট্রাভা (Strava) নামক অ্যাপস ব্যবহার করেন।
এই প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন দিলেও নুরুল করিম ২০২১ সালে নিয়মিত দৌড়ে মোট ২২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। অর্থাৎ গড়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার। নীলফামারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক নুরুল করিম বলেন, ‘আমি মূলত মানসিক শান্তির জন্যই শখ করে দৌড় দেওয়ার অভ্যাসটা শুরু করেছিলাম। ফলে শরীর, মন এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে। করোনাকালে নিয়মিত দৌড় দেয়া শুরু করি। এরপর কখন যে এটা নেশায় পরিণত হয়েছে তা বুঝতেই পারিনি। যখন দেখলাম, নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সবাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন চিন্তা করলাম, ৫০ কিলোমিটার দৌড় দিয়েই আমিও এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারি। সে কারণেই ৫০ কিলোটিমারের লম্বা এই দৌড় দিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার আশা পূর্ণ হলো।’কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে এক দৌড়ে পার করতে চান নুরুল করিম। তবে যেহেতু মেরিন ড্রাইভের দৈর্ঘ্য যেহেতু প্রায় ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি, এ কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে যতটুকু অনুমতি দেয়, হোক সেটা ৫০ কিংবা এর বেশি যতটুকু, ততটুকু দৌড়ে পার হতে চান তিনি।
কিউএনবি/আয়শা/৫ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৩৯