বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

ইসলামে দত্তক বা পালক সন্তানের সামনে পর্দার বিধান কী?

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানবিকতা ও ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে সন্তান দত্তক নিয়ে অনাথ, অসহায় শিশুর প্রতি মমতা ও সহানুভূতির বিষয়গুলো ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে ইসলাম সন্তান দত্তক নেওয়ার মানবিক দিককে সমর্থন করলেও সন্তানের প্রকৃত বংশপরিচয় গোপন বা পরিবর্তন করতে নিষেধ করেছে।

জাহিলি যুগে দত্তক সন্তানকে প্রকৃত সন্তান গণ্য করা হতো। ইসলামে সেই প্রথা সংশোধন করা হয়েছে। হজরত যায়েদ ইবন হারিসা (রা.)-এর ঘটনা এর অন্যতম উদাহরণ।

কুরআনের দৃষ্টিতে দত্তক নেওয়ার বিধান

দত্তক সন্তানকে প্রকৃত পিতা-মাতার নামেই পরিচিত করতে হবে। বংশপরিচয় গোপন করা বা পরিবর্তন করা হারাম। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা করেন-

اُدۡعُوۡهُمۡ لِاٰبَآئِهِمۡ هُوَ اَقۡسَطُ عِنۡدَ اللّٰهِ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ تَعۡلَمُوۡۤا اٰبَآءَهُمۡ فَاِخۡوَانُكُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ مَوَالِیۡكُمۡ ؕ وَ لَیۡسَ عَلَیۡكُمۡ جُنَاحٌ فِیۡمَاۤ اَخۡطَاۡتُمۡ بِهٖ ۙ وَ لٰكِنۡ مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوۡبُكُمۡ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

‘তোমরা তাদেরকে (দত্তক সন্তানদের) তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। অতঃপর যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। আর এ বিষয়ে তোমরা কোনো ভুল করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আল-আহযাব: আয়াত ৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবন থেকে দত্তক নেওয়ার শিক্ষা

নবী করিম (সা.) হজরত যায়েদ (রা.)-কে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো লালন-পালন করেছেন। কিন্তু পরে আল্লাহর আদেশে তাকে ‘মুহাম্মাদের পুত্র’ নয়, ‘হারিসার পুত্র যায়েদ’ বলা হয়। এতে বোঝা যায়— দত্তক সন্তানকে ভালোবাসা যাবে, কিন্তু বংশপরিচয় পরিবর্তন করা যাবে না।

ইসলামে দত্তক নেওয়ার বৈধ পদ্ধতি

অনাথ বা দরিদ্র শিশুকে লালন-পালন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তবে শিশুর বংশপরিচয় অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে, উত্তরাধিকার অধিকার পরিবর্তন করা যাবে না, কিন্তু হাদানা (লালন-পালন) ও ওয়াসিয়ত (ইচ্ছাপত্রে অংশ দেওয়া) বৈধ।

উত্তরাধিকার ও সম্পর্ক বিষয়ক বিধান

দত্তক সন্তান উত্তরাধিকারী নয়, কারণ রক্তসম্পর্ক নেই। তবে অভিভাবক চাইলে তাকে ওয়াসিয়তের মাধ্যমে (সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত) সম্পত্তির অংশ দিতে পারেন। এমনকি দত্তক সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে মাহরাম সম্পর্কও তৈরি হয় না।

অনাথ ও অসহায় শিশুর যত্ন নেওয়ার ফজিলত

অনাথের লালন-পালন ইসলামের দৃষ্টিতে অশেষ সওয়াবের কাজ, যদিও তাকে প্রকৃত সন্তান বলা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-

 أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ، فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا ‏”‏‏.‏ وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى‏

 ‘আমি ও ইয়াতীমের দেখাশুনাকারী জান্নাতে এভাবে (একত্রে) থাকব। এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন।’ (বুখারি ৬০০৫)

দত্তক নেওয়া সন্তানের সঙ্গে পর্দার বিধান

দত্তক নেওয়া সন্তানের সঙ্গে পর্দার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দত্তক নেওয়া শিশু ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক মায়ের সঙ্গে এবং মেয়ে হলে পালক বাবার সঙ্গে শরিয়তের পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। পর্দার এই কঠোরতা এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো— শিশুটিকে দুগ্ধপোষ্য অবস্থায় (জন্মের পর প্রথম দুই বছরের মধ্যে) পালক নেওয়া মায়ের কোনো বোন বা মেয়ে দ্বারা এমনভাবে দুধ পান করানো, যাতে সে দুগ্ধ-সম্পর্কীয় মাহরাম হয়ে যায়। দুগ্ধ-সম্পর্ক তৈরি হলে তাদের মধ্যে পর্দা আর আবশ্যক থাকবে না।  হাদিসে এসেছে-

قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيْ بِنْتِ حَمْزَةَ لَا تَحِلُّ لِيْ يَحْرُمُ مِنْ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنْ النَّسَبِ هِيَ بِنْتُ أَخِيْ مِنْ الرَّضَاعَةِ

‘নবী (সা.) হামযাহর মেয়ে সম্পর্কে বলেছেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা বংশ কারণে যা হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণেও তা হারাম হয়, আর সে আমার দুধ ভাইয়ের মেয়ে। (বুখারি ২৬৪৫)

মনে রাখতে হবে

বর্তমান সময়ে প্রচলিত দত্তক প্রথা ইসলাম সমর্থন করে না, যেখানে সন্তানের আসল পিতামাতার পরিচয় মুছে ফেলা হয় এবং তাকে জৈবিক সন্তানের মতো সকল আইনি অধিকার (উত্তরাধিকার ও পর্দা) দেওয়া হয়। বরং ইসলাম অনুমোদন করে কাফালাহ, যার মূল শর্ত হলো শিশুর আসল পিতৃপরিচয় বহাল রাখা।

কেননা ইসলামে কোনো স্বাধীন মানুষের প্রকৃত পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম ও কবিরা গুনাহ। দত্তক নেওয়ার কারণে শিশুর আসল মা-বাবা ও বংশের সম্পর্ক কোনোভাবেই বিলুপ্ত হবে না। তাই শিশুর জন্মসনদ, শিক্ষাসনদ, ভোটার আইডি বা অন্য যেকোনো দাপ্তরিক দলিলে তার আসল পিতার নাম উল্লেখ করা আবশ্যক।

ইসলাম দত্তক সন্তানকে ভালোবাসা, শিক্ষা, লালন ও যত্ন দিতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু একইসাথে বংশপরিচয়, উত্তরাধিকার ও মাহরামত্বে সীমা রেখেছে। এটি ন্যায় ও শুদ্ধতার দৃষ্টিতে ভারসাম্যপূর্ণ একটি বিধান।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৫ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ১১:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit