ডেস্ক নিউজ : সিঙ্গাপুরের সীমান্ত ঘেঁষা এক মহাপ্রকল্প। যার শুরুটা ছিলো আলো ঝলমলে। প্রত্যাশার পারদও ছিলো তুঙ্গে। তবে শুরুটা ঢাকঢোল পেটানো হলেও গল্পটা তেমন জমজমাট আগায়নি। বরং ঘটেছে উল্টো। আশার সলতে জ্বালা প্রকল্পটি আটকে গেছে আঁধারে। যেখানে থাকার কথা ছিলো কানায় কানায় মানুষে পূর্ণ। সেখানে এখন খাঁ খাঁ করছে শূন্যতা। গল্পটা মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ফরেস্ট সিটির। এই বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্পের করুণ পরিণতি আজ আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম। এক দশক আগে বিশাল স্বপ্ন নিয়ে যে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল, এখন তা কার্যত এক ভূতুড়ে নগরে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেও এই প্রকল্পের বেশিরভাগটাই আজ জনশূন্য।
মালয়েশিয়ার জোহর প্রণালীর অপর প্রান্তে সিঙ্গাপুর সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে এই ফরেস্ট সিটির অবস্থান। এটি একসময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগের বড় অংশ ছিল। এই বিশাল প্রকল্পের মূল চালক ছিল একসময়ের চীনের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট সংস্থা কান্ট্রি গার্ডেন।
তাদের লক্ষ্য ছিল চারটি কৃত্রিম দ্বীপ জুড়ে ৭ লক্ষেরও বেশি বাসিন্দার জন্য একটি পরিবেশবান্ধব বিলাসবহুল শহর তৈরি করা। যেখানে থাকবে গলফ কোর্স, ওয়াটার পার্ক, অফিস ও রেস্তোরাঁ। প্রকল্পের আকার হওয়ার কথা ছিল প্রায় মোনাকোর চার গুণ।
২০১৫ সালে যখন নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তখন চীনা রিয়েল এস্টেট বাজার ছিল তুঙ্গে। ডেভলপাররা বিদেশেও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিচ্ছিল। কিন্তু শুরুতেই বড়সড় ভুল করে এই সংস্থা। তাদের দাবি ছিল এটি মধ্যবিত্তদের জন্য, অথচ এখানে অ্যাপার্টমেন্টের দাম ছিল সাধারণ মালয়েশীয়দের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। জোহর বাহরুর মতো প্রধান শহরে যেখানে অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য ১,৪১,০০০ ডলার, সেখানে ফরেস্ট সিটির একটি অ্যাপার্টমেন্টের গড় মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১.১৪ মিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে, পুরো প্রকল্পের মাত্র ১৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। বিরাট বিরাট আকাশচুম্বী অট্টালিকা প্রায় খালি। শপিং মল, বিজনেস স্কুল, রিসর্ট সবই আছে, কিন্তু নেই মানুষ! অনেক দোকানপাট বন্ধ বা পরিত্যক্ত।
শহরটির আশেপাশে এখন আর মানুষের আনাগোনা নেই। তবে আছে কুমিরের ভয়। পচিভকা সংবাদপত্র সূত্রে খবর, শহরের পাশেই একটি কুমির-ভর্তি নদী রয়েছে। সৈকতে সাঁতার না কাটার জন্য সতর্কতামূলক চিহ্ন বসানো হয়েছে।
শহরের এক বাসিন্দা জোয়ান কৌর এই পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, এই জায়গাটা গা ছমছমে। দিনের বেলাতেও সদর দরজা দিয়ে বাইরে বেরোলে হলওয়েতে অন্ধকার লাগে। যারা এখানে বিনিয়োগ করে বাড়ি কিনেছেন, তাদের জন্য খুব খারাপ লাগে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে চাই।
এমন বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বড় রিয়েল এস্টেট ডেভলপারদের উপর বেইজিংয়ের কড়া বিধিনিষেধ রয়েছে। এছাড়াও তৎকালীন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ চীনা ক্রেতাদের জন্য ভিসা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি খোলাখুলি বলেন, এটি বিদেশিদের জন্য তৈরি শহর। আর তিনি এর বিরোধী। দুর্বল অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই প্রকল্পের সূচনা নিয়ে সমালোচনা ছিলো। কোভিড-১৯ মহামারী জনিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও এই বিদেশি প্রকল্পকে বড় ধাক্কা দেয়।
১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের এই ফরেস্ট সিটি এখন এক পরিত্যক্ত স্থাপত্যের প্রতীক। একটি বিলাসবহুল স্বপ্ননগরী কীভাবে পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার শিকার হয়ে এক জনশূন্য শহরে পরিণত হতে পারে, ফরেস্ট সিটি তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
সূত্র: এএস.কম
কিউএনবি/অনিমা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:১৭