ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ লুট করা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এভাবে ব্যাংক খাতের অর্থ লুট করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব… দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় বা আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে আরও একটু দ্রুত এগোতে পারলে ভালো হতো। বেসরকারি খাতে এখনো আস্থার সংকট রয়েছে। এটা একদিনে কাটানো সম্ভব নয়। এছাড়া, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এত সহজ নয়। আমরা ১২টা দেশের সঙ্গে একইসঙ্গে নেগোসিয়েশন করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চেষ্টা করছি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যে অর্থ ফিলিপাইনে চলে গেছে, তা ফেরত আনতে জান বের হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন কর হয়। এতে গত এক বছরে আর্থিক খাতের রিফর্ম, অন্যান্য সংস্কার, ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন, এনবিআর ইস্যুসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মতে অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক। আর্থিক খাতে বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব ছিল। এমনিতেই আমাদের আর্থিক সক্ষমতা কম, তার মধ্যে এগুলো। সে জন্য আমি খাদের কিনারায় বলি, আইসিইউতে ছিল বলি। সেখান থেকে আমরা একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছি। পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সম্পর্কে আমি জানতে চাইলাম, সে বলছে স্যার ৯৫ শতাংশই খেলাপি। কে নিয়েছে টাকা? চেয়ারম্যান সাহেব, আর তার লোকজন। চিন্তা করতে পারেন! পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটি আপনার-আমার টাকা কিন্তু।
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। খারাপ, খারাপ বললে তো খারাপই হয়ে যাব। গ্রোথ হচ্ছে না, কর্মসংস্থান হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না, এভাবে বললে তো হবে না। গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তো নেগেটিভ না। আনুমানিক একটা তথ্য গ্রোথ ৩.৯ শতাংশ, আমরা আশা করছি বছর শেষে ৫ থেকে ৫.৭ শতাংশ হবে।
তিনি আরও বলেন, হয়তো আপনারা যেভাবে প্রত্যাশা করেন, সেভাবে হয়নি। তবে অনেক কিছুই হয়েছে। আর একটু দ্রুত গতিতে হলে হয় তো ভালো হতো। আমরা আশা করছি, সামনে অর্থনীতি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।
কতটি ব্যাংক মার্জ করা হবে এবং কবে নাগাদ করা হবে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে। কতটা ব্যাংক হবে, তা আমি বলতে চাই না। তবে হবে।
যদি ব্যাংকের মার্জ নির্বাচিত সরকারের অধীনে চলে যায় এবং তারা যদি না করে, সে বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এখনো পুরোপুরি উল্টো গেলে তো কিছু করার নেই।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা যেটা ইনিসিয়েট করেছি, সেটি এগিয়ে নিতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা আছে। সেটিকে কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটাকে চলমান রাখতে হবে। বেসরকারি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন তো সারাবিশ্বেই অনিশ্চয়তা চলছে, শুধু বাংলাদেশে নয়। ২/৩ মাস আগে ব্যবসায়ীরা হইচই করতেন। এখনো অনেকেই করছেন। কিন্তু এখন সেটি কমেছে। আমরা ডলার রেটটা একটা জায়াগায় ধরে রাখতে পেরেছি। রিজার্ভ বাড়ছে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আর হচ্ছে না। তবে বেসরকারি খাতের কিছুটা আস্থাহীনাতা রয়েছে। আমরা সেটিকে ওভারকাম করার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ভয় নয়, সচেতন করতে শূন্য রিটার্নে জেলের বিধান চালু করা হয়েছে।
রিটার্নে আয়ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য না দিলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনোভাবেই আমাদের সম্মানিত করদাতাদের ভয় দেখাতে চাই না। আমরা শুধু সচেতন করতে চাই।
আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা নতুন কোনো আইনও করিনি। আমরা একটা জিনিস দেখলাম… বিভিন্ন জায়গায় বসে, দোকানে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেখানো হচ্ছে কীভাবে শূন্য রিটার্ন দেওয়া যায়। এটা কিন্তু বিপজ্জনক। সেই কথাটাই আমরা বলতে চেয়েছি। যখন আপনাদের ফাইলটা অডিটে পড়বে, তখন আপনারা কোনো জবাব দিতে পারবেন না। কেননা সব তথ্যই মিথ্যা দেওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১২ আগস্ট ২০২৫/রাত ৮:৩০