আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনির গাজায় চলমান নৃশংসতার মাঝেই ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক আলোচনার মধ্যে গত শুক্রবার ১৩ জুন ভোররাতে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে দেশটি। ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ রয়েছে জানিয়ে ইসরাইলেও পালটা হামলা শুরু করে ইরান। এ নিয়ে দুদেশের পালটা পালটি হামলা গড়িয়েছে দশম দিনে। রক্তক্ষয়ী নতুন এই সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
পালটা পালটি হামলার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে হুমকি দেয় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব হুমকির পরও ইরানের মনোবলে কোনো চিড় ধরেনি।। এই আবেগ, এই প্রতিরোধ—কীভাবে ইরানি জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হলো? এই মানসিকতা কীভাবে গড়ে উঠল?
শুক্রবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভূশি বলেছেন, ‘নিপীড়িতদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং যারা তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছে—তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সব দেশেরই দায়িত্ব। কারণ দিন শেষে এটা নিছক একটা আগ্রাসন নয়, বরং এটি নিপীড়িতদের প্রতি এবং গোটা অঞ্চলের ওপর চালানো এক ভয়াবহ আগ্রাসন। এই আগ্রাসন অবশ্যই থামানো উচিত’।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ মেলেনি যে, ইরান পারমাণবিক শক্তিকে অস্ত্র বা অন্য কোনো ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে। ইরান এমন কোনো লক্ষ্যই অনুসরণ করছে না। তেহরানের পারমানবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের একটি আলোচনার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু এই হামলার কারণে সেই আলোচনা ব্যাহত হয়েছে। ইরান এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আগ্রহী?
এই প্রশ্নের জবাবে ঢাকার ইরানি দূত বলেন, ‘এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল, এবং সেই আলোচনার একটি ফলাফলের দিকে এগিয়ে যাওয়া কথা ছিল। এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবও ছিল এবং বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল কূটনৈতিক পথ ধ্বংস করা এবং আমাদের উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করা। এর ফলে আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে’।
সংঘাতের পরিসর বাড়তে থাকলে তেলের দাম ঝুঁকিপূর্ণ হবে মনে করছেন ইরানি দূত। তিনি বলেন, ‘যদি আগ্রাসন অব্যাহত থাকে এবং তা অন্য খাতে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে ছড়িয়ে পড়ে—তাহলে তেলের দাম পরিবর্তিত হতে পারে। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না দাম কতটা বাড়বে, তবে এটা নিশ্চিত যে এর প্রভাব আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে’।
ইরানে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। কঠিন সময়ে বাংলাদেশসহ যে সব দেশ ইরানি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইরানি দূত।
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ সেই দেশগুলোর প্রতি—বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ—যারা ইরানের বিরুদ্ধে চালানো এই সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আমরা আশা করি, অন্য দেশগুলোরও উচিত হবে এই বর্বর ও সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানানো।
ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ওআইসি ও জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে মানসুর চাভূশি বলেন, এই আগ্রাসন ও সশস্ত্র হামলার পর যদি কেউ নীরব থাকে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিমূল দুর্বল করে দেয়। এটি জাতিসংঘের সনদ, সাধারণ পরিষদের সনদ, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সনদের প্রতিও অবহেলার শামিল’।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর কী অবস্থান? ইরান কি একাই ইসরাইলের পক্ষে লড়ছে? জবাবে ইরানি দূত বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি এবং প্রয়োজন মনে করি যে সব দেশই ইরানের ওপর চালানো এই সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানাবে। সৌভাগ্যক্রমে, ইতোমধ্যেই অনেক দেশ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং আমরা আশা করি, অন্যরাও একই কাজ করবে।
এই যুদ্ধ বা সংঘাতের পর ইরানের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এবং সমস্ত বাধা অতিক্রম করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে? ইরানি রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাশা, ‘হ্যাঁ, আশা করি তাই হবে’।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ জুন ২০২৫, /দুপুর ২:৪০