ডেস্ক নিউজ : সুরা আন-নুরের ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সংযম ও নারীর সম্মান সংরক্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এই আয়াত সমাজ সংস্কারের একটি পরিপূর্ণ ঘোষণা, যা ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজকে পরিশুদ্ধ ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সহায়ক।
وَلۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ؕ وَالَّذِیۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ الۡکِتٰبَ مِمَّا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ فَکَاتِبُوۡہُمۡ اِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِیۡہِمۡ خَیۡرًا وَّاٰتُوۡہُمۡ مِّنۡ مَّالِ اللّٰہِ الَّذِیۡۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ وَلَا تُکۡرِہُوۡا فَتَیٰتِکُمۡ عَلَی الۡبِغَآءِ اِنۡ اَرَدۡنَ تَحَصُّنًا لِّتَبۡتَغُوۡا عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَمَنۡ یُّکۡرِہۡہُّنَّ فَاِنَّ اللّٰہَ مِنۡۢ بَعۡدِ اِکۡرَاہِہِنَّ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, তারা সংযম অবলম্বন করবে, যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেন। তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা ‘মুকাতাবা’ করতে চায়, তোমরা তাদের সঙ্গে মুকাতাবা করবে। যদি তাদের মধ্যে ভালো কিছু দেখ। (হে মুসলিমগণ!) আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তাদেরকেও দাও এবং তোমরা নিজ দাসীদেরকে দুনিয়ার ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য ব্যভিচারে বাধ্য করো না। যদি তারা পুতপবিত্র থাকতে চায়। কেউ তাদেরকে বাধ্য করলে, তাদেরকে বাধ্য করার পর (তারা ক্ষমার আশা রাখতে পারে। কেননা) আল্লাহ তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
দাস-দাসীর প্রচলন থাকাকালে অনেক সময় দাস-দাসীগণ অর্থের বিনিময়ে মুক্তি লাভের জন্য মনিবদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হত। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার্য করা হত। তারা যথাসময়ে মনিবকে সে অর্থ পরিশোধ করলে দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যেত। মুক্তি লাভের জন্য সম্পাদিত এ চুক্তিকেই ‘মুকাতাবা’ বা ‘কিতাবা’ বলা হয়। এ আয়াতে মনিবদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, দাস-দাসীগণ এরূপ চুক্তি করতে চাইলে তারা যেন তাতে সম্মত হয়। আর অন্যান্য মুসলিমকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে তারা যেন এরূপ দাস-দাসীর মুক্তির লক্ষ্যে তাদেরকে অর্থসাহায্য করে।
আয়াতে বলা হয়েছে, যদি তাদের মধ্যে ভালো কিছু দেখ। অর্থাৎ যদি মনে হয় এরূপ চুক্তি দাস-দাসীর পক্ষে বাস্তবিকই কল্যাণকর হবে। অর্থাৎ, মুক্তি লাভের পর তারা চুরি, ব্যভিচার, অন্যায়-অপকর্ম করে বেড়াবে না। এরূপ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদেরকে মুক্তি লাভের সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে তারা মুক্তি লাভের পর আত্মসংশোধনের পথে উন্নতি লাভ করতে পারে এবং কোথাও বিবাহ করতে চাইলে স্বাধীনভাবে তা করতে সমর্থ হয়; দাসত্বের কারণে ক্ষেত্র সংকুচিত না থাকে। জাহেলি যুগে রেওয়াজ ছিল, দাস-দাসীর মালিকগণ তাদের দাসীদেরকে দিয়ে দেহ বিক্রি করাত এবং এভাবে তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করে অর্থোপার্জন করত। এ আয়াত তাদের সেই ঘৃণ্য প্রথাকে একটি গুরুতর গুনাহ সাব্যস্ত করত সমাজ থেকে তার মূলোৎপাটন করেছে।
অর্থাৎ, যেই দাসীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যভিচারে বাধ্য করা হয়েছে, সে যদি ব্যভিচার থেকে বাঁচার যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে, তবে সে যেহেতু অপারগ হয়ে তা করেছে তাই তার কোন গুনাহ হবে না এবং ব্যভিচারের শরয়ী শাস্তিও তার উপর আরোপিত হবে না। হাঁ যে ব্যক্তি তার সাথে ব্যভিচার করেছে তাকে অবশ্যই শরয়ী শাস্তি দেওয়া হবে এবং যেই মনিব তাকে দেহ বিক্রি করতে বাধ্য করেছে, বিচারক তাকেও উপযুক্ত শাস্তি (তাজির) দেবে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ জুন ২০২৫, /বিকাল ৫:৩০