বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

সুস্থ জীবন লাভে নামাজের ভূমিকা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫
  • ১ Time View

ডেস্ক নিউজ : নামাজ আল্লাহর সাহায্য কামনা করে শান্তি, ক্ষমা ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। এটি আত্মার খোরাক। তবে নামাজের উপকারিতা কেবল আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। 

নামাজে বিভিন্ন শারীরিক অবস্থান ও নড়াচড়া রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বাস্থ্য উপকারী বলে প্রমাণিত। এখানে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো-

সালাত একটি স্বতন্ত্র ব্যায়াম পদ্ধতি

আধুনিক গবেষণা বলছে, সালাতের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি যেমন-কিয়াম, রুকু, সিজদা ও বসা (তাশাহহুদ)-এসব শরীরের ওপর একটি সংগঠিত ব্যায়ামের মতো কাজ করে। বিশেষত দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করা মানে পাঁচবার শারীরিকভাবে নিজেকে সজীব রাখা।

১. রক্ত সঞ্চালন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : সালাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমা শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। উদাহরণস্বরূপ রুকুর মাধ্যমে পিঠ ও মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়। সিজদাহর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ে, যা মানসিক সতর্কতা ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া বসার অবস্থান (তাশাহহুদ) নিম্নাঙ্গে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

২. হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ : বসার ভঙ্গিমা বিশেষ করে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক। এ অবস্থায় অন্ত্র ও যকৃতের ওপর চাপ কমে, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

৩. জয়েন্ট ও মেরুদণ্ডের যত্ন : সালাতের মাধ্যমে হাঁটু, পিঠ, কাঁধ, ঘাড় ও কবজির জয়েন্টগুলো সচল থাকে। এ কারণে বহু চিকিৎসক বৃদ্ধ বা আর্থ্রাইটিস আক্রান্ত রোগীদের হালকা ব্যায়ামের পরিবর্তে সালাত আদায়ের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৪. সালাত ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা : সালাতে সিজদা এমন একটি অবস্থান, যেখানে মানুষের মাথা হৃদয়ের নিচে চলে আসে। এই ভঙ্গিতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে। এতে নিউরনের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়, মস্তিষ্ক সতেজ থাকে আর চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
মানসিক প্রশান্তি ও চাপ মুক্তি

আজকের আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা একটি সাধারণ সমস্যা। সালাত এ ক্ষেত্রে একটি নীরব থেরাপির মতো কাজ করে। সালাতের সময় একাগ্রতা, ধ্যান, কোরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণের অনুভূতি মানুষের ভেতরে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি করে। সালাতে সিজদার সময় সেরেটোনিন হরমোন, ডোপামিন ও অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, যা ‘হ্যাপি হরমোন’ হিসেবে পরিচিত এবং বিষণ্নতা প্রতিরোধে সহায়ক।

হার্ট ও বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ

যেহেতু সালাতে ওঠাবসা, দাঁড়ানো, ঝোঁকা, সিজদা ইত্যাদি রয়েছে, তাই এটি রক্ত চলাচল ও বিপাকক্রিয়াকে (Metabolism) সক্রিয় রাখে। এর ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে পাঁচবার সালাত আদায়ের ফলে অন্তত ৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়ামের সমান সুফল পাওয়া যায়।

পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা

প্রত্যেক সালাতের আগে অজু করা ফরজ। অজুতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মুখ, হাত, নাক, কান, পা ও মাথা ধোয়া। এই নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার ফলে শরীরের অদৃশ্য জীবাণু দূর হয় এবং ত্বক সতেজ থাকে। ইসলাম একজন মুসলমানকে শুধু আত্মার পবিত্রতা নয়, বরং দেহের পরিচ্ছন্নতা ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে শেখায়।

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত অজু করলে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন ও ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এমনকি মুখ ও হাত ধোয়ার কারণে ফ্লু ও ঠাণ্ডাজনিত অসুখের আশঙ্কাও কমে।

ঘুমের উন্নয়ন (Sleep Quality)

সালাত দিনের একটানা কাজের মধ্যে বিরতি দেয়, বিশেষত এশা ও ফজরের সালাত নিয়মিত আদায় করলে ঘুমের রুটিন স্থির হয়। এটি শরীরের Melatonin নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা নিদ্রাচক্র সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র

Abdullah Alshahrani, The effect of prayer on anxiety and depression, Journal of Religion and Health (2021)

 Mohammad Al-Ali, Biomechanics of Salah, Journal of Physical Therapy Science (2015)

Dr. Yasir Qadhi, The Psychology of Salah, Lecture Series (2018)

কিউএনবি/অনিমা/০২ জুলাই ২০২৫,/সকাল ৭:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit