অনেক সময় একজন মানুষ বাইরের দিক থেকে পুরোপুরি ঠিকঠাক মনে হলেও, ভেতরে ভেতরে গভীর বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়ছেন — এটাই ‘হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন’। মানে, ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজকর্ম করেই চলেছেন, কিন্তু ভিতরে দুঃখ, ক্লান্তি ও অবসাদে ভরপুর।
এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার লেখক ড. জুলি স্মিথ। তিনি তুলে ধরেছেন এমন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যেগুলো অবহেলা করলে মানসিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যদিও এখনো এটি কোনও অফিসিয়াল চিকিৎসাগত রোগনির্ণয়ের অংশ নয়, তবে ‘হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন’ (HFD) নামটি অনেকেই ব্যবহার করছেন নিজেদের মানসিক লড়াই বোঝাতে। এই অবস্থায় মানুষ বাইরের দুনিয়ার সামনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন — কাজ, পড়াশোনা, সামাজিকতা চালিয়ে যান — কিন্তু ভেতরে থাকে দমবন্ধ করা ক্লান্তি, উদ্বেগ, হতাশা ও শূন্যতা। ড. স্মিথ বলেন, “আমরা যদি অপেক্ষা করি শুধুমাত্র সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারব না, তাহলে তখন মানসিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন হয়ে যায়।”
ড. স্মিথ এই পাঁচটি লক্ষণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন — বিশেষ করে শেষটির বিষয়ে সতর্ক করেছেন:
যখন কেউ দেখে না, তখনই শুরু হয় নিজের প্রতি অবহেলা। যতক্ষণ মানুষ আশেপাশে থাকে, আপনি সচল; একা হলেই মন-শরীর দুটোই নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, পার্টি বা মেলামেশা — যা সাধারণত আনন্দদায়ক হওয়ার কথা, সেগুলো হয় ক্লান্তিকর। খুশির মুখোশ ধরে রাখা যেন এক ধরনের মানসিক শ্রম।
অনেকক্ষণ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিজ দেখা, অকারণে জাঙ্ক ফুড খাওয়া — এগুলোর মাধ্যমে নিজের ভেতরের অনুভূতিগুলো চেপে রাখার চেষ্টা করেন।
আপনি হয়তো কাজ করছেন, দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু কিছুতেই তেমন শক্তি বা আগ্রহ পাচ্ছেন না। যেসব জিনিস একসময় আনন্দ দিত, এখন আর সেগুলোর প্রতি আগ্রহ অনুভব করেন না।
আপনার জীবন হয়তো দেখলে অনেকেই বলবে “সবকিছু ঠিক আছে”, কিন্তু আপনি জানেন — প্রায় প্রতিদিনই একটা শূন্যতা বয়ে বেড়াচ্ছেন।
এই উপসর্গগুলো যদি আপনার মধ্যে লক্ষ করেন, তাহলে অবহেলা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আগে থেকেই সচেতন হওয়া সবচেয়ে ভালো পথ। নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করা নয়, বরং তা স্বীকার করে নেওয়াই মানসিক সুস্থতার দিকে প্রথম পদক্ষেপ।