রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

ইসরায়েলের ফেলা যে অবিস্ফোরিত বোমা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আমেরিকা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলি আগ্রাসনে লেবাননে ফেলা একটি অবিস্ফোরিত মার্কিন বোমা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি এখন চরম মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার। তাই তড়িঘড়ি বোমাটি ফেরত আনুষ্ঠানিকভাবে লেবাননের সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিক্ষেপ করা বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় অক্ষত অবস্থায় সেটি উদ্ধার করেছে লেবাননের সেনাবাহিনী। আর তাতেই অস্বস্তিতে পড়েছে মার্কিন সরকার। 

অব্যবহৃত বোমাটি আপাতত লেবানন সরকারের হেফাজতে। এর ফলে ঘুম হারাম ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের। অক্ষত বোমাটি চীন কিংবা রাশিয়ার হাতে পড়লে প্রযুক্তি ‘চুরি’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পেন্টাগন। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইরান সমর্থিত। তাই বোমাটি ইরানের কাছে হস্তান্তরিত হোক সেটিও চায় যুক্তরাষ্ট্র।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিস্ফোরিত বোমাটি ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে লেবানন সরকারে সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমেরিকার দাবি, প্রতিপক্ষেরা যদি এই যুদ্ধাস্ত্রের নকশা পড়ে ফেলতে বা বিপরীত-প্রকৌশল (রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় তবে তা নিরাপত্তা ঝুঁকিকে মারাত্মক করে তুলতে পারে।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। সেই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল জিবিইউ-৩৯বি মডেলের একটি স্মার্ট গ্লাইড বোমা। সেই বোমাটিই ঘুম উড়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষের। অজ্ঞাত কারণে বোমাটি বিস্ফোরিত না হয়ে অক্ষত অবস্থায় লেবাননের হাতে চলে যাওয়ায় রক্তচাপ বেড়েছে ওয়াশিংটনের।

যদিও লেবানন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি যে, বোমাটি তাদের হেফাজতেই রয়েছে। এমনকি তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুরোধ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। লেবাননের সরকারি কর্তারা আপাতত এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি বৈরুত।

জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ বৈরুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আবিব। দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত হারাত হেরেইক জেলায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। হিজবুল্লাহর সামরিক কমান্ডার আলি তাবাতাবাইকে হত্যার জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি জিবিইউ-৩৯বি বোমাটি ব্যবহার করে ইসরায়েল।

এই ছোট ব্যাসের বোমাটির নির্মাতা হল মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা বোয়িং। গ্লাইড বোমাটি একবার উৎক্ষেপণের পর ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেসে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। নিজস্ব ইঞ্জিন না থাকার কারণে অস্ত্রটি তুলনামূলকভাবে সস্তা। খরচ পড়ে ৫০ হাজার ডলার।

প্রায় ১১০ কেজি ওজনের বোমাটি এক টনের একটি মার্ক ৮৪ বোমার পরিবর্তে চারটি বিস্ফোরক অস্ত্র নিয়ে ‘উড়তে’ সক্ষম। প্রতিটি স্মার্ট-ক্যারেজ র‍্যাক ২৫০ পাউন্ড ওজনের চারটি অস্ত্র ধারণ করতে পারে। ফলে বোমাটি একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এতে থাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক সিস্টেম, যাতে অ্যাক্সিলোমিটার এবং জাইরোস্কোপের মতো সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে কোনও যান বা বস্তুর গতি, অবস্থান এবং দিক পরিবর্তন ক্রমাগত নিরীক্ষণ করতে পারে অস্ত্রটি।

জিপিএস-নির্ভর এই বোমাটিকে দিন বা রাতে ব্যবহার করা সম্ভব। সমস্ত ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৭৪ কিলোমিটার) দূর থেকেও লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে এটি। ইসরায়েল ২০১০ সাল থেকে গাজা এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযানে এই ধরনের বোমা ব্যবহার করে আসছে।

দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলার দায় চেপেছে ইসরায়েলের কাঁধে। গাজার মতোই লেবাননেও সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ধারাবাহিক হামলার অভিযোগ উঠেছে তেল আবিবের বিরুদ্ধে। এমনকি পশ্চিম এশিয়ার এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় জাতিসংঘকে।

সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়ায় জাতিসংঘ এবং ইসরায়েল। লেবাননে হামলাকারী ইসরায়েলি ড্রোনের উপর গুলিবর্ষণ করে জাতিসংঘ পরিচালিত আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীও। সাম্প্রতিক সময়ে যা নজিরবিহীন ঘটনা।

অনেকেই মনে করছেন, কূটনৈতিকভাবে সমঝোতা না হলে, লেবাননে যে রকম হামলা জারি রেখেছে ইসরায়েল, সে রকমই হামলা চালিয়ে যাবে তারা। হিজবুল্লাহকে আর কোনওভাবেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননে বারবার হামলা চালাচ্ছে ইহুদিবাদী সেনারা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পরই দক্ষিণ লেবাননে সক্রিয় সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ তেল আবিবের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিল। তারপর এক বছর ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আমেরিকা এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে অভিযোগ করেছিল জাতিসংঘ। সংঘর্ষবিরতি চুক্তির পরেও ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লেবানন সরকারের অভিযোগ, দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ভূখণ্ডের পাঁচটি সামরিক কৌশলগত অবস্থান এখনও দখলে রেখেছে ইসরায়েলি সেনা।

সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মার্কিন বোমা নিয়ে টানাপড়েন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পালে হাওয়া দিতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ককে আমেরিকা আরও জটিল করে তুলতে পারে, এমনটাই মত তাদের। তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট মনিটরডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া

কিউএনবি/অনিমা/৭ ডিসেম্বর ২০২৫/বিকাল ৫:৩৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit