বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন

শীতের তীব্রতা আঘাত হানছে জীবিকায়

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১১৯ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : পৌষের দাপটে কাঁপছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ঘন কুয়াশা আর উত্তরে ঠাণ্ডা বাতাসে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড়ের প্রায় ২০ হাজার পাথর শ্রমিক। নদীর বরফশীতল জলে নেমে পাথর তুলতে পারছেন না তাঁরা। তাই দিন এনে দিন খাওয়া এই শ্রমিকরা চরম সংকটে পড়েছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার নিমনগর এলাকার পাথর শ্রমিক মানিক হোসেন। বাড়ির পাশের করতোয়া নদীর পানি থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। শীতের তীব্রতা আঘাত করেছে তাঁর জীবিকায়। বরফের মতো ঠাণ্ডা পানিতে নেমে পাথর তুলতে পারছেন না তিনি। যেদিন সূর্যের তেজ একটু বেশি থাকে সেদিন নদীতে নামতে পারেন। তাও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পানি থেকে উঠে পড়তে হয়। আর অন্য দিনগুলো বসেই থাকতে হয়। শুধু মানিক নন, এই অবস্থা পঞ্চগড়ের প্রায় ২০ হাজার পাথর শ্রমিকের। যুগ যুগ ধরে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করে আসা এই শ্রমিকদের জীবনে দুর্ভোগের ঋতু হলো শীতকাল। পৌষ মাঘে তাঁদের একপ্রকার বসেই কাটাতে হয়। এই সময়ে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করেন। ধারদেনা করে চলে তাঁদের সংসার। সরকারি তেমন কোনো সহযোগিতাও জোটে না তাঁদের ভাগ্যে।

মানিক হোসেন বলেন, ‘শীত এলেই আমাদের কষ্ট বাড়ে। কয়েক দিন ধরে ঠাণ্ডা আরো বেড়ে গেছে। কুয়াশার সাথে ঠাণ্ডা বাতাসে বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। আমরা একত্রে চার-পাঁচজন মিলে পাথর তুলি। ঠাণ্ডার কারণে আজ এখনো কেউ আসেনি। আমি নদীর তীরে বসে সকাল থেকে অপেক্ষা করছি সূর্যের। সূর্যের দেখা পেলে নদীতে নামব। তা না হলে নামা সম্ভব নয়। পানি অনেক অনেক ঠাণ্ডা। শীতের দুই-তিন মাস আমাদের বেশির ভাগ সময় বসে কাটাতে হয়। খুব কষ্টে পড়ে যাই আমরা। কোনো সরকারি সহযোগিতাও আমাদের ভাগ্যে মেলে না। একটি শীতবস্ত্রও কেউ দেয়নি।’তাঁর মতো মোস্তফা নামের আরেক পাথর শ্রমিক বলেন, অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু শীত এলেই আমাদের বসে থাকতে হয়। সরকার যদি এই দুই মাস আমাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করত, আমার মতো হাজার হাজার পাথর শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারত।’

হিমালয়ের কাছে হওয়ায় পঞ্চগড়ে বরাবরই শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকে। বেশির ভাগ সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে এই জনপদে। এবার পৌষের শুরু থেকেই শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। সোমবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন দিনে অল্প সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও তাতে কাঙ্ক্ষিত উত্তাপ মিলছে না। বিকেল গড়াতেই কুয়াশাপাত শুরু হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বাড়ছে ঠাণ্ডার পরিমাণও। মাঝরাতে ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরে হিমশীতল ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। সকালে কখনো ১০টা কখনো ১১টায় সূর্যের দেখা মিলছে। অনেকেই সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার সরকারি-বেসরকারিভাবে ৩৩ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা জেলার বিরাট অঙ্কের দরিদ্র অসহায় শীতার্তের জন্য যতেষ্ট নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একটু বাড়লেও উত্তরে ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এখন দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধানও কমে এসেছে। সামনে শীতের তীব্রতা আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পাথর শ্রমিকদের তালিকা করে তাদের মাঝে শীতবস্ত্র ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। তাদের তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। এর পাশাপাশি তাদের জন্য এই কয়েক মাসে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথও খোঁজা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৩ হাজার শীতবস্ত্র আমরা দিয়েছি।’

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩রা জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৫৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit