মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে উন্নয়নমূলক কাজের বিভিন্ন প্রকল্পে চরম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও নাম মাত্র কাজ করে প্রকল্পের টাকা হরিলুট করা হচ্ছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ২৯ টি প্রকল্পের মধ্যেই অন্তত ১৮ টি প্রকল্পে ছোটখাট সংস্কার করে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করা হচ্ছে। উপজেলার ব্যস্ততম মোড় ঘুঘুরাতলী মোড়ে ড্রেনের জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার সরকারি আবাসস্থল ক্রান্তি ভবন ১০ লক্ষ টাকা, সোহাগ ভবনে ১০ লক্ষ টাকা প্রকল্পের মধ্যে শুধুমাত্র ছোটখাট সংস্কার করা হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পে পুর্বের কাজটিকেই নতুন করে বরাদ্দ দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের মূল গেট হতে প্রশাসনিক কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারিত করতে ও উপজেলা পেিরষদের মেইন গেট হতে ডরমেটরি পর্যন্ত একই রাস্তাটি আরসিসি করণ প্রকল্পটি গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম শরীফুল হক বরাদ্দ বের করে কাজটি সমাপ্ত করে যান।
বর্তমানে ওই রাস্তাটিতেই নতুন করে ২৫ মিটার বৃদ্ধি করে ২১ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাগণের আবাসস্থল কল্লোল ভবনে শুধুমাত্র টয়লেটের পাইপ পরিবর্তন, কক্ষে টাইলস বসা ও চুনকাম করেই ১৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মৌসুমি ভবনে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ভবন মেরামতে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে উত্তোলন করা হলেও সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকার মত ব্যয় করা হয়েছে।
উপজেলার পুকুর পাড়ের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে সব টাকা উত্তোলন করা হলেও ওই কাজটি গত ৪ বছর পুর্বেই সম্পন্ন করা হয়েছিল। নতুন করে কোন কাজ করা হয়নি। কয়েকবছর পুর্বের সম্পন্ন করা কয়েকটি প্রকল্প নতুন করে দেখিয়ে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। উপজেলার খেলার মাঠে গ্যালারী ও ড্রেসিং রুম নির্মাণ ও লাইট পোস্ট স্থাপনে ২ লক্ষ টাকা উত্তেলন করা হলেও কোন কাজ করা হয়নি। উপজেলা প্রশাসনিক অডিটরিয়ামের আধুনিকায়নে ৪ লক্ষ টাকা, সন্তোষপাড়া গাইড ওয়াল প্রকল্পে ৭ লক্ষ টাকা, কয়েকটি হাটে টিউবওয়েল ও বিভিন্ন শিশু প্রতিষ্ঠানে সিলিং ফ্যান প্রদানে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হলেও নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হলেও কোন কাজ করা হয়নি।
মোঃ আমিনুর রহমান বাবু ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজন ঠিকাদার বলেন- প্রকল্পের কাজগুলি ইজিপিপির মাধ্যমে টেন্ডার দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন টেন্ডার না দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আত্মসাতের মনোবাসনায় প্রকল্পের কাজ করছেন। টেন্ডার না দিয়ে কোনভাবেই কাজ করার সুযোগ নাই। উপজেলা প্রকৌশলী যোগদানের পর হতেই এই উপজেলায় নানাবিধ অনিয়মসহ দুর্নীতি করে চলছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাসুদার রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি নিরিবিলিতে কথা বলতে চান। এক পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান।
কাজ হচ্ছে। সময় অভাবে টেন্ডার দেয়া হয়নি। স্থানীয় এক ঠিকাদারকে দিয়ে কাজগুলি করানো হচ্ছে। এসময় তাঁর কাছে পুর্বের প্রকল্পের কাজগুলি বর্তমানেও প্রকল্প দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোন উত্তর না দিয়ে পুনরায় নিরিবিলিতে কথা বলতে চেয়ে চুপ করে থাকেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেহা তুজ জোহরা বলেন-ওই দুই ঠিকাদারকে ডেকে কথা বলা হয়েছে। এমন সময়ে বরাদ্দ এসেছে, ওই সময়ে টেন্ডার দেয়ার সুযোগ ছিলনা। উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পগুলি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কাজ সরজমিনে পরিদর্শন করে সরকারী নীতিমালা মোতাবেক টাকা ছাড় করা হবে। দূর্নীতির কোন সুযোগ দেয়া হবেনা।
কিউএনবি/আয়শা/৩০ জুলাই ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৪৩