স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ওই শিক্ষক নাফসি তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর মুঠোফোনসহ বিভিন্নভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সংবাদকর্মী ও তাদের পরিবারকে স্ব-শরীরে হুমকি দেন। সাংবাদিক মহল বলছে, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও অন্যায় কর্মকান্ড ধামাচাপা দিতে গিয়ে এখন সংবাদকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রæত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলা ২৪ এর জেলা প্রতিনিধি রাব্বিউল হাসান রমি, নাগরিক টেলিভিশন ও দৈনিক শিক্ষাডটকম এর জেলা প্রতিনিধি মাহফুজার রহমান, দৈনিক ভোরের দর্পনের জেলা প্রতিনিধি কাজী তানভিরুল ইসলাম রিগ্যানের স্ত্রীকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। এছাড়াও কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত ২৬ আগস্ট ও ২৭ আগস্ট কয়েকজন সাংবাদিককে সরাসরি বিভিন্ন রকম হুমকি দেন।
এ ঘটনা নিয়ে রাব্বিউল হাসান রমি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে খোলা চিঠি লেখেন। ‘খোলা চিঠি -নিউজ করায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করায় আমাকে কিছুক্ষণ আগে মেরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক পৌর যুবদলের সভাপতি নাফসি তালুকদার। আমার জীবনে কোন ক্ষতি ও পরিবারের কোন ক্ষতি হলে তার দায়ভার নাফসি তালুকদারকে নিতে হবে। গতকাল যারা তার ব্যবহার নিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন, আজ তারা কি বলবেন?’
এছাড়াও দৈনিক কালের কণ্ঠের কালাই প্রতিনিধি সাউদ আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, সাংবাদিকতায় সত্য বলার দায়, এখন ভয়! সমাজের আয়নায় এক ভয়ানক প্রতিচ্ছবি!!। পরিবার ও সাংবাদিকতা পেশার ঝুঁকি নিয়ে বিস্তর বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।হুমকির বিষয়ে আরও কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কারণ দর্শানোর নোটিশ, তথ্য ও ভিডিও বক্তব্য অনুযায়ী সংবাদটি স্ব-স্ব মিডিয়াতে পাঠানো হয়েছে। যা মিডিয়া কর্তৃপক্ষ যাচাই বাচাই করে প্রকাশ করেছে। অথচ নাফসি তালুকদার এখন আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে আমরা পেশাগতভাবে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্যে আছি।
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য জানান, শিক্ষক নাফসি তালুকদারের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তারা গুরুত্বের সাথে দেখছেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আমি ফেসবুকে এ নিয়ে এক সাংবাদিকের পোস্ট দেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এনিয়ে আমাকে ফোন করে বা রিটেন অভিযোগ দেয়নি। আমরা তার আগের অভিযোগগুলোর সাথে এটিও আমলে নিবো।
পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো থানায় জিডি বা কোনো অভিযোগ হয়নি। তবে একজন সাংবাদিক ফোন করে বিষয়টি বলেছে। আমি তাকে থানায় জিডি করতে বলেছি।এর আগে গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপর বেত্রাঘাত করার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করে দলীয় অফিস খোলা, সহকর্মী শিক্ষক ও ডাক্তার-নার্সদের সাথে খারাপ ব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।