বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২২ অপরাহ্ন

সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ও বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার ইঙ্গিত

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কঠোর প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাক প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সবার সম্মিলিত সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

রোববার (৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. মনির হোসেন সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভার কার্যবিবরণীতে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর করার জন্য কমিশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম ও তাৎপর্যপূর্ণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। কমিশনের একার পক্ষে সারা দেশব্যাপী একদিনে নির্বাচনের মতো এত বড় কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এজন্য সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন। আসন্ন নির্বাচনে অনেক প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, সমন্বয় এবং আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা দূর করা সম্ভব হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান কমিশন সশস্ত্রবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কতসংখ্যক নিয়োগ হলো তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো তারা পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সমন্বয়ের বিকল্প নেই।

সিইসি জানান, স্টেট অ্যাসেসমেন্ট করে ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান করতে হবে। রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে বিভক্ত করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা যেতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। নির্বাচনী কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও দাবি

সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্তঃসমন্বয় থাকতে হবে। নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওপর হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট দেওয়ায় বাধা প্রদান ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদানসহ বসতবাড়িতে হামলা বা অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা থাকতে পারে। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সারা দেশে ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে। নির্বাচনের আগের তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তী চার দিনসহ মোট আট দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা যেতে পারে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) একটি অ্যাপ চালু করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে পূজার কার্যক্রম মনিটরিং ও গুজব প্রতিরোধে সফলভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এ ধরনের অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে। ভুল তথ্য ছড়ানো ও গুজব প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা যেতে পারে।

তিনি জানান, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ইতোপূর্বে নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব স্থানে হামলা হয়েছিল সেসব এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সারা দেশে সেনাবাহিনীর ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত করার প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা হতে পারে। উঁচুমানের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনী কাজে জরুরি প্রয়োজনে আর্মি এভিয়েশনও প্রস্তুত থাকবে। অঞ্চলভেদে কমান্ডো বাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজন হলে গাড়ি অধিযাচনের জন্য সেনাবাহিনীকে অনুমতি দিতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য নির্বাচনী মালামাল ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পরিবহনের জন্য হেলিপ্যাড প্রস্তুত থাকবে। সেনাবাহিনীকে ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, এর পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হলে নির্বাচনে সেনাবাহিনী আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনী মালামালের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যেতে পারে। নির্বাচনী কাজের জন্য সেনাবাহিনীকে ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রাখা যেতে পারে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সারা দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ৪০০ কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হতে পারে।

সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ ও নৌবাহিনীর পরিকল্পনা

সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও জানান, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে। এ বিভাগ থেকে নৌবাহিনীর ৩ হাজার সদস্য, সেনাবহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি জানান, এবারের সুবিধা হলো ইতোমধ্যেই সারা দেশে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। উপকূলীয় এলাকায় কিছু বিশেষত্ব থাকে। বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ১১টি আসন উপকূলবর্তী। সাধারণত এলাকাগুলো চরাঞ্চল ও দূর্গম হয়ে থাকে, যার কারণে এখানে পরিবহন সমস্যা বিরাজমান। দীর্ঘদিন যাবত গাড়ি ক্রয়ের অনুমোদন না থাকায় যানবাহনের সংকট রয়েছে। নৌবাহিনীর নিজস্ব জলযান আছে, তবে সিভিল জলযানও লাগতে পারে। ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন থাকবে নাকি নির্বাচন কমিশনের আওতায় মোতায়েন থাকবে তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

আনসার ও ভিডিপির বিশেষ প্রস্তুতি

আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক বলেন, গতবারের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনকে তুলনা করলে ভুল হবে। কারণ, এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, ঝুঁকিগুলো ব্যতিক্রম। সাধারণ কেন্দ্রে দুটি অস্ত্রসহ এবং বিশেষ কেন্দ্রে তিনটি অস্ত্রসহ আনসারের টিম মোতায়েন থাকতে পারে। বিগত সময়ে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত জনদের নিয়ে অনভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণবিহীন জনবলকে নির্বাচনে আনসারের দায়িত্ব প্রদান করা হতো। বর্তমানে নতুন করে অভিজ্ঞ আনসার সদস্যদের বাছাই করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার নতুন আনসার-ভিডিপি নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জ তাদের পোশাক ও অস্ত্র। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে পদবি হিসেবে আনসারের প্লাটুন কমান্ডার না লিখে সেকশন কমান্ডার লিখলে যৌক্তিক হয়। বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োজিতদের এবার দায়িত্ব দেওয়া হবে না। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের কিউআর কোডযুক্ত পরিচয়পত্র দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনের সবচেয়ে বড় এনগেজমেন্ট আনসারের। আট দিনের জন্য আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা যেতে পারে। একই স্থানে যারা দীর্ঘদিন নিয়োজিত আছেন তাদের সেই এলাকা থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয়সংখ্যক অস্ত্র ক্রয় এবং পোশাক খাতের অর্থ অতি দ্রুত বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোতায়েনযোগ্য আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে এমন কোনো সদস্য-সদস্যা দায়িত্ব পালনে সম্পৃক্ত করা হবে না। দায়িত্ব পালনকারী আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যাদের ভাতাদি শতভাগ অনলাইন/মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে।

বিমানবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের অভিমত

বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য পরিবহন বিমান প্রস্তুত থাকবে। সরঞ্জাম ও জনবল পরিবহনের জন্য পূর্বপরিকল্পনা প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্র সচিব প্রতি ভোটকেন্দ্রে অন্যূন একটি করে বডিওর্ন ক্যামেরা রাখার কথা জানান। ভোটকেন্দ্রের আশপাশের দোকানগুলোকেও রেকর্ডিংয়ের আওতায় আনার অনুরোধ করেন তিনি। এসময় আকাশে ড্রোন উড়লে কেউ দুষ্কর্ম করার সাহস পাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়।

পুলিশ, এনটিএমসি ও কোস্টগার্ডের ভূমিকা

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। নির্বাচনে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ব্যয় বাড়বে। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম আরও দৃশ্যমান করা যেতে পারে। আচরণবিধি প্রতিপালনে ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করার জন্য পুলিশ প্রস্তুত আছে।

এনটিএমসি মহাপরিচালক বলেন, দুর্গাপূজা মনিটরিংয়ে অ্যাপ ব্যবহার করে যে সুবিধা পাওয়া গেছে, নির্বাচনেও এ ধরনের অ্যাপস তৈরিতে এনটিএমসি প্রস্তুত আছে।

কোস্টগার্ড মহাপরিচালক বলেন, ৯টি জেলার ১৭টি উপজেলায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রম বিদ্যমান রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার জন্য কোস্টগার্ড সবচেয়ে কার্যকর বাহিনী। এ কাজে কোস্টগার্ডের ৩ হাজার লোকবল রয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন হতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড পুলিশের ভূমিকা পালন করে থাকে।

গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবির পর্যবেক্ষণ

ডিজিএফআই মহাপরিচালক বলেন, মাঠপর্যায় থেকে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য নির্বাচন কমিশন ও বাহিনী প্রধানদের কাছে যথাসময়ে সরবরাহ করা হবে। নির্বাচনে গুজব অনেক বড় সমস্যা। গুজব প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন থেকে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। সাংবাদিকদের জন্য মিডিয়া পলিসি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ক্রাইসিস মোমেন্টে কে কীভাবে রেসপন্স করবে তা সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনে কমান্ড কন্ট্রোল কার অধীনে থাকবে তাও নিরূপণ করা প্রয়োজন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বজায় রেখে নির্বাচনে বিজিবি মোতায়েন থাকবে। সীমান্তে ২০ জনের বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) মোতায়েন করা হবে না। তবে কক্সবাজারে ২৫ জন রাখা হবে। এবারে ৪৯২টি উপজেলায় ১১ হাজার ৬০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা সম্ভব হবে। সীমান্তের ২ কিলোমিটারের মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন না রাখাই ভালো। ৬০টি উপজেলায় বিজিবি ও একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ৩৭৭টি উপজেলায় বিজিবি ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে মোতায়েন থাকতে পারে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি গাড়ি অধিযাচনের প্রয়োজন হতে পারে। গতবারের তুলনায় এবারের বাজেটের চাহিদা কম হবে। নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা জানা প্রয়োজন। মাঠ কার্যালয়ে বাহিনীর কমান্ড কন্ট্রোল সেনাবাহিনীর অধীনে থাকলেই ভালো হয়।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) মহাপরিচালক বলেন, জেলা পর্যায়ে এনএসআইর গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে এবং বিশ্লেষণ কার্যক্রম চলমান আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও একই কাজ করছে, এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এজন্য নির্বচন কমিশন থেকে সমন্বয় সভা আয়োজন করা যেতে পারে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী এনএসআই গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করবে। নির্বাচন কমিশন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে। মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আলাদা নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচনী আইনের কঠোর ও সমভাবে প্রয়োগ হলে নির্বাচনী অপরাধ কমতে পারে।

র‌্যাব, সিআইডি ও এসবির কর্মপরিকল্পনা

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনে র‌্যাব মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করে। নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য র‌্যাবের ড্রোন, হেলিকাপ্টারসহ অন্যান্য রিসোর্স ব্যবহার করা হবে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি প্রতিপালনে কমিশনকে কঠোর হতে হবে। এ কাজে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচনে ৫ হাজার ৫০০ র‌্যাব মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সিআইডি প্রধান জানান, সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই ব্যবহার করে নির্বাচনে গুজব ছড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক কন্টেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এজন্য র‌্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে।

এসবির প্রতিনিধি জানান, ইতোমধ্যে এসবি ৮ হাজার ২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০ হাজার ৪৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৩ হাজার ৪০০টি সাধারণ ভোটকেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, খানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত ভোটকেন্দ্রের তালিকা শনাক্ত করা হয়েছে। মাঠ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর আন্তঃকমান্ড নির্বাচন কমিশন থেকে নির্ধারণ করা যেতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে। অবৈধ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশনারদের মন্তব্য ও দিকনির্দেশনা

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যে হবে, এ বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে না। নির্বাচনী কাজে সফলতার জন্য সমন্বয়ের বিকল্প নেই। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুসমন্বয় অত্যাবশ্যক। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারই মুখ্য ভূমিকা করেন, এজন্য তার নিরাপত্তা ও তাকে সহযোগিতা করা খুবই জরুরি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপস্থিত বাহিনী প্রধানদের তাদের মতামত লিখিতভাবে কমিশনে জমা দিতে অনুরোধ করেন এবং সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি ২০২৬ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি নিশ্চিত করেন, কমিশন গোপনে কোনো নির্দেশনা দেবে না, সব নির্দেশনা আইন ও বিধি মোতাবেক প্রকাশ্যে দেওয়া হবে। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কমিশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রতিপক্ষের হামলা, বিশৃঙ্খলা বা নির্বাচনী অনিয়মের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরে সমন্বয় প্রয়োজন। মাঠ পর্যায়ে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় পদ্ধতি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। তিনি নিরপেক্ষতা, শক্ত অবস্থান, দ্রুত সাড়া প্রদান এবং নির্বাচনী আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখার ওপর জোর দেন।

তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, ভুয়া তথ্য (ভয়েস ক্লোন) মোকাবিলায় দ্রুত ভালো তথ্য সরবরাহ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, বর্ডার/সি-রুট সিল করা এবং কালো টাকার ব্যবহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেন। তিনি সতর্ক করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্যাবোটাজ হতে পারে এবং যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও দায়িত্বপ্রাপ্তরাই এর বাস্তবায়নকারী।

নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, বিগত সময়ের খারাপ নির্বাচনের দায় বর্তমান দায়িত্বরতদের নিতে হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গর্বের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। যাতে করে অন্য দেশ বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আস্থার জায়গায় আনার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে পারে না। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কমিশনের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন। যে কারণে মাঠ কার্যালয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের অনিয়মের দায়ভার কমিশনকে নিতে হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজেকে কমিশন মনে করে কাজ করতে হবে। নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে এবং প্রো অ্যাকটিভ হয়ে কাজ করতে হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৯ নভেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit