শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ন

কোরআন যাদের ব্যর্থ বলেছে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : ব্যর্থতা বোঝানোর জন্য পবিত্র কোরআনে ‘খা-বা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর ‘খায়বাহ’ এমন একটি শব্দ, যা বলার সময় এবং শোনার সময় মানুষের মনে দুঃখ, হতাশা, নিরাশা, হীনম্মন্যতা, অক্ষমতা, ব্যর্থতা ও অসহায়ত্বের ছায়া ফেলে। খায়বাহ বা ব্যর্থতা হলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া, যা প্রত্যাশা করেছিল তা না পাওয়া, যা আশা করেছিল তাতে সফল না হওয়া। ব্যর্থতা শুধু আশার পরই আসে। যখন আশা ভেঙে যায়, তখন ব্যর্থতা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হৃদয়বিদারক অনুভূতিগুলো আসে।

কোরআনুল কারিমে খায়বাহ বা ব্যর্থতার কথা চার স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে, যার সবই জুলুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। হয় ব্যাপক অর্থে জুলুম (শিরক) অথবা বান্দাদের প্রতি জুলুম অথবা নিজের প্রতি জুলুম। প্রথমত, জালিমুন বা জালেমরা : কোরআনুল কারিমের সুরা ত্বাহায় বলা হয়েছে—‘আর যে জুলুম বহন করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।

’ (সুরা : ত্বাহা, আয়াত : ১১১)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর জুলুম হলো শিরক।’ এই ব্যাপক অর্থে জুলুম বলতে শিরক বোঝানো হয়েছে।


শিরক দুই প্রকার :
 প্রকাশ্য শিরক, গোপন শিরক (যা পিঁপড়ার চলার চেয়েও সূক্ষ), এবং ছোট শিরক (রিয়া বা লোক-দেখানো)

দ্বিতীয়ত, জাবাবেরাহ ও আনীদ তথা অত্যাচারীএকগুঁয়েরা : পবিত্র কোরআন অত্যাচারী একগুঁয়েদের ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করেছে। সুরা ইবরাহিমের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর তারা ফয়সালা চাইল এবং প্রতিটি অত্যাচারী একগুঁয়ে ব্যর্থ হলো।

যে মানুষকে তার ইচ্ছার ওপর জোর করে চালিত করে সে-ই অত্যাচারী। আর যে সত্যের বিরোধিতা করে এবং তা থেকে দূরে থাকে সে একগুঁয়ে। হাদিসে এসেছে, “নিশ্চয়ই জাহান্নামে একটি উপত্যকা আছে, আর সেই উপত্যকায় একটি কূপ আছে, যার নাম ‘হাবহাব’। আল্লাহর ওপর হক যে তিনি প্রত্যেক অত্যাচারী একগুঁয়েকে সেখানে বাস করাবেন।” (তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১২২১৭)

তৃতীয়ত, মিথ্যারোপকারীরা : পবিত্র কোরআন মিথ্যারোপকারীদেরও ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করেছে।

সুরা ত্বাহার ৬১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর যে মিথ্যারোপ করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’ সুরা আনকাবুতের ৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর তার চেয়ে বড় জালেম কে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে?’

ইফতিরা হচ্ছে—অন্যের ব্যাপারে এমন মিথ্যা বলা, যা সে পছন্দ করে না। আল-কাফাওয়ির মতে, ইফতিরা হচ্ছে মিথ্যার চরম রূপ। ইমাম সুয়ূতির মতে, ইফতিরা হচ্ছে এমন বিষয়ের উদ্ভাবন, যার কোনো ভিত্তি নেই।

চতুর্থত, নিজ আত্মকে কলুষিতকারীরা : পবিত্র কোরআন আত্মাকে কলুষিতকারী ব্যক্তিকেও ‘খা-বা’ বা ব্যর্থ হয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে। সুরা শামসের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর যে তাকে (আত্মাকে) কলুষিত করেছে, সে ব্যর্থ হয়েছে।’

হাসান বসরি (রহ.)-এর মতে, এই আয়াতে সেই লোক উদ্দেশ্য— ‘যে নিজেকে ধ্বংস করেছে, পথভ্রষ্ট করেছে এবং পাপের দিকে পরিচালিত করেছে।’ আর ইবনুল আরাবির এই আয়াতে সেই লোক উদ্দেশ্য—‘যে নিজেকে নেককারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে অথচ সে তাদের কর্মধারার মধ্যে নেই।’

যে ব্যক্তি কোরআনের এই চারটি স্থানে ব্যর্থতার কারণগুলো লক্ষ্য করবে, সে বুঝবে যে এগুলো কোনো নির্দিষ্ট যুগ বা প্রজন্মের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এমন ভূমিকা, যা নির্দিষ্ট পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

ব্যর্থদের করণীয়

যাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উল্লিখিত ব্যর্থতার কারণগুলো আছে, তাদের মুক্তির একমাত্র পথ হলো, আন্তরিকভাবে সেগুলো থেকে বের হয়ে আসার দৃঢ় নিয়ত, সত্যিকারের তাওবা ও সংশোধন।

অন্যথায় তারা হবে দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোক অথচ নিজেরা তা বুঝতেও পারছে না। সুরা কাহফের ১০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘যাদের দুনিয়ার জীবনে সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়েছে, অথচ তারা মনে করছে যে তারা সুন্দর কাজ করছে।’

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দানের মাধ্যমে কোরআনের ভাষ্যমতে ব্যর্থদের তালিকা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ আগস্ট ২০২৫/রাত ৮:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit